যে কারণে বাংলাদেশের ম্যাচের সব টিকিট হাওয়া!

টিম হোটেলে দলের সঙ্গে যোগ দিতে যাচ্ছেন মালিঙ্গা। ছবি: প্রথম আলো
টিম হোটেলে দলের সঙ্গে যোগ দিতে যাচ্ছেন মালিঙ্গা। ছবি: প্রথম আলো

তাজ সমুদ্রের সদর দরজার কাছাকাছি আসতেই বেশ মজা পাওয়া গেল। সত্যি কথা বলতে যে অনুভূতিটা হলো, তাকে শুধু মজায় সংজ্ঞায়িত করা কঠিন। একটি পাঁচ তারকা হোটেলের সামনে স্যান্ডব্যাগস ব্যারিকেড দেখায় মনে যে হাস্যরসের জন্ম নেয়, সেটা আবার কেটে যায় সেই পরিস্থিতির কথা ভেবে যার কারণে সৌন্দর্যহানি করেও এ কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

এপ্রিলে ঘটে যাওয়া সে ভয়ংকর আত্মঘাতী জঙ্গি হামলার রেশ কাটিয়ে উঠতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। তারই প্রতিফলন দুটি নিরাপত্তা ব্যূহ পেরিয়ে আসার পরও হোটেলে প্রবেশমুখে ভয়ালদর্শন অস্ত্র নিয়ে ব্যারিকেডের অন্য প্রান্তে এক নিরাপত্তাকর্মীর দাঁড়িয়ে থাকা। পরিস্থিতির অস্বাভাবিকতা বুঝিয়েই যেন কিছুক্ষণ পর সংবাদকর্মীদের সঙ্গে নিজে আগ্রহী হয়ে কথা বলতে লাগলেন অস্ত্র কাঁধে ঝুলিয়েই।

মালিঙ্গাকে দেখে ব্যারিকেড ছেড়ে বেড়িয়ে এসেছেন নিরাপত্তাকর্মী, সানন্দে ছবি তুলতেও রাজি হয়ে গেলেন। ছবি: প্রথম আলো

এমন একটি দৃশ্য দেখে ছবি তোলার ইচ্ছা জাগেই। কিন্তু ছবি তোলা যাবে কি না, এ নিয়ে সংশয় ছিল। এ নিয়ে সব সংশয় উড়ে গেল তাঁর আবির্ভাবে। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজের প্রথম ওয়ানডের পরই আন্তর্জাতিক ওয়ানডে থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন লাসিথ মালিঙ্গা। তাঁকে দেখে সংবাদকর্মীরা সবাই ছোটাছুটি করে ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন, ছবি তোলার জন্য আদর্শ রূপ পেতে একটু স্থির হওয়ার অনুরোধও উঠল। কিন্তু টিম হোটেলে দলের সঙ্গে যোগ দিতে আসা মালিঙ্গার ওসবে ভ্রুক্ষেপ নেই। গাড়ি থামিয়ে মালপত্র নামাতে লাগলেন, নিজেই টেনে নিতে লাগলেন হোটেলের ভেতর।

এরপরের দৃশ্যটি শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতির কথা বুঝিয়ে দিল। তিনি যে মালিঙ্গা, শ্রীলঙ্কার ওয়ানডে ইতিহাসেরই হয়তোবা সেরা বোলার, এসব তথ্য বিবেচনা করেও নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে কড়া পরীক্ষা দিতে হলো তাঁকে। মেটাল ডিটেক্টর হাতে নেওয়া কর্মী ও মালিঙ্গা দুজনের মুখেই স্মিথ হাসি। অন্য এক কর্মী ততক্ষণে এমন এক দৃশ্য মোবাইলের ক্যামেরায় বন্দী করতে ব্যস্ত!

নিস্তব্ধ এক এলাকায় আলোড়ন তুলে মালিঙ্গা হোটেল লবি ধরে অদৃশ্য হয়ে যেতেই অস্ত্রধারী সেই তরুণের সঙ্গে মনখুলে কথা বলা গেল। শ্রীলঙ্কান এয়ারফোর্সের সদস্য তিনি। প্রথমে বেশ গাম্ভীর্য দেখিয়ে পরে ক্রিকেটের সুবাদে হাসিও ফোটালেন মুখে। ধনঞ্জয় ডি সিলভাদের দেখে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে প্রতিবেদককে ডেকে দেখিয়ে দিলেন, ‘দেখ, ডি সিলভা।’ তাঁর পদবিও যে ‘ডি সিলভা’ সেটা তখনই প্রথম খেয়াল হলো। মালিঙ্গাকে দেখে নিজের জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে আসা লোকজনের মধ্যে এই অস্ত্রধারী ডি সিলভাও ছিলেন। শুক্রবার সিরিজের প্রথম ওয়ানডে যে ভালো করেই দেখার চেষ্টা করবেন, সেটা জিজ্ঞেস করার আগেই জানিয়ে দিলেন। কারণ? ওই যে ‘লিজেন্ড মালিঙ্গা’র শেষ ম্যাচ।

প্রথম ম্যাচের জন্য ২৩ তারিখেই লাইন ছিল টিকিট কাউন্টারে। ছবি: প্রথম আলো

মালিঙ্গার শেষ ম্যাচের জোয়ারে ভাসছে শ্রীলঙ্কা। সদ্য শেষ হয়েছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। বরাবরের তুলনায় এবারের বিশ্বকাপ শেষ দিকে ভালোই রং ছড়িয়েছে। এ সময় আবার ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহ থাকার কথা নয় কারও। বিশেষ করে ওয়ানডে ম্যাচ নিয়ে। সদ্য বিরিয়ানি খেয়ে পেট ভরিয়ে আবার ভাত খেতে কারও আগ্রহ থাকার কথা নয়। কিন্তু বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজে প্রথম ম্যাচের চিত্র ভিন্ন। ২৬ জুলাইয়ের ম্যাচের টিকিটের জন্য ২৩ তারিখেই শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডের সামনে লাইন লেগে গিয়েছিল। সেটা যে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, তা টের পাওয়া গেল আজ।

সিরিজ কভার করতে এসেছি জেনে ম্যাচ টিকিট চাওয়া হলো এই প্রতিবেদকের কাছে, টিকিট চাইলেন এক সমর্থক। বিস্মিত হতেই হলো, টিকিট তো পাওয়াই যায়! হতাশা মাখাকণ্ঠে উত্তর এল, ‘না, টিকিট সব শেষ। মালিঙ্গার শেষ ওয়ানডে সবাই সে ম্যাচ দেখার চেষ্টা করছে।’ দুদিন আগে টিকিট শেষ হওয়ার ঘটনা নাকি এর আগে হয়নি।

‘টিকিট শেষ’-এর আওয়াজ আরও বেশ কয়েক জায়গায় শোনা গেল। এমন আওয়াজ তুলে অবশ্য এ বিশ্বকাপেও গ্যালারির বেশ কিছু অংশ ফাঁকা দেখা গিয়েছিল। সেটা এ সিরিজেও হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে এটা নিশ্চিত মালিঙ্গার বিদায়ের ঘোষণা অন্তত এ সিরিজের প্রথম ম্যাচ নিয়ে আগ্রহটা বাড়িয়ে দিচ্ছে অনেক।

‘কিংবদন্তির বিদায়’ বলে কথা।