বিকেল সন্ধের মুখে কোথা থেকে একরাশ কালো মেঘ দেরাদুনের আকাশ ছেয়ে দিল। সেই মেঘ যে অগণিত ক্রিকেটপাগল বাংলাদেশির মনে ঘনাবে তখনো বোঝা যায়নি। ম্যাচ শেষ হওয়ার অনেক আগেই বোঝা গেল, ওই কালো মেঘরাশির একটা নামও আছে। রশিদ খান।
রশিদ খান ও মুজিবুর রহমানের মধ্যে বাংলাদেশ এই কদিন ধরে কেন এমন জুজু দেখছিল, তার প্রমাণটাও রোববার পাওয়া গেল। প্রথম বলে তামিমকে ফিরিয়ে দিয়ে মুজিবুর সেই যে কাঁপুনিটা ধরালেন, একবারের জন্যও তা থামানো গেল না। রশিদ হলেন ম্যাচের সেরা। তিন ওভার হাত ঘুরিয়ে তিন উইকেট! পোস্ট ম্যাচ প্রেস কনফারেন্সে তাঁকেই পাঠালেন অধিনায়ক আসগর। ঠিকই করেছেন। বীরকে যোগ্য মর্যাদা দেওয়াই উচিত। রশিদ বীরদর্পে বললেন, ‘কিছুদিন ধরেই আমার সময়টা ভালো যাচ্ছে। সবচেয়ে ভালো এটাই, ক্রিকেট আমি রীতিমতো উপভোগ করছি।’
খেলা শুরুর আগে ভেবেছিলাম, গা ঘামানোর হারা ম্যাচ রয়েল বেঙ্গল টাইগারদের তাতিয়ে দেবে। সেটাই তো হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু হলো না। ৪০ ওভারের প্রতিটি মুহূর্তে আসগরেরা টেক্কা দিয়ে গেলে সাকিবদের। এক দিন আগে সাকিব বলেছিলেন, কয়েকটা জায়গায় উন্নতির প্রয়োজন আছে। ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে যা বলেছিলেন, তাতে ক্রিকেটের আর কোনো কিছুই বাদ ছিল না। রোববারের রাতে দেখা গেল, ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং সবখানেই গহিন কালো অন্ধকার।
টস জিতে সাকিব ফিল্ড করার সিদ্ধান্ত নেন। হয়তো ঠিকই করেছিলেন। টার্গেট ঠিক করার চেয়ে টার্গেট তাড়া করা সহজ। চোখের সামনে লক্ষ্যটা জ্বলজ্বল করে। কিন্তু টসে জেতার আগেই যে তাঁরা রশিদ-মুজিবুরের কাছে হেরে বসেছিলেন! দরকার ছিল কিছুটা নির্ভরতা। অথচ আবু জায়েদ, নাজমুল, আবুল হাসান অথবা অধিনায়ক সাকিবের বোলিং সেই নির্ভরতাটুকু দিতে পারল কই? কেন যেন মনে হয়েছিল মোস্তাফিজুরের ‘দাক্ষিণ্যে’ সুযোগ পাওয়া আবুল হাসানের খিদেটা চরমে উঠবে। কোথায় কী? ওসমান গনি ও মহম্মদ শাহজাদেরা আটটা ওভার দিব্যি কাটিয়ে দিলেন। শাহজাদকে ফিরিয়ে সবাই আশা করেছিলেন সাকিবের আর একটা উইকেটের জন্য। ৩০০তম ম্যাচে ৫০০ উইকেট পেলে বাঙালি হিসেবে গর্বে বুক ফুলে উঠত। কিন্তু জ্যাক ক্যালিস ও শহীদ আফ্রিদিকে বলা যেত, ১০ হাজার রান ও ৫০০ উইকেট সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলে যিনি রেকর্ড করেছেন তিনি এক বঙ্গসন্তান।
কিন্তু সেসব কথা বুক ফুলিয়ে বলার অবকাশটাও তো কেউ দিলেন না। বরং রাশি রাশি প্রশ্ন জাগিয়ে সাত বল বাকি থাকতে ৪৫ রানে হেরে মুখ কালো করে মাঠ ছাড়লেন সাকিবেরা। পোস্ট ম্যাচ প্রেস কনফারেন্সে সাকিব এলেনই না। পাঠালেন লিটন দাসকে। স্পিনাররা যেখানে দিলেন পঞ্চাশের কম রান, পেসাররা শতাধিক, সেখানে কেন অবহেলিত হলেন মাহমুদউল্লাহ? প্রশ্নটা গোটা প্রেস বক্সেই ভোঁ ভোঁ করছিল। প্রশ্নটা লিটনকে শুনতে হলো। উত্তরটা সাদামাটা, অর্থহীন। ‘অন্যরা উইকেট পেয়ে গেলে এই সমালোচনা করা যেত না’, লিটন বললেন। বললেন বটে কিন্তু মাহমুদউল্লাহর ন্যায্য প্রাপ্যটা অস্বীকার করতে পারলেন না।
আফগানরা শেষ চার ওভারে ৬৪ রান করে গেল স্রেফ তুড়ি মেরে মেরে। এক দিন আগেই তাঁরা বলেছিলেন, প্যাশন তাঁদের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাথেয়। ভুল কিছু বলেননি। যে ক্ষিপ্রতায় তাঁরা ক্যাচ নিলেন, যেভাবে বাউন্ডারিমুখী প্রতিটি বল তাড়া করলেন, ক্রিকেটের সৌন্দর্য ও জৌলুশ তাতে বাড়ে। আসগরের ছেলেরা বোঝালেন ভবিষ্যৎ তাঁদেরই। কারণ তাঁরা সাহসী।
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান স্কোর অতঃপর ১-১। সিরিজ শুরুর আগে অত্যুৎসাহী যাঁরা আফগানদের ধবল ধোলাইয়ের খোয়াব দেখছিলেন, তাঁদের মন থেকে এখন রশীদ জুজু দূর হওয়া জরুরি। না হলে ভয় হয়, উল্টে আফগানরা ধবল ধোলাই না দেয়।