>ওয়ানডেতে প্রথম স্পিনার হিসেবে ১০০ রান দিলেন রশিদ। এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কাও খেয়েছেন রশিদ। গড়েছেন আরও কিছু লজ্জার রেকর্ড।
ডোয়াইন লেভেরককে মনে আছে? না থাকলে মনে করিয়ে দেওয়া যাক। ২০০৭ বিশ্বকাপে খেলতে এসেছিল বারমুডা। আইসিসির বাছাইপর্ব খেলে অনেকেই এভাবে এসেছে বিশ্বকাপে। তবু সেবার আলোড়ন তুলেছিল দলটি। বলা ভালো তুলেছিলেন এক বাঁহাতি স্পিনার। সুমো কুস্তিগিরদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারা বিশাল বপু নিয়ে বিশ্বকাপে খেলতে এসেছিলেন লেভেরক।
লেভেরকের বিশাল বপু নিয়ে নানা মজা করেছিল সংবাদমাধ্যমগুলো। তবে ভারতের বিপক্ষে স্লিপে দুর্দান্ত এক ক্যাচ ধরে আলোচনা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন লেভেরক। সেই লেভেরকের নামটা আজ আবার বারবার আলোচিত হলো। ভারতের বিপক্ষে সেদিন ওই ক্যাচ নিয়েই যে কাজ শেষ হয়নি লেভেরকের। বাঁহাতি স্পিনও করতে হয়েছিল তাঁকে। যুবরাজ সিংকে আউট করেছিলেন কিন্তু নিজের ১০ ওভারের কোটায় ৯৬ রান খরচ করে তবেই।
বিশ্বকাপে এক স্পিনারের সবচেয়ে বেশি রান দেওয়ার রেকর্ডটি এত দিন তাই লেভেরকের ছিল। আজ লেভেরকের মুক্তির দিন। বিশ্ব ক্রিকেট লেভেরককে তাঁকে বোলিং দক্ষতার জন্য মনে রাখেনি। কিন্তু আজ তাঁকে যিনি টপকে গেলেন রান খরচায়, সেই রশিদ খানের ক্ষেত্রে তো সেটা বলার জো নেই। কিছুদিন পর পর ইতিহাসে নাম লেখানো অভ্যাস হয়ে গেছে রশিদের। কিন্তু সেটা সব দুর্দান্ত কারণে। সবচেয়ে কম সময়ে সেঞ্চুরি উইকেট, সবচেয়ে কম বয়সেও করেছেন সেটা। বিশ্বের যাবতীয় বোলারের জন্য আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছিলেন রশিদ। প্রজন্মের সেরা স্পিনার ভাবা হয় তাঁকে।
প্রজন্মের সেরা স্পিনার আজ নিজের কোটা পূরণ করতে পারেননি। এউইন মরগানের তাণ্ডবের মুখে পড়ে স্লগ ওভারে তাঁর জন্য নির্দিষ্ট ৪ ওভারের একটি ব্যবহার করাই হয়নি অধিনায়ক গুলবদীন নাইবের। মরগান আউট হওয়ার পরই নবম ওভার করতে এসেছেন রশিদ। সে ওভারে তাঁর বলে ১৪ রান নিয়েছেন মঈন আলী। তাতেই লেভেরকের ঘাড় থেকে ঝরে পড়ল অনাকাঙ্ক্ষিত সে রেকর্ড। ক্রিকেট বিশ্বকাপে একজন স্পিনারের সবচেয়ে বেশি রান দেওয়ার রেকর্ডটি হয়ে গেল রশিদের।
সে ওভারেই মুত্তিয়া মুরালিধরনকেও দায় থেকে মুক্তি দিলেন রশিদ। ওয়ানডেতে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ৯৯ রান দেওয়ার রেকর্ড ছিল এই কিংবদন্তির। ২০০৬ সাল থেকে এই লজ্জার রেকর্ড ছিল তাঁর নামের পাশে। মঈন অবশ্য ওখানেই থামেননি। ওই ওভারে আরেক ছক্কা মেরে মার্টিন স্নেডেনকেও স্বস্তি দিলেন। বিশ্বকাপে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রান দিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের এই পেসার। ১৯৮৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১২ ওভারে ১০৫ রান দিয়েছিলেন। তাঁকে বাঁচাতে আজ রশিদের মাত্র ৯ ওভারই লাগল। ৯ ওভার বল করে ১১০ রান দিয়েছেন এই লেগ স্পিনার।
মঈন আলী শেষের ছোঁয়া দিলেও রশিদের আত্মবিশ্বাস নড়িয়ে দিয়েছেন মরগানই। একটি–দুটি নয়, সাতটি ছক্কা মেরেছেন তাঁকে। ওয়ানডেতে নির্দিষ্ট কোনো বোলারের বলে এত ছক্কা কোনো ব্যাটসম্যান মারেননি। এর আগে হার্শেল গিবস বিশ্বকাপে ফন বাঙ্গের বলে এক ওভারে ছয় ছক্কা মেরেছিলেন। এবি ডি ভিলিয়ার্সও ২০১৫ সালে জেসন হোল্ডারকে রেকর্ড গড়া দুই ম্যাচে ছয়বার ছক্কা মেরেছিলেন।
আর সব মিলিয়ে ১১ ছক্কা খেয়ে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কা খাওয়ার রেকর্ডটিও বুঝে নিয়েছেন রশিদ। এ দিনটি কখনোই ভুলতে পারবেন না রশিদ।