>
মেয়েদের এশিয়া কাপে কাল ভারতকে হারিয়েছেন রুমানা-ফারজানারা। এই জয়ের পথে বাংলাদেশ গড়েছে বেশ কিছু রেকর্ড ও কীর্তি
জয়টা ছেলেরা পেলে এতক্ষণে দেশজুড়ে উৎসবের ঢাকে কাঠি পড়ত। মেয়েরা জিতেছে বলেই কি সেভাবে সাড়াশব্দ নেই? তাতে অবশ্য জয়ের গৌরব এতটুকু ক্ষুণ্ন হচ্ছে না। টি-টোয়েন্টি সংস্করণে যে কাজ সাকিব-তামিমরা কখনো করতে পারেননি ভারতকে হারিয়ে সেটাই করে দেখিয়েছে আমাদের মেয়েরা। গর্বে বুকের ছাতি চওড়া না হয়ে উপায় আছে!
না উপায় নেই। বরং মেয়েরা এই এশিয়া কাপে গর্বের পাল্লাটা ভারী করেই চলছেন। আজ থাইল্যান্ডকে তাঁরা হারিয়েছেন দোর্দণ্ডপ্রতাপে। টস জিতে থাইল্যান্ডের মেয়েদের আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে মাত্র ৬০/৮ রানে থামিয়েছেন সালমা খাতুন-নাহিদা আক্তাররা। ৪ ওভারে মাত্র ৬ রানে ২ উইকেট নেন অধিনায়ক সালমা। তাড়া করতে নেমে মেয়েরা ৯ উইকেটে জিতেছে ৫৩ বল হাতে রেখে। এখন সামনে মালয়েশিয়া, তাদের বিপক্ষে জিতলেই ফাইনালে উঠবে বাংলাদেশ।
এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে শক্তিশালী দল ও ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ভারতকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে সালমা খাতুনের দল। টি-টোয়েন্টি সংস্করণে ছেলেদের ও মেয়েদের দল মিলিয়ে এটাই প্রথম জয় বাংলাদেশের। শুধু কি তাই, মেয়েদের এশিয়া কাপে টানা ৩৪ ম্যাচ জয়ের পর এটাই প্রথম হার শিরোপাধারী ভারতীয় মেয়েদের। পাকিস্তান কিংবা শ্রীলঙ্কার মতো দল যা কখনো করতে পারেনি রুমানা-ফারজানারা কাল কুয়ালালামপুরে সেটাই করে দেখিয়েছেন। দুর্দান্ত এই জয় তুলে নেওয়ার পথে বেশ কিছু কীর্তিও গড়েছেন রুমানারা। আসুন দেখে নেই সেসব মাইলফলক—
আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩ উইকেটে ১৪২ রান তুলেছিল ভারত। তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ ২ বল হাতে রেখে জিতেছে। টি-টোয়েন্টিতে এটাই বাংলাদেশের মেয়েদের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের নজির। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে এই প্রথম এক শ রানের বেশি করে জয়ের মুখ দেখলেন মেয়েরা। এর আগে এই এশিয়া কাপেই পাকিস্তানের ৫ উইকেটে ৯৫ রান তাড়া করে জিতেছিলেন সালমারা। তার আগে ২০১২ সালে আইরিশ মেয়েদের ঘরের মাঠে ৪ উইকেটে ৯২ রান তাড়া করে জিতেছেন মেয়েরা।
টি-টোয়েন্টিতে এটাই বাংলাদেশের মেয়েদের সর্বোচ্চ রানের (১৪২/৩) ইনিংস। এই পথে রুমানারা ভেঙেছেন গত মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে প্রোটিয়া মেয়েদের বিপক্ষে গড়া ৫ উইকেটে ১৩৭ রানের মাইলফলক। শুধু তাই নয়, ভারতের বিপক্ষে জয়ের এই ম্যাচেই টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেছেন ফারজানা হক (৪৬ বলে ৫২)। এই পথে তিনি ভাঙলেন গত মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে শামীমা সুলতানার ৫০ রানের ইনিংসের মাইলফলক। উল্লেখ্য, টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের মেয়েদের সর্বসাকল্যে এ দুটোই ফিফটি রানের ইনিংস।
ভারতের বিপক্ষে কালকের জয়ে রুমানা আহমেদের অবদানও কম নয়। বল হাতে ৩ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাট হাতে খেলেছেন ৪২ রানের অপরাজিত ইনিংস। ম্যাচসেরাও তিনি। চতুর্থ উইকেটে রুমানার সঙ্গে তাঁর অপরাজিত ৯৩ রানের জুটিটাই জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের মেয়েদের এটাই সর্বোচ্চ রানের জুটি। এর আগে এই সংস্করণে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটিতেও জড়িয়ে আছে রুমানার নাম।
পাঁচ বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার মেয়েদের বিপক্ষে আয়েশা-রুমানা মিলে ওপেনিং জুটিতে ৮১ রান তুলেছিলেন। কালকের আগ পর্যন্ত এত দিন এটাই ছিল টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি। এখানে বলে রাখা ভালো, টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ছেলেদের সর্বোচ্চ রানের জুটি কিন্তু খুব বড় নয়। ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় উইকেটে তামিম-মাহমুদউল্লাহ ১৩২ রানের অপরাজিত জুটি গড়েছিলেন। সেখানে রুমানা-ফারজানার অপরাজিত ৯৩ রানের জুটি কিন্তু একেবারে কম নয়।
আসলে তাঁদের এই জুটিই নতুন এক দ্বার খুলে দিয়েছে। ২০০৪ সালে মেয়েদের এশিয়া কাপ চালুর পর শিরোপাটা সব সময় ভারতীয় মেয়েদের হাতেই উঠেছে। এমন প্রতাপশালী একটা দলকে টুর্নামেন্টের প্রথম হার উপহার দেওয়া যতটা চমক তার চেয়েও বেশি সামর্থ্যের প্রমাণ। রুমানা আহমেদের চোখে এই জয় তাই স্বপ্ন সত্যি হয়ে ধরা দিয়েছে। ভারতকে হারিয়ে হোটেলে ফেরার পর তাঁদের অভ্যর্থনা জানিয়েছে পাকিস্তানের মেয়েরা।
অথচ আগের ম্যাচেই বিসমাহ মারুফদের হারিয়েছেন রুমানারা, ‘আমরা আগের দিন (পাকিস্তান) তাদের হারালাম। আর আজ ওরা আমাদের অভিনন্দন জানাচ্ছে ভারতকে হারানোর জন্য। এই জয় নিঃসন্দেহে আমার ক্যারিয়ারে সবচেয়ে স্মরণীয়।’ তবে রুমানার কাছে ভারতকে হারানোর মাহাত্ম্যটা অন্য জায়গায়, ‘স্বপ্ন ছিল ভারতের মতো দলকে হারানোর কাছাকাছি পৌঁছাব। কিন্তু তাঁদের হারিয়েছি, এটা এখন বাস্তবতা।’