>ওয়েলিংটনে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ভারতকে ৮০ রানে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড
স্কট কুগেলিনকে একটা ধন্যবাদ দিতেই পারে নিউজিল্যান্ড। গত বছর ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল এই পেস অলরাউন্ডারের বিপক্ষে। বিচারে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে বেরিয়ে এলেও বিতর্ক কমেনি। জাতীয় দলের ক্রিকেটারের বিপক্ষে এমন অভিযোগ উঠলে কথা তো হবেই। তবে কুগেলিন আজ ওয়েলিংটনে আলোচনায় এসেছেন ক্রিকেটীয় কারণে। শেষ দিকে তাঁর ৭ বলে ২০ রানে ২০০ টপকে গেছে নিউজিল্যান্ড। আর তাতে দলের জয় যেমন নিশ্চিত হয়েছে তেমনি ভারতও ব্যাটিং ব্যর্থতায় হেরেছে রেকর্ড ব্যবধানে।
ম্যাচটি না দেখে থাকলে ভাবতে পারেন, সে কীভাবে সম্ভব! এক ইনিংস বাকি থাকতে জয় নিশ্চিত হয় কীভাবে? তাও আবার ভারতের মার মার কাট কাট ব্যাটিং লাইনআপের বিপক্ষে? ক্রিকেটীয় ভাষায় কথাটি খুবই যৌক্তিক। কিন্তু পরিসংখ্যান তো আর ক্রিকেটের ভাষা বোঝে না। সেখানে শুধুই সংখ্যার বিচিত্র সব খেলা। ভারত দুই শ রান তাড়া করে এর আগে যে জিততে পারেনি তা নয়। তবে আজ ২১৯ তাড়া করে জিতলে রেকর্ড গড়ত রোহিত শর্মার দল। টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড। সেটি না হওয়ার পেছনে ৭৭ রান তুলতে ভারতের ৬ উইকেট নেই হওয়া যেমন দায়ী তেমনি প্রভাব রয়েছে সাম্প্রতিক ইতিহাসেরও।
মনে করে দেখুন তো, ভারতের কার্যকর বোলিং লাইনআপের কাছ থেকে প্রতিপক্ষ শেষ কবে দুইশোর্ধ্ব রান ছিনিয়ে নিয়েছে? খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, মাত্র আড়াই বছর আগে। লাউডারহিলে ভারতের বিপক্ষে ৬ উইকেটে ২৪৫ রান তুলেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাড়া করতে নেমে ভারত হেরেছিলে ‘থ্রিলার’ লিখে—১ রানে! সেই ম্যাচে আজকের মতো রোহিত শর্মা আর মহেন্দ্র সিং ধোনিও ছিলেন। আজ প্রতিপক্ষ দুই শ-র বেশি তুলে ফেলার পর কি তাঁদের মনে কু-ডাক দিয়েছে? অন্তত সেই ম্যাচের হার তো কারও ভুলে যাওয়ার কথা নয়!
লাউডার হিলে সেই হারের আড়াই বছর পর আজ টি-টোয়েন্টিতে আবারও ভারতের কাছ থেকে দুইশোর্ধ্ব রান ছিনিয়ে নিয়েছে প্রতিপক্ষ। কিন্তু সেই ম্যাচের মতো ভারত আজও জয় ছিনিয়ে নিতে পারেনি। খেসারত দিতে হয়েছে বাজে বোলিংয়ের পর তার চেয়েও বাজে ব্যাটিংয়ের। পাওয়ার প্লে-র (৬ ওভার) মধ্যে ফিরেছেন দুই ওপেনার রোহিত ও ধাওয়ান। স্কোরবোর্ডে তখন ৫১। কিউই পেসার টিম সাউদি নিজের প্রথম ২ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ২ রান! দুইশোর্ধ্ব রান তাড়া করতে নেমে কোনো বোলার এমন শুরু করলে হারটাই বেশি চোখ রাঙায়।
ঘটেছেও ঠিক তা–ই। সাউদির কাছে না পাওয়া রান অন্যদের কাছ থেকে তুলতে গিয়ে ভারতের ব্যাটসম্যানেরা সমানে উইকেট বিলিয়েছেন। ৫১ রানের পর আরও ২১ রান তুলতে ভারত হারিয়েছে আরও ৩ উইকেট। ততক্ষণে এক ধোনি বাদে ভারতের মিডলঅর্ডারের সবাই ড্রেসিং রুমে। ক্রুনাল পাণ্ডিয়াকে নিয়ে ধোনি ৫২ রানের জুটি না গড়লে ভারত কত বড় ব্যবধানে হারের লজ্জা পেত কে জানে! ভারত এরপরও অবশ্য রেকর্ড ব্যবধানে হার এড়াতে পারেনি। ১৯তম ওভারে ধোনি (৩৯) ফেরার আগেই তা নিশ্চিত হয়ে যায়। পরের ওভারেই যুজবেন্দ্র চাহালকে তুলে নিলে ভারতকে ১৩৯ রানে গুটিয়ে দেন মিচেল স্যান্টনার।
ধোনি ফেরার সময় শেষ ৬ বলে ৮৪ রান দরকার ছিল ভারতের। আর টি-টোয়েন্টিতে এর আগে ভারতের সবচেয়ে বড় ব্যবধানের হারের রেকর্ডটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে—২০১০ সালে ব্রিজটাউনে ৪৯ রানে। সেই হারের রেকর্ড আজ নতুন করে লেখালেন ভারতের ব্যাটসম্যানরা। এতে প্রথম ম্যাচ জিতে নিউজিল্যান্ড দলও সিরিজে এগিয়ে গেল দুর্দান্তভাবে। অন্যদিকে রেকর্ড গড়ার নেশায় পেয়ে বসা ভারতকে দেখতে হলো মুদ্রার অপর পিঠও। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে রেকর্ড গড়ে জয়ের পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজেও রেকর্ড গড়েছে ভারত। রেকর্ড গড়ল তাঁরা টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচেও। কিন্তু এই রেকর্ড নিশ্চিতভাবেই ভারতীয় সমর্থকদের বুকে বিঁধেছে শেল হয়ে!