ঘটনাবহুল শেষ ওভারে চট্টগ্রামকে জয় এনে দিয়েছেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি
ঘটনাবহুল শেষ ওভারে চট্টগ্রামকে জয় এনে দিয়েছেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি

রোমাঞ্চকর শেষ ওভারে তামিমদের জয় ছিনিয়ে নিলেন মৃত্যুঞ্জয়রা

পঞ্চম বলটা ইয়র্কার করলেন, তামিম ইকবাল বাই থেকে নিতে পারলেন একটি রান। মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী উদ্‌যাপন শুরু করে দিলেন তখনোই। শেষ বলে মিনিস্টার ঢাকার প্রয়োজন তখন ৬ রান, স্ট্রাইকে আটে নামা মোহাম্মদ নাঈম। তবে মৃত্যুঞ্জয় একটু গুবলেট পাকালেন এরপর, শেষ বলটা ফুলটস করে দিলেন নো। অবশ্য নাঈম শেষ বলের ফ্রি হিটে ১ রানের বেশি নিতে পারলেন না, মৃত্যুঞ্জয়ের সঙ্গে উল্লাসে মাতল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সও। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে তামিমের ৫৬ বলে ৭৩ রানের অপরাজিত ইনিংস শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট হলো না ঢাকার, তাদের কাছ থেকে জয়টা ছিনিয়ে গেল মৃত্যুঞ্জয়ের চট্টগ্রাম!

প্লে-অফের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখতে এ ম্যাচে জয়টা গুরুত্বপূর্ণ ছিল চট্টগ্রামের। এ ম্যাচে আবার অধিনায়ক বদলে ফেলেছে তারা, আগের ৪ ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়া নাঈম ইসলাম দলেই জায়গা পাননি। তাঁর জায়গায় অধিনায়কত্ব করেছেন আফিফ হোসেন। শামীম হোসেনের ৩৭ বলে ৫২ রানের ইনিংসে ভর করে ১৪৮ রান তুলেছিল তারা। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে ঢাকা পরিণত হয় ২১/৩–এ। এরপরই মাহমুদউল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে তামিমের গড়া ৫৯ বলে ৭১ রানের ইনিংসে ঢাকা জয়ের বেশ কাছেই পৌঁছে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত মৃত্যুঞ্জয়ের কাছে আটকে যেতে হলো তাদের। ৯ ম্যাচ শেষে ৮ পয়েন্ট নিয়ে এখন চারে আছে চট্টগ্রাম। ২ ম্যাচ বাকি থাকতে ৭ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচে ঢাকা।

দারুণ এক জয় পেয়েছে চট্টগ্রাম

১৪৮ রান তাড়ায় উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ শেহজাদের পর ইমরানউজ্জামান, বা চারে আসা মাশরাফি বিন মুর্তজা—তামিমকে শুরুতে সঙ্গ দিতে পারেননি কেউ। এরপরই মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে তামিমের ওই জুটি। তামিম অবশ্য শুরুতে সময় নিয়েছেন বেশ, প্রথম ২১ বলে এ বাঁ হাতি করেন ২১ রান। মেহেদী হাসান মিরাজকে ৩ বলের ব্যবধানে ২টি চার মেরেই বদলে ফেলেন ব্যাটিংয়ের ধরন। অর্ধশতক পান ৩৯ বলে।

অবশ্য এর আগেই মাহমুদউল্লাহকে ফিরিয়ে চট্টগ্রামকে ব্রেকথ্রু এনে দেন মিরাজ। তাতে দারুণ অবদান আছে শামীমেরও। স্লগ সুইপ করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ, সীমানার ওপর ক্যাচটা নিয়ে পেরিয়ে যাওয়ার আগেই শামীম ছুঁড়ে দিয়েছিলেন বেনি হাওয়েলের দিকে। অবশ্য মাহমুদউল্লাহর উইকেটের পরও শুভাগত হোম ও তামিম ঠিক পথেই রেখেছিলেন ঢাকাকে। ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ১১ বলে ১৯ রান করা শুভাগত শরীফুলের বলে বোল্ড হলে বিপত্তির শুরু। সে ওভারের শেষ বলে চার মেরেছিলেন তামিম, তবে পরের ওভারে দর্শক হয়েই থাকতে হয় তাঁকে বেশিরভাগ সময়।

শেষ ওভারের প্রথম বলে কায়েস আহমেদকে বোল্ড করে খেলাটাকে নিজেদের দিকে টেনে আনেন মৃত্যুঞ্জয়। এমনিতে টপ অর্ডারে খেলা নাঈমকে আট নম্বরে পাঠাতে হয়েছে ঢাকার, নিশ্চিতভাবেই সে সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়েছে তাদের। ঘটনাবহুল ওভারে উল্টো নায়ক বনে গেছেন মৃত্যুঞ্জয়।

হারের পর তামিমকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ

এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে চট্টগ্রাম শুরুতে ঠিক সুবিধা করতে পারেনি। দ্বিতীয় ওভারে জাকির হোসেন ফেরার পর উইল জ্যাকস ও আফিফ হোসেনের জুটিতে উঠেছে ৪০ রান, তবে তাঁরা এ সময়ে খেলেছেন ৩৫ বল। দুজনই ২৪টি করে বল খেলার পরও বড় করতে পারেননি ইনিংস। এ দুজনের পর মিরাজ ও আকবর আলীও ফিরেছেন দ্রুত, ১৪তম ওভারে ৮৪ রান তুলতে পঞ্চম উইকেট হারিয়েছে চট্টগ্রাম।

এরপরও তারা ১৪৮ পর্যন্ত গেছে শামীমের ওই ইনিংসে। টুর্নামেন্টজুড়েই নিজেকে হারিয়েই খোঁজা শামীম আজ হাওয়েলকেও সহকারির ভূমিকায় পাঠিয়েছিলেন। পেয়েছেন এ মৌসুমের প্রথম অর্ধশতক। শেষ পর্যন্ত ইনিংসে ৫টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ১টি ছয়, শেষ ৪ ওভারে চট্টগ্রাম তুলেছে ৫১ রান।

চট্টগ্রামকে লড়াই করার মতো স্কোর এনে দিয়েছিলেন শামীম হোসেন

সংক্ষিপ্ত স্কোর

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ২০ ওভারে ১৪৮/৬ (শামীম ৫২, আফিফ ২৭, জ্যাকস ২৬, হাওয়েল ২৪*; মাহমুদউল্লাহ ১/৫, আরাফাত ১/১৬, মাশরাফি ১/২৪, ফজলহক ১/৩২)

মিনিস্টার ঢাকা: ২০ ওভারে ১৪৫/৬ (তামিম ৭৩*, মাহমুদউল্লাহ ২৪, শুভাগত ২২; শরীফুল ২/২৮, মৃত্যুঞ্জয় ২/২১, নাসুম ১/১৫, মিরাজ ১/২৯)

ফল: চট্টগ্রাম ৩ রানে জয়ী