জীবনের সেরা ফর্মে ড্যারিল মিচেল
জীবনের সেরা ফর্মে ড্যারিল মিচেল

রানবন্যায় মিচেলের যত রেকর্ড

ইংল্যান্ড সফর শেষে নিজের ঝুলিতে শুধু আর একটি জিনিসই নেওয়া বাকি থাকবে ড্যারিল মিচেলের—নাইটহুড। শুনতে বাড়াবাড়ি ঠেকতে পারে। কিউই ব্যাটসম্যান যে ফর্মে আছেন, তাতে এটুকু বাড়াবাড়ি করার সাধ জাগতেই পারে নিউজিল্যান্ডের ‘স্টাফ’ পত্রিকার।

হেডিংলি টেস্টের প্রথম ইনিংসেও শতক পেয়েছেন মিচেল। ৩১ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানের এই সফরে এটি তৃতীয় শতক। তিন ম্যাচ সিরিজের পাঁচ ইনিংসেই তিনবার শতক পাওয়া এই ব্যাটসম্যান ভেঙেছেন অনেক রেকর্ড। বেশ কিছু রেকর্ডে বসেছেন কিংবদন্তিদের পাশে।

ড্যারিল মিচেল

এবার ইংল্যান্ড সফরের মিচেলের খেলা হতো কি না সন্দেহ আছে। হেনরি নিকোলসই এগিয়ে ছিলেন দৌড়ে। লর্ডস টেস্টের আগে নিকোলস চোটে পড়লেন, কপাল খুলল মিচেলের। আর সুযোগকে এমনভাবেই কাজে লাগাচ্ছেন, তাতে তাঁকে বাদ দেওয়ার চিন্তা আর আনতেই দিচ্ছেন না। সফরের শুরু করেছিলেন একাদশের বাইরে থাকার সম্ভাবনা নিয়ে। আর সফর শেষ করছেন স্যার ডন ব্র্যাডম্যান, স্যার গারফিল্ড সোবার্স, স্যার জ্যাক হবস, স্যার এভারটন উইকস, স্যার অ্যালিস্টার কুক এবং স্যার অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসের পাশে বসে। মিচেলের জন্য নাইটহুডের দাবি এমনি এমনি তুলছে না স্টাফ।

হেডিংলিতে আবারও বিপর্যয়ে পড়েছিল নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ। এর মধ্যে মিচেলেরও অবদান আছে। তাঁর ব্যাটের ছোঁয়াতেই যে অদ্ভুতভাবে আউট হয়েছেন ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হেনরি নিকোলস। মিচেল তবু হাল ছাড়েননি, ১০৯ রানের ইনিংসে দলকে ৩২৯ রান এনে দিয়েছেন।

ড্যারিল মিচেল

সে ইনিংসই মিচেলকে সম্ভ্রান্ত সব ব্যাটসম্যানের কাতারে নিয়ে এসেছে। এমন ব্যাটসম্যান, যাঁরা এতটা দুর্দান্ত যে ঘরের বাইরে খেলতে গিয়েও টানা তিন টেস্টে শতক পেয়েছেন। তাঁদের কয়েকজনের নাম জেনে গেছেন ওপরে। অন্যরা হলেন অস্ট্রেলিয়ার জ্যাক ফিঙ্গলটন, নিল হার্ভে, রিকি পন্টিং, ডেভিড বুন, ভারতের সুনীল গাভাস্কার (দুবার!), ইংল্যান্ডের ওয়ালি হ্যামন্ড, কেন ব্যারিংটন, ক্রিস ব্রড, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রায়ান লারা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রায়েম স্মিথ। এঁদের কয়েকজনের নামের পাশেও স্যার উপাধি থাকলে কেউ আপত্তি তুলতেন না।

১৪২ বছর ধরে ইংল্যান্ডে সফর করছে দলগুলো। কাল পর্যন্ত ১১৫৮ জন সফরকারী দলের ব্যাটসম্যান ইংল্যান্ডে ব্যাটিং করেছেন। তাঁদের মধ্যে মাত্র ১৪ জন ব্যাটসম্যান ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে তিনটি শতক পেয়েছেন। তাঁদের কেউই সেটা মাত্র তিন ম্যাচের সিরিজে করতে পারেননি। দুঃখিত, ভুল হয়ে গেল। মিচেল প্রথমবারের মতো কাল সেটা করে দেখিয়েছেন।

ড্যারিল মিচেল
মিচেলের যত অর্জন: নিউজিল্যান্ডের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রতিপক্ষের মাঠে টানা তিন শতক। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এক সিরিজে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সর্বোচ্চ রান।

এ শতাব্দীতে মিচেলের আগে ইংল্যান্ডে সফর করতে গিয়ে তিনটি শতক পেয়েছেন মাত্র তিনজন। ৯ বছরের ব্যবধানে দুবার করেছেন ভারতের রাহুল দ্রাবিড় (২০০২,২০১১)। পাকিস্তানের মোহাম্মদ ইউসুফ (২০০৬) ও অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ স্মিথকে (২০১৯) দিয়ে শেষ এই তালিকা।

ওপরের নামগুলোয় নিউজিল্যান্ডের কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে নিউজিল্যান্ডের কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটি এখন মিচেলের। এক ইনিংস হাতে রেখে ৪৮২ রান হয়ে গেছে তাঁর। এর আগের রেকর্ডটি ছিল মার্টিন ডোনেলির। ১৯৪৯ সালে চার টেস্টের সিরিজে ৪৬২ রান করেছিলেন তিনি। সেই সফরেই বার্ট সাটক্লিফ ৪২৩ রান করেছিলেন। নিউজিল্যান্ড ও রানের রেকর্ড—এ দুটো কথাকে এক মনে করানো মার্টিন ক্রো ১৯৯৪ সালে তিন ম্যাচের সিরিজে ৩৮০ রান করেছিলেন।

ড্যারিল মিচেল

শুধু ইংল্যান্ড কেন, সব প্রতিপক্ষ মিলিয়েই মিচেলের আগে মাত্র চার কিউই ব্যাটসম্যান টানা তিন টেস্টে শতক পেয়েছেন। মার্ক বার্গেস, রস টেলর, কেইন উইলিয়ামসন ও টম ল্যাথাম। মার্ক বার্গেসের কীর্তিটা একদিক থেকে অনন্য। তাঁর তিন শতক তিন দেশে (পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড ও জ্যামাইকা)।

গত গ্রীষ্মে উইলিয়ামসের চোটের কারণে বিদেশের মাটিতে তিন টেস্ট খেলেছিলেন মিচেল। তবু ইংল্যান্ড সফরে দলে তাঁর জায়গা পাকা ছিল না। ব্যাটিং লাইনআপে মিডল অর্ডারে ডেভন কনওয়ে এবং হেনরি নিকোলসই এগিয়ে ছিলেন। চোট ও করোনা নিকোলসকে প্রথম ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয়। সুযোগ পেয়ে প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৩ রান করেছিলেন মিচেল। কিন্তু লর্ডসের দ্বিতীয় ইনিংসে ১০৮ রান তাঁকে দলে থিতু করে দিয়েছে।

ট্রেন্ট ব্রিজেও ফর্মে থাকা মিচেল ১৯০ ও ৬২ রানের দুটি ইনিংস খেলেছেন। গতকালের ইনিংস শেষে টেস্টে মিচেলের রান ৮৮৫-তে নিয়ে গেছে। ১৬ ইনিংসের ক্যারিয়ারে চারটি শতকের সঙ্গে চারটি অর্ধশতকও আছে মিচেলের। আর গড়? ৬৩.২১।