>প্রভাত কি সব সময় দিনের সঠিক পূর্বাভাস দেয়? কখনো দেয়, কখনো দেয় না। ক্রিকেটও এমনই। দু;স্বপ্নের মতো শুরুর পরও যেমন আলো ছড়ানোর গল্প আছে, তেমনি হইচই ফেলে দেওয়া আবির্ভাবের পর পথ হারিয়ে ফেলারও। এ সব গল্প নিয়েই নতুন এই ধারাবাহিক শুরু করলেন উৎপল শুভ্র
এটাও কি ক্রিকেটের অনেক রসিকতার একটি যে, এক টেস্টে সবচেয়ে কম রান করার যন্ত্রণায় যাঁকে পোড়াবে, তাঁর মাথাতেই আবার তুলে দেবে এক টেস্টে সবচেয়ে বেশি রান করার রেকর্ডের মুকুট!
এক টেস্টে সবচেয়ে কম কত রান করা সম্ভব, এটা কোনো প্রশ্নই নয়। সবারই তা জানা। রান তো আর ঋণাত্মক হয় না, শুন্যের নিচে তা নামবে কিভাবে! একজন ব্যাটসম্যানের জন্য সর্বোচ্চ (নাকি সর্বনিম্ন?) ব্যর্থতা হলো দুই ইনিংসেই গোল্লা মারা। ক্রিকেটীয় পরিভাষায় যেটিকে বলে 'পেয়ার'। নিষ্ঠুর মজা করে অনেকে 'চশমা'-ও বলেন। পেয়ার-ই বলুন বা চশমা---একজন ব্যাটসম্যানের জন্য তা চরম অবমাননা। আর সেই 'পেয়ার' যদি টেস্ট অভিষেকেই হয়, নিজেকে অভিশপ্ত বলে মনেই হতেই পারে!
টেস্ট ইতিহাসে এই অভিজ্ঞতা হয়েছে ৪৪ জনের। অনুমান করতেই পারেন, এদের বেশির ভাগই ব্যাটসম্যান নন। 'পেয়ার' পেলে বোলারদেরও নিশ্চয়ই খারাপ লাগে, তবে মর্মযাতনাটা অবশ্যই একটু কম হয়। ব্যাটিংটা তো তাঁর শক্তির জায়গা নয়, মূল কাজও না। কিন্তু একজন স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যানের জন্য এটিকে 'দু;স্বপ্নের শুরু' বললেও যেন কম বলা হয়। এমন একটা শুরুর পরও একজন ব্যাটসম্যানের ক্যারিয়ার কতটা উজ্জ্বল হতে পারে? সর্বোচ্চ কত রান নিয়ে শেষ করতে পারেন টেস্ট ক্যারিয়ার?
উত্তরটা সংখাতেই দিই---৮৯০০। ব্যাটসম্যানের নাম? সেটি বলার আগে চলুন, তাঁর অর্জনের ডালাটায় একটু চোখ বুলিয়ে আসি। নামটা আপনার জানা না থাকলে সে সব ক্লুয়ের কাজও করবে। জোড়া শূন্য দিয়ে শুরু যাঁর ক্যারিয়ার, সেই ব্যাটসম্যান পাঁচ বছরেরও বেশি সময় টেস্টে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়ে ছিলেন। অ্যালিস্টার কুক সে রেকর্ড ভেঙে দিলেও ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ টেস্ট স্কোরের রেকর্ডটি এখনো তাঁর। লেখার শুরুতে ক্রিকেটের যে রসিকতার কথা বলেছিলাম, সেটিও তাঁকে নিয়েই। এক টেস্টে সবচেয়ে কম রান করার 'রেকর্ডে' তাঁর অনেক সঙ্গী, তবে সবচেয়ে বেশি রান রেকর্ডটি শুধুই তাঁর একার। এক টেস্টের দুই ইনিংস মিলিয়ে ৪৫৬ রান। প্রথম ইনিংসে ৩৩৩, দ্বিতীয় ইনিংসে ১২৩। টেস্ট ক্রিকেটের দুই ইনিংসে ট্রিপল সেঞ্চুরি আর সেঞ্চুরির এই কীর্তি আছে শুধু আর কুমার সাঙ্গাকারার।
