করোনাভাইরাসকে জীবনের অংশ মেনে নিয়েছেন সবাই। ক্রীড়াঙ্গনে তো ইদানীং জৈব সুরক্ষাবলয় শব্দটাই খুব কম শোনা যায়। কিন্তু দুই বছর আগে মহামারি যখন প্রকট, তখন ক্রিকেটকে ফেরানোর জন্য অনেক কঠিন নিয়মের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বিভিন্ন বোর্ড বিভিন্ন ধাপের নিয়ম রেখেছিল। কোথাও কঠোর জৈব সুরক্ষাবলয় মানতে হয়েছে, কোথাও শুধু কোয়ারেন্টিন করেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। কোনো বোর্ড প্রতিদিন করোনা পরীক্ষা করিয়েছে। কেউবা এক দিন অন্তর করে।
এর মধ্যে দুটি নিয়ম সবার ক্ষেত্রেই এক ছিল। করোনা ছড়ানোর পথ রুদ্ধে ক্রিকেটের বহুল পরিচিত দুটি দৃশ্য হারিয়ে গিয়েছিল—ওভারের শুরুতে আম্পায়ারের কাছে বোলার ক্যাপ জমা দেওয়া ও বলে রগড়ে রগড়ে থুতু মাখানো। ক্যাপ সতীর্থদের মাথায় চাপাতে আপত্তি না থাকলেও দ্বিতীয় নিয়মটি নিয়ে দুঃখের কথা জানালেন জেমস অ্যান্ডারসন। বল সুইং করানোর জন্য যে মুখের লালা খুব প্রয়োজনীয় এক অস্ত্র।
ইদানীং আম্পায়ারের কাছে ক্যাপ রাখার রীতি আবার চালু হলেও গত মার্চে বলে লালা না লাগানোর নিয়মকে আইন করে স্থায়ী করেছে এমসিসি। দুই বছর ধরে বলের এক দিক উজ্জ্বল রাখতে বোলারদের এখন ঘামের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে। কিন্তু নরম সিমের ডিউক বলে ঘাম ব্যবহার করে খুব বেশি সুইং আদায় করা যাচ্ছে না।
ডিউক বল থেকে সুবিধা না পাওয়ায় এবার কাউন্টিতে নিয়মিত বড় স্কোর দেখা গেছে। সদ্য সমাপ্ত নিউজিল্যান্ড-ইংল্যান্ড সিরিজে স্বাগতিক দলের ব্যাটসম্যানরা আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছেন। ওদিকে নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেল ৬ ইনিংসে ৫৩৮ রান তুলেছেন।
নরম সিমের ডিউক বলের কারণেই এমনটা হচ্ছে বলে অ্যান্ডারসনের ধারণা, ‘বোলারদের জন্য কঠিন, কারণ আমরা ভালো উইকেটে খেলছি এবং বল বেশি কিছু করছে না। এটা (লালা না থাকায় সুইং কম হচ্ছে) একটা কারণ হতে পারে, কিন্তু আমি নিশ্চিত না এই নিয়ম আর কখনো বদলাবে কি না। অন্তত করোনার কারণে নিকট ভবিষ্যতে মনে হয় না। ম্যাচ শেষে বোলারদের সঙ্গে কথা বললে তারা থুতু ব্যবহার করার অনুমতি চাইবে, কিন্তু আমার মনে হয় না এটা হবে।’
গত কিছুদিন টেস্ট ক্রিকেটে ওবল সিমের ব্যবহার বেড়েছে। ৬৫১ টেস্ট উইকেটের মালিকের ধারণা, ওবল সিমের ব্যবহার বলের আকার নষ্ট করায় ভূমিকা রাখছে। এতে প্রথাগত সুইং পেতে সমস্যা হচ্ছে বোলারদের। নিউজিল্যান্ড সিরিজে সাধারণের চেয়ে ১৫ বার বেশি বল বদলাতে হয়েছিল, কারণ বলের আকার বিকৃত হয়ে যাচ্ছিল বারবার। ঝামেলা এড়াতে গত বছরের ডিউক বল ব্যবহার করার চিন্তা মাথায় এনেও কার্যকর করা যায়নি। কারণ, ম্যাচ ও অনুশীলন মিলিয়ে এক একটা টেস্টেই ৫০টির বেশি বল দরকার হয়। গত বছরের এতগুলো বল সংগ্রহে নেই।
এ বছরের ডিউক বল নিয়ে অ্যান্ডারসন খুবই বিরক্ত। দ্য টাইমসকে বলেছেন, ‘সবচেয়ে হতাশার হলো, বলগুলো এত দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়! নরম হয়ে যায়, একদম সুইং করে না...নিশ্চিতভাবেই কোনো বড় সমস্যা আছে। এই বলের কোনো সমস্যা আছে এবং বারবার বদলাতে হচ্ছে। আমি নিশ্চিত আম্পায়াররাও বিরক্ত হচ্ছেন।’
চোটের কারণে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজের শেষ টেস্টে খেলেননি অ্যান্ডারসন। আগামীকাল ১ জুলাই ভারতের বিপক্ষে এজবাস্টন টেস্টে অবশ্য নামতে কোনো বাধা নেই তাঁর। গত বছর হঠাৎ করোনা সংক্রমণকে কারণ দেখিয়ে ম্যাচের প্রথম সকালে টেস্ট পেছানো হয়। ২-১ অবস্থায় এগিয়ে থাকা ভারত সেই সিরিজের সমাপ্তি টানতে গেছে এবার। এই এক বছরে অবশ্য দুই দলের নেতৃত্বেই বদল এসেছে।
জো রুটের জায়গায় এসেছেন বেন স্টোকস। ওদিকে বিরাট কোহলির জায়গাটা এখন রোহিত শর্মার। যদিও কাল টস করতে নামছেন না রোহিত। করোনার কারণে তাঁর অনুপস্থিতিতে নেতৃত্ব দেবেন বুমরা।