শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে খুদে ক্রিকেটাররা
শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে খুদে ক্রিকেটাররা

লিটন–মুশফিকদের খেলা দেখতে গ্যালারিতে খুদে ক্রিকেটারদের ভিড়

হলুদ, লাল, সাদা, সবুজ, নীল—মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দক্ষিণ পাশের গ্যালারির যেন নির্দিষ্ট কোনো রঙ নেই। টেস্টে প্রথম দিন গ্যালারির ছবিটা সন্ধ্যামণি ফুলের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল। সন্ধ্যামণি অবশ্য সারা বছরই ফোটে। টেস্টে মিরপুরের গ্যালারিতে এমন ছবি সব সময় দেখা যায় না।

করোনার কারণে প্রায় এক বছর তো মাঠে খেলাই ছিল না। গত বছরের জানুয়ারি থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মাঠে ফিরলেও খেলা হয়েছে দর্শক শূন্য গ্যালারিতে। গত বছর ডিসেম্বরে পাকিস্তান সিরিজ থেকে দর্শকের জন্য স্টেডিয়ামের দুয়ার খুলেছে বিসিবি। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে টেস্টে খুদে ক্রিকেটারদের দল বেঁধে মাঠে আসতে দেখা যায়নি।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে ঘটা করেই মাঠে খুদে ক্রিকেটারদের আমন্ত্রণ দিয়েছে বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগ। আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে মিরপুর স্টেডিয়ামের শহীদ জুয়েল স্ট্যান্ড ও দক্ষিণ গ্যালারি খুদে ক্রিকেটারে ছেয়ে যায়। তাদের মধ্যে অনেকেরই সরাসরি টেস্ট ক্রিকেটের সঙ্গে পরিচয় আজই।

শেখ জামাল ক্রিকেট একাডেমির খুদে ক্রিকেটার নাবিব শেখ তেমনই একজন। লাল বলের অভিজাত ক্রিকেট মাঠে বসে দেখার অনুভূতি নাবিব জানাল এভাবে, ‘আমি ক্রিকেট বলে অনুশীলন শুরু করেছি কিছু দিন হলো। মাঠে এসে খেলা দেখাটা তাই অন্যরকম লাগছে। বাবা-চাচাদের মুখে টেস্ট ক্রিকেটের কথা অনেক শুনেছি। তাঁরা এই মাঠে খেলা দেখার গল্প বলতেন। আজ আমিও দেখার সুযোগ পেয়ে গেলাম।’

মাঠে এসে হই–হুল্লোড় করে খেলা দেখে খুদেরা

নাবিবের মতো অনেকের টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম অভিজ্ঞতাটা অবশ্য ভালো হয়নি। বাংলাদেশ দল সকালের সেশনে ২৪ রান তুলেই ৫ উইকেট হারিয়েছে। এ নিয়ে একটু হতাশও মনে হলো উত্তরা ফ্রেন্ডস ক্লাবের ক্রিকেটার স্বাধীনের, ‘একটু বেশি জলদি উইকেট পড়েছে। আমরা এসে ঠিক মতো বসতে না বসতেই সাকিব আউট। খুব ইচ্ছে ছিল তাঁর ব্যাটিং দেখার।’

স্বাধীনের পছন্দের ক্রিকেটার তাসকিন আহমেদ ও মাশরাফি বিন মুর্তজা। দুজনের কেউ মিরপুর টেস্টে দলে নেই। তবে মাঠে বসে হইচই করার আনন্দটা বেশ উপভোগই করতে দেখা গেল তাকে। এত ভিড়ের মধ্যে চোখ পড়ল সিটি ক্লাবের জার্সি পরা দুই ছাত্র গৌরব ও সিয়ামকে। ম্যাচ পরিস্থিতি নিয়ে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। হইচই করা নিয়েই দুজনের যত ব্যস্ততা।

শুধু ক্রিকেট একাডেমির ছাত্র নয়, মিরপুরের আশপাশের স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের দেখা গেছে দর্শকদের ভিড়ে। স্কুলের পোশাক পরা থাকলে তাদের মাঠে ঢুকতে কোনো বাধা নেই। মিরপুর সিদ্ধান্ত হাইস্কুলের সাজিদ মাহমুদ সুযোগটা লুফে নিয়েছেন। লাঞ্চের বিরতির সময় মাঠে হাজির সাজিদ। বাংলাদেশ দলের সকালের দুর্দশা সাজিদ দেখেননি।

মিরপুরের আশপাশের স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের দেখা গেছে দর্শকদের ভিড়ে

সে কারণেই হয়তো মুশফিক ও লিটনের জুটিতে বেশ আশাবাদী মনে হচ্ছিল সাজিদকে, ‘এখনো তো সুযোগ আছে। লিটন-মুশফিকের জুটিটা হয়ে গেলে আমাদের থামানো সহজ হবে না।’

গরম উপেক্ষা করে মাঠে আসার আনন্দটাই তাদের কাছে আসল। সাজিদ যেমন বলছিল, ‘আসলে খেলাটা দেখার চেয়ে বেশি আনন্দ হচ্ছে একসঙ্গে আসা, কিছুক্ষণ হইচই করা। এসব কারণেই মাঠে এসে খেলা দেখাটা আরও মজার।’

ঝামেলাও আছে। কমার্স কলেজের একদল ছাত্র খেলা দেখতে এসে মিরপুর স্টেডিয়ামের ১ নম্বর গেটে ভিড় করলেও নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের ঢুকতে দেয়নি। সরাসরি কলেজ থেকে আসায় ছাত্রদের সঙ্গে বইখাতায় ঠাসা ব্যাগ ছিল। মাঠে আবার ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ নিষেধ। তাই গেটের বাইরেই ব্যাগ রেখে মাঠে প্রবেশ করতে হয় তাদের। তবু মাঠে এসে খেলা দেখার আনন্দটা কেউই ছাড়তে চায় না।