মোবাইল অ্যাপে ট্যাক্সি ডেকে হিলটন হোটেলের সামনে অপেক্ষায় ছিলেন রশিদ খান। সঙ্গে দুই সতীর্থ হজরতউল্লাহ জাজাই ও হামিদ হাসান। কিন্তু অপেক্ষার সময়টা এত প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে, সেটি বোধ হয় আফগানিস্তানের এই তিন ক্রিকেটারেরও ধারণা ছিল না।
হিলটনে আফগানিস্তান দল আছে জেনে সাউদাম্পটন ও এর আশপাশের আফগানরা নিয়মিতই ভিড় করছেন এই হোটেলে। লবিতে, হোটেলের বাইরে ‘কাবুলিওয়ালা’দের অবাধ যাতায়াত। হাতের কাছে প্রিয় তারকাকে পেয়ে গেলে অটোগ্রাফ, সেলফি—সবই হচ্ছে। কেউ বাধা দিচ্ছে না। আফগান খেলোয়াড়দেরও কোনো কিছুতে আপত্তি নেই। যেন কাউকেই মন খারাপ করে ফিরে যেতে দিতে চান না তাঁরা।
কাল বিকেলে ট্যাক্সির জন্য অপেক্ষার সময়টায় সে রকমই তিন খুদে ভক্তের দেখা পেলেন রশিদ-জাজাইরা।
তিন ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ফারজান একটু বেশিই চটপটে। তার কাছে রশিদ খানও যেন দ্বিতীয় শ্রেণিরই এক ছাত্র, সহপাঠী কোনো বন্ধু। আফগান তারকার সঙ্গে ফারজান যখন ছবি তুলতে চাইল, সঙ্গে থাকা তার বাবা দুষ্টুমি করে জানতে চাইলেন, ‘ছবি তোলার জন্য তুমি রশিদ খানকে কত পাউন্ড দেবে?’ একটু চিন্তা করে ফারজান জানাল তার বাজেট ‘১০ পাউন্ড’।
সেই শুরু। ফারজানের চটপটে ভাবই তিন আফগান ক্রিকেটারকে আগ্রহী করে তুলল তার সঙ্গে আড্ডায়।
রশিদ: কাল (আজ) খেলা দেখতে আসবে?
ফারজান: হ্যাঁ, আসব।
রশিদ: কীভাবে আসবে, তোমার স্কুল নেই?
ফারজান: স্কুলে যাব না। কারণ, কাল আফগানিস্তানের খেলা আছে। বাংলাদেশের সঙ্গে খেলা। আমি খেলা দেখতে আসব।
রশিদ: গতকাল (শনিবার) এসেছিলে খেলা দেখতে?
ফারজান: আমরা অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু আসতে পারিনি। বাবা লন্ডনে ছিল।
আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট তারকার সঙ্গে এ রকম আরও কথা চলে খুদে ভক্ত ফারজানের। একপর্যায়ে তার বাবা জানতে চাইলেন, ‘কাল (আজ) কে জিতবে?’ প্রশ্ন শুনে ফারজান যে রকম জোর দিয়ে ‘অফকোর্স আফগানিস্তান’ বলল, অত আত্মবিশ্বাস আফগানিস্তান দলেরও আছে কি না সন্দেহ।
কথার ফাঁকে ফাঁকে চলছিল ছবি তোলা। পশতু ভাষায় ফারজানকে নিয়ে তিন ক্রিকেটারের দুষ্টুমি। মাঝে আরেক ভক্ত তার পরিবারের কাকে যেন ভিডিও কল দিয়ে রশিদ খানকে মোবাইল ধরিয়ে দিলেন কথা বলার জন্য। রশিদও এমনভাবে হেসে হেসে কথা বললেন, যেন মুঠোফোনের পর্দায় ভেসে উঠেছে কাছের কোনো মানুষের মুখ।
এর মধ্যে ট্যাক্সিও চলে এল। খুদে ভক্তসহ আরও যাঁরা প্রিয় ক্রিকেটারদের দেখতে হিলটনে এসেছিলেন, সবার সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিদায় নিলেন রশিদ, জাজাই ও হাসান। শুরু থেকে ওখানে না থাকলে বিদায় পর্বটা দেখে বোঝার উপায় থাকত না, বিদায় নেওয়া আর দেওয়াদের মধ্যে সম্পর্কটা আসলে ভক্ত আর তারকার।
কিংবা তারকা-ভক্তদের সম্পর্কটা হয়তো এ রকমই। শুধু বাংলাদেশেই তা বোঝা যায় না।