মোহাম্মদ আমিরকে প্রশ্ন করা হয়েছিল বিরাট কোহলি আর রোহিত শর্মার বিপক্ষে তাঁর ‘লড়াই’ নিয়ে। ভারতের বর্তমান দলের দুই সেরা ব্যাটসম্যানকে বোলিং করার অভিজ্ঞতা তাঁর কম নয়, ভালোও করেছেন সে লড়াইয়ে। আর সে অভিজ্ঞতা থেকেই কি না, আমির বলেছিলেন, দুজনের কারও বিরুদ্ধে বল করাই তাঁর কাছে অত কঠিন মনে হয় না। তবে দুজনের মধ্যে কোহলির চেয়ে রোহিতকে বোলিং করাই বেশি সহজ মনে হতো বলে জানিয়েছেন আমির।
কিন্তু আমিরের কথাটা একেবারেই পছন্দ হয়নি পাকিস্তানেরই সাবেক লেগ স্পিনার দানিশ কানেরিয়ার। এমন কথা ভারতের সঙ্গে কোনো ম্যাচের আগে আমির বললে সেটা ঠিক হতো জানিয়ে কানেরিয়ার কথা, আমির শুধু সংবাদের শিরোনামে থাকার জন্যই এমন কথা বলেছেন। গত বছর দুয়েকে আমির বোলিংয়ের ধার হারিয়েছেন জানিয়ে কানেরিয়া বরং আমিরকে পাকিস্তানের জার্সিতে ফিরে এসে আগে ভালো খেলার পরামর্শ দিলেন।
সংবাদের শিরোনামে আমির এখন সব সময়ই থাকেন। পাকিস্তান দলের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত বর্তমান কর্মকর্তা, কোচদের স্বজনপ্রীতিকে কারণ দেখিয়ে গত ডিসেম্বরে মাত্র ২৮ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই আমিরের পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনার কোনো শেষ নেই। আমির অবশ্য অবসরের ঘোষণা এরপর ফিরিয়ে নিয়েছেন, তবে জানিয়ে দিয়েছেন, মিসবাহ উল হক, ওয়াকার ইউনিসদের বর্তমান টিম ম্যানেজমেন্ট যতদিন আছে, ততদিন তিনি পাকিস্তান দলে খেলবেন না।
কিন্তু তিনি খেলুন না খেলুন, তাঁকে নিয়ে আলোচনা থেমে নেই। এর মধ্যে কদিন আগে কোহলি-রোহিতকে নিয়ে কথাটা বলে আমির নিজেই এলেন আলোচনায়। কিন্তু সেটি নিয়ে এখন পাল্টা সমালোচনাও শুনতে হচ্ছে। পাকিস্তানের অন্য অনেক সাবেকের মতো কানেরিয়ারও কথা বলার মাধ্যম হলো তাঁর ইউটিউব চ্যানেল। সেখানে ‘রোহিতকে বোলিং করা সহজ’—আমিরের এই মন্তব্যের ঝাঁজাল সমালোচনায় কানেরিয়া বললেন, ‘মোহাম্মদ আমির, তুমি শিরোনামে থাকতে চেয়েছ, এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই।’
এরপরের কথাগুলোতে প্রথমে আমিরের কীর্তির বয়ানই করেছেন কানেরিয়া, ‘পাকিস্তানের জন্য তুমি দারুণ একজন বোলার ছিলে। তোমার যখন অভিষেক হলো, তখনই বেশ নাম কুড়িয়েছিলে তুমি। নতুন বলে তুমি বলকে দুই দিকেই সুইং করাতে পারতে। অনেক অনেক ব্যাটসম্যানকে তুমি ভুগিয়েছ, এটাকে কেউ কখনো খাটো করে দেখাতে পারবে না। (২০১৭) চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে তুমি ভারতকে ভুগিয়েছ, এশিয়া কাপেও ওদের ব্যাটসম্যানদের বেশ ঝামেলায় ফেলেছ।’