৮৯০০ রান শুনেই যাঁরা ব্যাটসম্যানের নাম বুঝে ফেলেছেন, এত ভনিতার জন্য তাঁদের কাছে ক্ষমা চেয়ে এবার নামটা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা যাক। গ্রাহাম গুচ। প্রভাত যে অনেক সময়ই দিনের সঠিক পূর্বাভাস দেয় না, তাঁর মতো করে এটি আর কেউ প্রমাণ করতে পারেনি। প্রথম টেস্টে পেয়ার পাওয়ার পরও ছুঁড়ে ফেলা হয়নি, ১৯৭৫ সালের অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্টেও দলে ছিলেন। সেটিতে ৬ ও ৩১ রান করার পর বাদ। আবার ফিরতে ফিরতে তিন বছর। ক্যারিয়ারের মাঝপথে সে সময় নিষিদ্ধ দক্ষিণ আফ্রিকায় 'রেবেল' ট্যুর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার থেকে আরও তিন বছর কেড়ে নিয়েছে। তারপরও প্রথম শ্রেণী ও লিস্ট 'এ' (টেস্ট-ওয়ানডে সবই এর অন্তর্ভূক্ত) মিলিয়ে ক্রিকেট ইতিহাসে তাঁর চেয়ে বেশি রান আর কেউ করেনি। সংখ্যাটা বিস্ময়াভূত করে দেওয়ার মতো---৬৭,০৫৭।
খেলাকে যদি জীবনের মিনিয়েচার ধরেন...মিনিয়েচারই তো! আনন্দ-বেদনা, উচ্ছ্বাস-হতাশা, জয়-পরাজয়...জীবনের সব অনুভূতির রঙেই তো মন রাঙায় খেলা। গ্রাহাম গুচের গল্পটা লিখতে লিখতে ভাবছিলাম, কখনো কখনো তা প্রেরণার অনন্ত আঁকড়ও বটে। জীবনে কোনো কিছু করতে গিয়ে শুরুতেই হোঁচট খাওয়ার মানেই যে সব শেষ নয়, গ্রাহাম গুচ কি আমাদের সেটিই শিখিয়ে দেন না! যেমন দেন সাঈদ আনোয়ার ও মারভান আতাপাত্তুও।
এই দুজনের টেস্ট ক্যারিয়ারও শুরু জোড়া শূন্য দিয়ে। তারপরও একজন খেলেছেন ৫৫টি টেস্ট, অন্যজন ৯০টি। এতে কিছুটা বলা হলো, সবটা নয়। শুরুর ব্যর্থতাকে প্রতিজ্ঞার আগুন বানিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইটা যে ওই জোড়া শূন্য দিয়েও পুরো প্রকাশিত নয়। দুজনের ক্ষেত্রে তা দুরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক। ১৯৯০ সালের নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ফয়সালাবাদে টেস্ট অভিষেকের আগেই পাকিস্তানের ওয়ানডে দলে নিজেকে মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন সাঈদ আনোয়ার। ২৫টি ওয়ানডে খেলা হয়ে গেছে ততদিনে। দুটি সেঞ্চুরি করেছেন, ৩২.১৩ গড়টা খুব আহামরি কিছু না হলেও ৮৯.২৫ স্ট্রাইক রেট সে সময়ের বিচারে রীতিমতো অবিশ্বাস্য। সেটি অবশ্য সমস্যাই করল। টেস্ট অভিষেকে 'পেয়ার' পাওয়ার পর যেটি ব্যবহৃত হলো গায়ে 'ও তো শুধুই ওয়ানডে ব্যাটসম্যান' তকমা লাগিয়ে দেওয়ায়। এরপর আবার টেস্ট খেলার সুযোগ পেতে পেতে সোয়া তিন বছর। কখনো ফর্ম, কখনো ইনজুরি, কখনো বা নির্বাচকদের খেয়ালখুশিতে মাঝের সময়টায় ওয়ানডে দলেও যে খুব নিয়মিত ছিলেন, তা নয়। তাঁর অভিষেকের পর থেকে পাকিস্তানের খেলা ১১১টি ওয়ানডের অর্ধেকেরও কম ম্যাচে (৪৫) খেলেছেন আনোয়ার। ব্যাটিং গড় ততদিনে বেড়ে হয়েছে ৩৫.