শেষ পর্যন্ত হলো না! টেস্ট ক্রিকেটে ইনিংস ব্যবধানে প্রথম জয়টা আজই পেল না আফগানিস্তান। আবুধাবিতে দ্বিতীয় টেস্টটি চতুর্থ দিন শেষেই জয়ের হাতছানি দিচ্ছিল আফগানদের, সেটিও পাওয়া হয়নি তাদের। রশিদ খান–আসগর আফগানদের জয়ের অপেক্ষা বাড়িয়েছেন জিম্বাবুয়ের দুই ব্যাটসম্যান শন উইলিয়ামস ও ডোনাল্ড তিরিপানো। ১৪২ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর এ দুজন উইকেটে এমনই জমে গেছেন, দিনের বাকিটা সময় আর কোনো উইকেটই পড়তে দেননি। চতুর্থ দিনের খেলা জিম্বাবুয়ে শেষ করেছে ৭ উইকেটে ২৬৬ রান নিয়ে, লিড ৮ রানের। উইলিয়ামস উইকেটে আছেন ১০৬ রান নিয়ে। সঙ্গী তিরিপানো অপরাজিত ৬৩ রানে।
দিনের শুরুটা জিম্বাবুয়ে করেছিল ইনিংস ব্যবধানে হার এড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে। সেটাতে তারা সফলও হয়েছে। কিন্তু একটা সময়ে মনে হচ্ছিল, ইনিংস হারই জিম্বাবুয়ের নিয়তি। আগের দিনের বিনা উইকেটে ২৪ রান নিয়ে খেলতে নামা জিম্বাবুয়ে ২ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে। বিনা উইকেটে ৪৪ রান থেকে হঠাৎই স্কোর ২ উইকেটে ৪৬ রান। ধাক্কাটা সামলে ওঠার চেষ্টা করেন শন উইলিয়ামস ও মুসাকান্দা। তবে তৃতীয় উইকেটে উইলিয়ামস ও মুসাকান্দার ৫৫ রানের জুটির পর ১ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারিয়ে আবারও বিপদে পড়ে জিম্বাবুয়ে। ২ উইকেটে ১০১ রান থেকে তারা হয়ে যায় ৪ উইকেটে।
সিকান্দার রাজার সঙ্গে জুটি গড়ে দ্বিতীয় ধাক্কাটাও সামলে নেওয়ার চেষ্টা করেন উইলিয়ামস। কিন্তু জোড়ায় জোড়ায় উইকেট হারানো যেন থামছিলই না জিম্বাবুয়ের! একবার তো ২ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা। জিম্বাবুয়ের স্কোর ৪ উইকেটে ১৪০ থেকে হয়ে যায় ৭ উইকেটে ১৪২ রান!
জিম্বাবুয়ের ইনিংস ব্যবধানে হারা তখন সময়ের ব্যাপার বলেই মনে হচ্ছিল। ইনিংস হার এড়াতে তখনো ১১৬ রান দরকার ছিল। তখনই তিরিপানোকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন অধিনায়ক উইলিয়ামস। সেই প্রতিরোধ আর ভাঙতে পারেননি রশিদ খান–আমির হামজারা। চাপের মুখে দাঁড়িয়ে দুর্দান্ত ব্যাটিংই করেছেন দুজনে। দিন শেষে অবিচ্ছিন্ন আছেন অষ্টম উইকেটে ১২৪ রানের জুটি গড়ে। জিম্বাবুয়ের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে অষ্টম উইকেটে এর চেয়ে বেশি রানের জুটি আছে আর একটিই। ২০০৩ সালের নভেম্বরে হারারেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৬৮ রানের জুটি গড়েছিলেন হিথ স্ট্রিক ও অ্যান্ডি ব্লিগনট।
রেকর্ড ভাঙার দিকে এগিয়ে যেতে থাকা উইলিয়ামস–তিরিপানো এরই মধ্যে ভেসেছেন ব্যক্তিগত অর্জনে। জিম্বাবুয়ের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টানা তিন টেস্টে সেঞ্চুরি করলেন উইলিয়ামস। আর তিরিপানো খেলে ফেলেছেন টেস্ট ক্যারিয়ারে নিজের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি। আজ দিনের শেষ ভাগটা হতাশায় কাটলেও শুরুতে আনন্দেই কেটেছে রশিদ খানের। পাঁচ টেস্টের ক্যারিয়ারে চতুর্থবারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেট পেয়েছেন আফগান লেগ স্পিনার। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নেওয়া রশিদ আরেকটা উইকেট পেলেই দ্বিতীয়বারের মতো পাবেন ম্যাচে ১০ উইকেট।
ম্যাচটা ইনিংস ব্যবধানে জিততে পারলে অনন্য এক কীর্তিই গড়তে পারত আফগানিস্তান। টেস্ট দুনিয়ায় আফগানিস্তানের প্রবেশ ভারতের কাছে ইনিংস ব্যবধানে হেরে। তা–ও আবার দুই দিনের মধ্যে। কিন্তু পরের টেস্টেই জয় পেয়ে ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানের পাশে বসে গেছে আফগানরা—নিজেদের দ্বিতীয় টেস্টেই জয়ের দেখা পাওয়া তৃতীয় দল হয়ে গেছে তারা। অভিষেক টেস্টে জয় পাওয়ার রেকর্ড আছে একমাত্র অস্ট্রেলিয়ারই। জিম্বাবুয়েকে এই ম্যাচে ইনিংস ব্যবধানে হারাতে পারলে ম্যাচের হিসেবে দ্বিতীয় দ্রুততম দল হিসেবে ইনিংস ব্যবধানে জয়ের কীর্তি গড়ত আফগানিস্তান (৬ ম্যাচ)। নিজেদের দ্বিতীয় টেস্টেই প্রতিপক্ষকে ইনিংস ব্যবধানে হারানোর কীর্তি আছে শুধু পাকিস্তানের।
ক্রিকেটের অভিজাত অঙ্গনে আফগানরা বিস্ময় উপহার দিয়েছে বাংলাদেশে এসেও। চট্টগ্রামে নিজেদের তৃতীয় টেস্টেই তারা ২২৪ রানে হারিয়েছে তুলনামূলক শক্তিশালী দল বাংলাদেশকে। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০১৯ সালে একমাত্র টেস্টে হার। হেরেছে আবুধাবিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচেও। জিম্বাবুয়ের কাছে সেই হারও চমকের মতোই হয়ে এসেছে। দুই দিনের মধ্যেই ১০ উইকেটে টেস্ট হেরে গেছে তারা।
যাঁরা ভেবেছিলেন, সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও এভাবেই উড়ে যাবে আফগানরা, তাঁরা নিশ্চয়ই এখন নিজেদের ভুল বুঝতে পারছেন।