আজ ব্যাটিংয়ে ভালো কিছু দেখাতে হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।
আজ ব্যাটিংয়ে ভালো কিছু দেখাতে হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।

লজ্জা এড়াতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে করতে হবে ২৩২ রান

ফিল সিমন্সের অসহায়ত্ব ভালোভাবেই টের পাওয়া যাচ্ছে ওয়ানডে সিরিজে। প্রায় দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে বাংলাদেশে হাজির হয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোচ। বাংলাদেশে সর্বশেষ সফরে প্রথম সারির দলই স্পিন সামলাতে পারছিল না। এবার একগাদা নতুন মুখ নিয়ে হাজির হয়ে সিমন্সকে সেই স্পিন সামলানো নিয়েই ভাবতে হচ্ছে পুরোটা সময়।

দলের টপ ও মিডল অর্ডার প্রথম দুই ম্যাচেই ব্যর্থ হয়েছে। লেট মিডল অর্ডারের দৃঢ়তায় দুই ম্যাচে এক শ পার করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুবারই ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছে প্রথম ইনিংসে। চট্টগ্রামে তৃতীয় ওয়ানডেতে ম্যাচের মাঝপথেই ফল নির্ধারিত হয়ে যেতে দেখতে চান না সিমন্স। আর সে লক্ষ্যে ব্যাটসম্যানদের অন্তত ২৩০ রান করার লক্ষ্য দিয়েছেন। কিন্তু ২৩০ রান করলেই কি লজ্জা এড়াতে পারবে সফরকারীরা?

সিরিজে বাংলাদেশের বোলারদের দাপটই বেশি দেখা গেছে।

সিমন্সের অন্তত ২৩০ রানের লক্ষ্য ঠিক করার নেপথ্যে পরিসংখ্যানের কোনো অবদান নেই। দুই ম্যাচেই দেড় শর নিচে গুটিয়ে গেলেও বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের পরীক্ষা নিতে পেরেছে সফরকারীরা। ধীরগতির উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাও খুব একটা স্বচ্ছন্দে ছিলেন না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অনভিজ্ঞ বোলিং লাইনআপ এর পুরো ফায়দা তুলতে পারেনি। তাই কোচের ধারণা, রানটা দুই শ পার করতে পারলেই তাঁর বোলাররা আরেকটু সুযোগ পাবেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের চেপে ধরার।

সিরিজের তৃতীয় ম্যাচের আগে দলের ব্যাটিং ইউনিটের কাছে তাই নিজের দাবিটা জানিয়েছেন সিমন্স, ‘উন্নতি দরকার আমাদের। প্রথম ম্যাচে ১২২ থেকে দ্বিতীয় ম্যাচে আমরা ১৪৮-এ এসেছি। আমাদের এখন ২৩০ থেকে ২৫০ রান করতে হবে। তাহলেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। বোলাররা লড়াইয়ের সুযোগ পাবে।’

চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ইতিহাস মনে থাকলে অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের এমন আশা বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। এই ভেন্যুতে মাত্র একবার খেলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেটাও ৯ বছর আগে। সেবার প্রথমে ব্যাট করতে নামা উইন্ডিজ দল ৬১ রানে অলআউট হয়েছিল। নিজেদের ইতিহাসে এর চেয়ে কম রানে মাত্র একবারই গুটিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোচ ফিল সিমন্স

জহুর আহমদে নিজেদের রেকর্ড বদলানোর আশা নিয়ে নামতে যাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ আরেকটি লক্ষ্য নিয়েও নামতে পারে। আর সেটা হলো, কোনো দ্বিপক্ষীয় সিরিজে সবচেয়ে কম গড়ে রান তোলার রেকর্ডটি টিকিয়ে রাখা। আর সেটা করতে হলে, কাল সিমন্সের কথা অনুযায়ী শুধু ২৩০ করলেই চলবে না। অলআউট হওয়া যদি আটকানো না-ই যায়, তবে অন্তত ২৩২ রান করতে হবে।

একটু খুলে বলা যাক। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ১২২ রানে গুটিয়ে গেছে উইন্ডিজ দল। পরের ম্যাচে ২৬ রানের উন্নতি দেখা গেছে। ১৪৮ রান করেছে অতিথিরা। এ সুবাদে বাংলাদেশও একটি রেকর্ড গড়েছে। এই প্রথম কোনো সিরিজে প্রতিপক্ষকে টানা দুই ম্যাচে দেড় শর নিচে গুটিয়ে দিল বাংলাদেশ। আর প্রথম দুই ম্যাচে মোট ২৭০ রান করে এক লজ্জার রেকর্ডের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