৮১, স্ট্রাইক রেট কমে ৮৫.১৬। তারপরও সেটি তখন পর্যন্ত ওয়ানডেতে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের শেষ কথা বলে বিবেচিত ভিভ রিচার্ডসের ৪৫ ম্যাচ শেষে স্ট্রাইক রেটের (৮৩.৫৯) চেয়েও বেশি। ৬টি সেঞ্চুরি করে ডেসমন্ড হেইন্সের ১৭ সেঞ্চুরির ওয়ানডে রেকর্ড ভাঙার পূর্বাভাসও দেওয়া হয়ে গেছে তত দিনে। এর ৩টি সেঞ্চুরি আবার টানা তিন ম্যাচে। স্বদেশি জহির আব্বাস ছাড়া তখন আর কারও যে কৃতিত্ব ছিল না।
আবার টেস্টে সুযোগ ১৯৯৪ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে। কামব্যাক টেস্টেও ব্যর্থ হওয়ার পরও (১৬ ও ৭) ভাগ্যিস রাখা হয়েছিল পরের টেস্টের দলে। সেই টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরির দিকে ধাবমান সাঈদ আনোয়ারকে ১৬৯ রানে থামিয়ে দেয় রান আউট। সিরিজের তৃতীয় টেস্টে ৬৯ ও ০। মাস ছয়েক পর শ্রীলঙ্কায় পরের টেস্টে ৯৪ ও ১৩৬ রানের দুটি ইনিংস খেলে সম্পন্ন টেস্ট ক্রিকেটে সাঈদ আনোয়ারের রাজকীয় প্রত্যাবর্তন। 'রাজকীয়' শব্দটা সচেতনভাবেই ব্যবহার করা। ৫৫ টেস্টে ৪৫.৫২ গড়ে ৪০৫২ রান দিয়ে যদি আপনি সাঈদ আনোয়ারকে বুঝতে চান, তাহলে বড় ভুল হবে। তাঁর ব্যাটিং ছিল দৃষ্টির জন্য এক প্রশান্তি। দুর্দান্ত টাইমিং আর অনায়াস সাবলীলতা ভুল বোঝাত----ব্যাটিংয়ের মতো সহজ কাজ বুঝি এই ভূবিশ্বে আর নেই!
টেস্টের সাঈদ আনোয়ারকে বুঝতে শুধু সংখ্যায় চলছে না। ওয়ানডেতে সেই ঝামেলা নেই। ২৪৭ ম্যাচে ৩৯.২২ গড় ও ৮০.৬৭ স্ট্রাইক রেটে -৮,৮২৪ রানই সে জন্য যথেষ্ট। একটু এদিক-ওদিক হলে ওয়ানডেতে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিটাও তাঁর ব্যাট থেকেই আসত। ভারতের বিপক্ষে চেন্নাইয়ে মাত্র ১টি ছক্কা দূরত্বে আউট হয়ে যাওয়ার যা হয়নি। ওয়ানডের সাঈদ আনোয়ার আরও অনেক জায়গা দাবি করেন। সেটি এই লেখার বিষয় নয় বলে বিস্তারিততে যাচ্ছি না। সাড়ে তিন বছরের কন্যা বিসমার মর্মান্তিক মৃত্যু পাকিস্তানের ওই দলে সবচেয়ে আমুদে, সবচেয়ে পরিহাসপ্রিয় সাঈদ আনোয়ারকে কেমন বদলে দিয়েছে, সেটি নিয়েও আলাদা একটি লেখা হতে পারে। তা যখন হওয়ার হবে। এখানে আমরা টেস্ট ম্যাচের সাঈদ আনোয়ারেই থাকি।
বিসমার মৃত্যুর কদিন আগেই শেষ টেস্ট ম্যাচটি খেলেছেন সাঈদ আনোয়ার। তখন যদিও জানতেন না, মুলতানে বাংলাদেশের বিপক্ষে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচটিই হয়ে যাবে তাঁর শেষ টেস্ট। যেটিতে সাঈদ আনোয়ারের সেঞ্চুরিতে লেখা হয়েছে টেস্ট ক্রিকেটে শুরু আর শেষে চরম বৈপরীত্যের এক গল্প ।
