>
• দলের বিপদে মাহমুদউল্লাহর ত্রাণকর্তা হওয়ার অভ্যাসটা পুরোনো।
• মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে বাংলাদেশ।
মানুষটা অন্তর্মুখী স্বভাবের। প্রচারের আলোয় আসেন কম। এক মনে নিজের দায়িত্ব ঠিকই পালন করে যান। দলে অন্যদের তারকাখ্যাতির কাছে তিনি বরাবরই পার্শ্বনায়ক। কিন্তু দলের রাজত্ব সঁপে দেওয়ার দিনে রাজা!
আজকের কথাই ধরুন। উইকেটে যখন এলেন জয় থেকে ৩০ বলে ৫০ রানের দূরত্বে বাংলাদেশ। শেষ ওভারে এই লক্ষ্যটা নেমে আসে ৬ বলে ১২ রানে। উদানা পরপর দুই বাউন্সার দিলেও একটিও ওয়াইড দেননি আম্পায়ার। আম্পায়ারের সঙ্গে কথা-কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়লেন মাহমুদউল্লাহ। ড্রেসিংরুম থেকেও নেমে এলেন দলের বাকি খেলোয়াড়েরা। ম্যাচ বয়কটের পরিস্থিতি আরকি। শেষ পর্যন্ত তা না হলেও ওই পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখাই অনেক কঠিন ব্যাপার। তার ওপর লক্ষ্যটা আরও কঠিন—৪ বলে ১২।
মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে চড়ে এই লক্ষ্যটা পূরণ হলো ১ বল হাতে রেখেই। আরও একবার প্রমাণিত হলো, দলের জয় ছিনতাই হওয়ার পরিস্থিতিতে মাহমুদউল্লাহই প্রকৃত নায়ক, যিনি প্রায় হারাতে বসা রাজত্ব ফিরিয়ে আনতে জানেন।
বাংলাদেশ দলের এই মুখচোরা ক্রিকেটারের ‘ত্রাণকর্তা’ হয়ে দাঁড়ানোর অভ্যাসটা বেশ পুরোনো। ২০১০ আইডিয়া কাপেই নিজের জাত চিনিয়েছিলেন। বাংলাদেশ সেই আসরে কোনো ম্যাচ জিততে না পারলেও দলের শেষ তিন ম্যাচে ৬০, ২৪ ও ৬৪ রানের তিনটি অপরাজিত ইনিংস ছিল মাহমুদউল্লাহর। সেই শুরু। ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচ মনে আছে? মাহমুদউল্লাহ যখন উইকেটে এলেন, ৮ রানের ২ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তাঁর ১০৩ রানের ইনিংসে জয়ের সংগ্রহ পেয়েছিল বাংলাদেশ।
সেই বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ঠিক পরের ম্যাচেও প্রায় একই পরিস্থিতি। ২৭ রানে নেই ২ উইকেট। এমন সময়ে উইকেটে এসে অপরাজিত ১২৮ রানের ইনিংস খেলে বিপদ কাটিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। কিংবা সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচ! আসরে টিকে থাকতে জয় ছাড়া কোনো পথ ছিল না বাংলাদেশের। এমন ম্যাচে ৮ উইকেটে ২৬৫ রান তুলেছিল নিউজিল্যান্ড। এর জবাবে মাহমুদউল্লাহ যখন উইকেটে নামলেন বাংলাদেশ ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে পড়ার পথে—২৮ রানেই নেই ৪ উইকেট!
সাকিবের সঙ্গে জুটি বেঁধে এখান থেকে জয় ছিনিয়ে এনেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন দুজনেই। ২০১৬ এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষেও ম্যাচ জেতানো ইনিংস রয়েছে তাঁর। সেই টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের ১২৯ রান তাড়া করতে নেমে ভীষণ বিপদে পড়া বাংলাদেশকে মাহমুদউল্লাহ জয় এনে দিয়েছিলেন প্রায় এক হাতে!
এ সবই মাহমুদউল্লাহর ম্যাচ জেতানো ইনিংস। এর বাইরে দলের ডুবন্ত ইনিংসকে তিনি বহুবার সম্মানজনক অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছেন। দেখা গেছে, দল জেতেনি কিন্তু মাহমুদউল্লাহর ইনিংসকে সবাই মনে রেখেছে।
আসলে প্রতিকূল পথে যিনি চলতে পারেন, তিনি ‘আনসাং’ নন, আসল ‘রাজা’!