কানেরিয়ার কথার ধরনেই বোঝা যায় এরপর একটা ‘কিন্তু’ অপেক্ষায়। সেই ‘কিন্তু’টা এল এরপর, ‘কিন্তু এমন বিবৃতি খেলোয়াড়েরা তখনই দেয় যখন তারা একে অন্যের বিপক্ষে ম্যাচে নামতে যায়, কিংবা সিরিজে খেলে। এই মুহূর্তে আমরা কোনো ভারত বনাম পাকিস্তান সিরিজে নেই, তুমিও রোহিত শর্মার বিপক্ষে বোলিং করার কোনো সম্ভাবনা আপাতত নেই।’
কদিন আগে পাকিস্তানের সাবেক অলরাউন্ডার আব্দুল রাজ্জাক ভারতের ফাস্ট বোলার যশপ্রীত বুমরাকে ‘বেবি’ বা শিশুতোষ বোলার বলেছিলেন। আমিরের সমালোচনায় রাজ্জাকের সেই মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে কানেরিয়া বললেন, ‘উটকো একটা মন্তব্য করে বসেছ তুমি। যশপ্রীত বুমরাকে নিয়ে আব্দুল রাজ্জাক যেমন বলেছিলেন, এটাও সে রকমই। তাই বলছি, তুমি যদি এমন কিছু বলে খবরে থাকতে চাও তাহলে ঠিক আছে। আমি বুঝি, বোলাররা এমন কথা বলতে পছন্দ করে। ‘‘অমুক ব্যাটসম্যান আমার বানি, তমুক ব্যাটসম্যানকে আউট করতে আমার ভালো লাগে’’ বলে নিজেকে জাহির করতে চায়।’
এরপর রোহিত শর্মার প্রশংসা করে আমিরকে ধুয়ে দিলেন কানেরিয়া, ‘রোহিত শর্মা এমন একজন খেলোয়াড় যে কি না অনেক ডাবল সেঞ্চুরি করেছে। তারওপর ও একজন রানমেশিন। স্পিনার আর ফাস্ট বোলারদের ওর চেয়ে ভালো খেলে এমন খেলোয়াড় কমই আছে। আর এর উল্টো দিকে তোমার কথা যদি বলো, তোমার এখন আর সেই গতি বা সুইং নেই। যে কারণে গত দুই বছরে তুমি অত ভালো খেলতে পারোনি, সে কারণে দল থেকেও বাদ পড়লে। তাই তুমি আগে দলে ফিরে এসো, ভালো খেলো, তারপর যখন ওর (রোহিত) বিপক্ষে তোমার ম্যাচ পড়বে, তখন এমন কথা বলো। ম্যাচটা ঘিরে আকর্ষণ তাতে বাড়বে।’
২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে পাকিস্তানকে শিরোপা জেতানোর পথে ৩৩৯ রানের লক্ষ্যে নামা ভারতকে কাঁপিয়ে দেওয়া এক স্পেল করেছিলেন আমির। সেদিন মাত্র ১৬ রানে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন, উইকেট তিনটি ছিল রোহিত, কোহলি ও শিখর ধাওয়ানের। এর বাইরেও ২০১৯ বিশ্বকাপ, ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কিংবা ২০১৬ এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে একেবারে খারাপ করেননি আমির।
সে কারণেই কি না, কদিন আগে ক্রিকভিক নামের ওয়েবসাইটে কোহলি-রোহিতকে বল করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রশ্নে আমির বলেছিলেন, ‘ওদের দুজনের কারও বিপক্ষেই বোলিং করা আমার খুব একটা কঠিন মনে হয়নি। সত্যি বলতে ওর (রোহিত) বিপক্ষে বোলিং করতে বরং বেশি সহজ লেগেছে। মনে হতো বল যেদিকেই সুইং করাই না কেন, ওকে আউট করতে পারব। বাঁহাতি বোলারের ইনসুইঙ্গারে ও ঝামেলায় পড়ে, যে বলগুলো অফ স্টাম্পের বাইরে বেরিয়ে যায় সেগুলোতেও খাবি খায়। বিরাটকে বোলিং করতে তুলনায় একটু বেশি কষ্ট হতো, কারণ ও চাপের মুহূর্তে জ্বলে ওঠে। এ ছাড়া এ দুজনের কারও বিপক্ষেই বোলিং করতে বেশি ঝামেলায় পড়তে হয়নি আমাকে।’