মারভান আতাপাত্তুও তা লিখে ফেলেছিলেন প্রায়। ২০০৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হোবার্টে জীবনের শেষ টেস্ট ইনিংসে ৮০ রানে আউট হয়ে যাওয়ায় যা হয়নি। প্রথম টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে শূন্য, আর শেষ টেস্টে ১০৫। মারভান আতাপাত্তুর শুরুর গল্পটা অবশ্য রীতিমতো হরর ফিল্মের এক ট্রেলার। যেটির কাছে গুচ আর আনোয়ারের গল্প কিছুই নয়। মিল বলতে আনোয়ারের মতোই বাদ পড়েছিলেন দু:স্বপ্নের অভিষেকের পর। কিন্তু দু:স্বপ্ন আতাপাত্তুর পিছু ছাড়েনি এরপরও। প্রায় দুই বছর পর আবারও টেস্টে সুযোগ পেয়ে প্রথম ইনিংসে আরেকটি শূন্য, দ্বিতীয় ইনিংসে ১। আবারও বাদ। প্রশ্নাতীত প্রতিভা আর ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিকতা দেড় বছর পর আবারও টেস্টের দরোজা খুলে দিল। আবারও 'পেয়ার'! সোয়া চার বছরে খেলা জীবনের প্রথম তিন টেস্টের ৬ ইনিংসে ৫টি শূন্য, রান মাত্র ১। সেই রানটিও আসলে আম্পায়ারের ভুলের সৌজন্যে। বলটা যে আতাপাত্তুর ব্যাটে নয়, প্যাডে লেগেছিল—আম্পায়ার এটা বুঝতে পারেননি। লেগ বাই রানটি ভুলে নিজের খাতায় লেখা না হয়ে গেলে প্রথম তিন টেস্টেই 'পেয়ার' পাওয়ার অবিশ্বাস্য এক 'কীর্তি' গড়ে ফেলতেন আতাপাত্তু। হয়ে যেত একটা রেকর্ডও।
একদিক থেকে ভালোই হতো। আতাপাত্তুর চমকপ্রদ গল্পটায় যোগ হতো আরও চমক। তিন বছরেরও বেশি সময় নির্বাসনে থাকার পর আবারও যে তাঁকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল টেস্ট দলে, সেটি নিশ্চয়ই ওই ১ রানের জন্য নয়। প্রথম তিন টেস্টে তিন 'পেয়ার' পেলেও আতাপাত্তু ঠিকই ফিরতেন। শ্রীলঙ্কান নির্বাচকদের দূরদৃষ্টির প্রশংসাটাও করে নেওয়া উচিত এই ফাঁকে। আতাপাত্তু নিজেই তো আমাকে বলেছেন, প্রথম তিন টেস্টে মাত্র ১ রান করার পর আর টেস্ট খেলার আশা তিনি ছেড়েই দিয়েছিলেন।
নির্বাচকেরা তাঁকে শুধু আবার ফেরালেনই না, সঙ্গে ধৈর্য্যের বটিকাও যেন খেয়ে নিলেন। নইলে ১৯৯৭ সালের মার্চে তৃতীয়বারের মতো টেস্ট দলে ফিরেও তো বড় কিছু করে ফেলেননি আতাপাত্তু। নতুন অধ্যায়ের প্রথম টেস্টে ২৫ ও ২২। পরের টেস্টের প্রথম ইনিংসে আরেকটি শূন্যে নিশ্চয়ই 'পেয়ার'-এর চোখ রাঙানি দেখতে পাচ্ছিলেন, দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫ রান করে সেটি এড়াতে পারেন। তাতে কি, টানা ৬টি টেস্ট খেলার পর দেখা গেল, ১১ ইনিংসে সর্বোচ্চ রান মাত্র ২৯। প্রথম তিন টেস্ট ধরলে ৯ টেস্ট শেষে ব্যাটিং গড় ১০.৭১!
