আত্মবিশ্বাসটাই কি কাল হলো ভারতের?
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে রীতিমতো হেসেখেলে জিতেছে ভারত। ওয়ানডে সিরিজের শুরুটাও হয়েছে উড়ন্ত। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ব্যাকফুটে থেকেও শেষ পর্যন্ত টাই করেছে ম্যাচ। সফরকারীদের হয়তো হালকাভাবেই নেওয়া শুরু করেছিল দলটি। তৃতীয় ওয়ানডেতেই তাই দুর্দান্তভাবে জবাব দিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বিরাট কোহলির রেকর্ডের দিনে ভারতকে ৪৩ রানে হারাল উইন্ডিজরা। চার বছর পর ভারতে কোনো ওয়ানডে জিতল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
হালকাভাবে নেওয়ার কথাটা একটু ব্যাখ্যা করা যাক। টি-টোয়েন্টি দল থেকে বাদ পড়েছেন, ওয়ানডে দলেও জায়গা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেছে মহেন্দ্র সিং ধোনির। দুর্দান্ত গ্লাভস ওয়ার্কে উইকেটের পেছনে তাঁর সমকক্ষ এখনো কেউ নেই। কিন্তু সামনে তাঁর পারফরম্যান্স দিন দিন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। ২০১৮ সালে এখন পর্যন্ত ফিফটি পাননি ধোনি। এই অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড আরও এক ইনিংস লম্বা করে আজ যখন ৭ রানে ফিরছেন ধোনি, ভারতের রান তখন ৫ উইকেটে ১৯৪। ২০১৮ সালে অবিশ্বাস্য ফর্মে থাকা কোহলি অন্যদিকে অপরাজিত ৯৩ রানে।
অন্য প্রান্তে কোহলি আছেন। তবু ভারতের হারের শঙ্কা জেগে উঠল। কারণ, হঠাৎ করেই টের পাওয়া গেল আত্মবিশ্বাসী ভারত আজ মাত্র ৫ জন ব্যাটসম্যান নিয়ে নেমেছে। তাই সাত নম্বরেই নেমে এলেন ভুবনেশ্বর কুমার। টেস্ট ক্রিকেটে আক্রমণাত্মক দলগুলো ৫ বোলার নিয়ে খেলতে পছন্দ করে। কিন্তু ওয়ানডেতে অলরাউন্ডার নন—এমন ৫ বোলার নিয়ে নামা বাড়াবাড়ি। সেটা আজ দরকারের দিন আরও একবার প্রমাণিত হলো।
ওয়ানডে ক্রিকেটে বছরজুড়ে চলা ফর্ম কোহলি ধরে রেখেছেন। ১০ চার ও ১ ছক্কার ইনিংসে গড়েছেন এমন কীর্তি, যা কোনো ভারতীয় করেনি। সিরিজে টানা তৃতীয় ম্যাচে পেয়েছেন সেঞ্চুরি। ওয়ানডেতে শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়, সৌরভ গাঙ্গুলী কিংবা বীরেন্দর শেবাগ—কেউই পারেননি টানা তিন ম্যাচে তিন অঙ্ক ছুঁতে। এ বছর ওয়ানডেতে ১২ ইনিংসে কোহলির রান ১১৫৩। না, ভুল পড়েননি, ১৪৪.১২ গড়ে মাত্র ১২ ইনিংসে ১১৫৩ রান করেছেন কোহলি। বছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান নেওয়া জনি বেয়ারস্টো কোহলির চেয়ে ১২৮ রান পিছিয়ে আছেন। ২২টি ম্যাচ বেশি খেলেও! কোহলির রানবন্যা গত ১০ ইনিংসে আরও ভয়ংকর। এই ১০ ইনিংসে কোহলি ৯৯৫ রান তুলেছেন। ইতিহাসে পৃথিবীর কোনো ব্যাটসম্যান ক্যারিয়ারের কোনো পর্যায়েই ১০ ম্যাচে এত রান তুলতে পারেননি। সেটাও আবার ১৪২–এর একটু বেশি গড়ে।
ভারতের জন্য ঝামেলাটা বেধেছে অন্যভাবে। কোহলি আজ তাঁর গড় থেকে ৩৫ রান কমেই আউট হয়ে গেছেন। উপায় না দেখে মারলন স্যামুয়েলসের হাতে বল তুলে দিয়েছিলেন জেসন হোল্ডার। তাঁর প্রথম ওভারেই বাজে একটা শট খেলে বল মিস করে বোল্ড কোহলি! ২২০ রানে সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে কোহলি বিদায় নেওয়ার পর আর মাত্র ২০ রান তুলতে পেরেছে ভারত।
অবশ্য ২৪০ রানও হয়তো ভারতকে করতে হতো না যদি অ্যাশলি নার্স হঠাৎ করে নিজের ব্যাটসম্যান সত্ত্বাকে ফিরে না পেতেন। প্রায় প্রতি ম্যাচের মতোই টপ অর্ডার হতাশ করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। শিমরন হেটমায়ার আশা দেখিয়েও এ ম্যাচে আর ঝড়টা লম্বা করতে পারেননি (২১ বলে ৩৭)। অধিনায়ক হোল্ডার নিজেও ব্যর্থ হয়েছেন (৩২)। আবারও একা লড়তে লড়তে ক্লান্ত শাই হোপ (৯৫) দলকে ২২৭ রানে রেখে আউট হয়েছেন। আর মাত্র ২ উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কত রানে অলআউট হয় সে অপেক্ষাই করছিল সবাই। এমন অবস্থায় ২২ বলে ৪০ রানের এক ইনিংস খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৮৩ রান এনে দিয়েছেন নার্স। এই ইনিংসই দুই দলের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দিল।