দুই ম্যাচে ২০ উইকেট হারিয়েছে তারা। এর বিপরীতে এসেছে ২৭০ রান। অর্থাৎ উইকেটপ্রতি গড়ে ১৩.৫০ রান তুলেছেন সিমন্সের শিষ্যরা। কোনো দ্বিপক্ষীয় সিরিজে উইকেটপ্রতি রানের হিসাবে এত বাজে গড় আর কখনো হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের। সেটা সিরিজে ম্যাচের সংখ্যা এক, দুই বা সাত—যা-ই হোক না কেন। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে সিরিজের এখনো একটি ম্যাচ বাকি আছে তাদের। ফলে এখনো উইকেটপ্রতি রান বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ আছে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ তরুণদের নিয়ে এসেছে বাংলাদেশে।

পূর্ণাঙ্গ কোনো সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বাজে গড়ের রেকর্ড ২০১৭ সালে। মজার ব্যাপার, সে বছরই রেকর্ডটি দুবার নতুন করে গড়েছে দলটি। ২০১৭ সালের জুনে ক্যারিবীয়দের চূড়ান্ত পরীক্ষা নিয়েছিল আফগানিস্তান। প্রথম ম্যাচ বাতিল হওয়ার পর স্বাগতিকদের দ্বিতীয় ম্যাচে চমকে দিয়েছিলেন রশিদ খানরা। ২১৩ রানে লক্ষ্যে নেমে রশিদের তোপের মুখে পড়েন জেসন হোল্ডাররা। ১৮ রানেই ৭ উইকেট তুলে নেন রশিদ। আর ১৪৯ রানে গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

পরের ম্যাচে এর প্রতিশোধ নিতে পেরেছিলেন হোল্ডাররা। আফগানদের ১৩৫ রানে অলআউট করে দেন তাঁরা। কিন্তু সে লক্ষ্য পেরোতেই ৬ উইকেট হারিয়েছিল স্বাগতিক দল। সিরিজে ১৭.৯৩ গড়ে রান তোলা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৮ বছর পুরোনো রেকর্ড ভাঙে সেবার। এই রেকর্ড টিকেছে মাত্র ছয় মাস।

ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ড সফরে যাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ ধবলধোলাই হয়েছিল। সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৯ উইকেটে ২৪৮ রান তোলা সফরকারীদের ভাগ্য দিন যত গড়িয়েছে, তত খারাপ হয়েছে। পরের ম্যাচে ১২১ রানে গুটিয়ে গেছে তারা। আর তৃতীয় ওয়ানডেতে ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমে আসায় ২৩ ওভারে ১৬৬ রানের লক্ষ্যে নামা দলটি মোটে ৯৯ রান তুলতে পেরেছিল। সেটিও ৯ উইকেট হারিয়ে। অর্থাৎ সিরিজে ২৮ উইকেট হারিয়ে তারা তুলেছে ৪৬৮ রান। গড়ে ১৬.৭১ রান।

চট্টগ্রামের উইকেটে দাপট দেখাবেন সাকিব?

তাই বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজে এ গড় যদি পার করতে চায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তবে চট্টগ্রামে তৃতীয় ওয়ানডেতে বেশ খাটুনির মধ্য দিয়েই যেতে হবে। যদি আগের দুই ম্যাচের মতোই অলআউট হয়ে যায় তাহলে অন্তত ২৩২ রান তুলতে হবে তাদের। আর যদি অলআউট না হয়, তাহলে প্রতি উইকেটের জন্য গড়ে ১৬.৭ রান করে কম করলেও চলবে। অর্থাৎ ৯ উইকেট হারালে ২১৫ রান। ৮ উইকেট হারালে করতে হবে ১৯৯ রান। ৭ উইকেট খোয়ালে অন্তত ১৮২ রান। আর ৬ ব্যাটসম্যান ড্রেসিংরুমের পথ ধরলে অন্তত ১৬৫ রান তুলতে হবে তাদের।

আর ধরা যাক, বাংলাদেশ আগে ব্যাট করল এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৯ বছর আগের সে ঘটনার প্রতিশোধ নিয়ে ফেলল। অর্থাৎ বাংলাদেশকে ৬১ রানে গুটিয়ে দিল। তখন? তাহলেও কিন্তু কিঞ্চিৎ ঝামেলা আছে। প্রথম দুই ম্যাচে দলটি নিজেদের গড় এতটাই নামিয়ে এনেছে যে এখন শেষ ম্যাচে যদি বিনা উইকেটে অন্তত ৬৫ রান না করে দলটি, তাহলেও ইতিহাসের সর্বনিম্ন গড়ের সিরিজ হয়ে লেখা থাকবে এই সিরিজের নাম!