তারপরও আতাপাত্তুকে নিয়ে যাওয়া হলো ভারত সফরে, যে ভারতে তাঁর দু;স্বপ্নের ওই শুরু। শাপমোচনও সেই ভারতেই। দশম টেস্টে এসে সেঞ্চুরি করলেন আতাপাত্তু। টেস্ট-সংখ্যাটা এখানে ব্যাপার নয়, অনেক বড় ব্যাটসম্যানেরও প্রথম সেঞ্চুরি পেতে এর চেয়ে টেস্ট লেগেছে। ব্যাপার হলো সময়টা আর টেস্ট অভিষেক আর প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির মাঝখানের সাত বছরে কতগুলো টেস্ট ম্যাচ দেখতে দেখতে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন আতাপাত্তু। মোহালিতে ১০৮ রানের ইনিংসটিই প্রথমবারের মতো আতাপাত্তুর মনে ছড়িয়ে দিল বিশ্বাস---টেস্ট ক্রিকেটেও রান করা যায়। সেই বিশ্বাসের মহিমায় টানা তিন সেঞ্চুরিই প্রায় হয়ে যাচ্ছিল। নাগপুরে পরের টেস্ট বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় ব্যাটিং করার সুযোগ পাননি। মুম্বাইয়ে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে সেঞ্চুরিবঞ্চিত মাত্র ২ রানের জন্য। তিন মাস পর ক্যান্ডিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পরের টেস্টে প্রথম স্বমহিমায় প্রকাশিত আতাপাত্তু। ৫৬৯ মিনিট ব্যাটিং করে ৪৪৮ বলে ২২৩। টেস্টে তাঁর ছয় ডাবল সেঞ্চুরির প্রথমটি।
৬টি ডাবল সেঞ্চুরি! ২০০৪ সালে আতাপাত্তু যখন এটি করেন, টেস্টে ছয় বা এর বেশি ডাবল সেঞ্চুরি ছিল আর মাত্র চার জনের (ব্র্যাডম্যান, হ্যামন্ড, লারা ও মিয়াঁদাদ)। এর পর আরও সাত জন যোগ হয়েছেন এই তালিকায়। তবে তখন যেমন ছিলেন, এখনো এঁদের মধ্যে একমাত্র ওপেনার মারভান আতাপাত্তু। ক্রিকেটের বিপরীত রূপ এমন নিয়মিতই দেখেছেন যে, বাকি সবার ব্যাটিং গড় যেখানে ৫০-এর ওপরে, একমাত্র আতাপাত্তুরই তা ৪০-এর নিচে। ৬৩ বার ১০ বা এর কম রানে আউট হয়েছেন, ১১ থেকে ৩০ রানের মধ্যে ৪১ বার। দুটো যোগ করুন। ১০৪ ইনিংসে ৩০ রানের নিচে আউট হওয়ার পরও গড়টা যে ৩৯.০২ গড়টাই তো অনেক বেশি বলে মনে হয়।
সবচেয়ে বেশি ডাবল সেঞ্চুরি করার গৌরবের রেকর্ডে ছয় জনের সংক্ষিপ্ত তালিকায় যেমন তাঁর নাম আছে, তেমনি আছে ব্যাটিং অগৌরবের রেকর্ড গড়া ছয়জনের আরেকটি সংক্ষিপ্ত তালিকাতেও। সেই তালিকা চার বা এর চেয়ে বেশিবার 'পেয়ার' পাওয়া ব্যাটসম্যানের। যেটিতে একমাত্র স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান আতাপাত্তু।
আব্রাহাম লিংকনই কি বলেছিলেন কথাটা---কতবার তুমি হুমড়ি খেয়ে পড়েছ, সেটা ব্যাপার নয়। ব্যাপার হলো, কতবার তুমি উঠে দাঁড়িয়েছ।' মারভান আতাপাত্তুর টেস্ট ক্যারিয়ার যেন এই কথাটারই বাস্তব রূপায়ন।
উদ্দীপনামূলক কথাবার্তা যতটা উদ্দীপ্ত করতে পারে, বাস্তব উদাহরণ তার চেয়ে অনেক বেশি। জীবনে নতুন কিছু করতে গিয়ে শুরুতেই হোঁচট খেলে আপনি তাই গুচ-আনোয়ার-আতাপাত্তুর গল্পটা মনে রিওয়াইন্ড করে নিতে পারেন। বারবার হোঁচট খেতে থাকলে অবশ্য গুচ-আনোয়ারে কুলোবে না, মারভান স্যামসন আতাপাত্তুই তখন একমাত্র সহায়!