গত মৌসুমের আইপিএলের মাঝপথে হঠাৎ কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন দীনেশ কার্তিক। দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার ভারটা যায় এউইন মরগানের হাতে। এবার বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানকে নিয়ে নিজেদের ইতিহাসের তৃতীয় আইপিএল শিরোপার আশায় ছোটা কলকাতার অধিনায়ক সেই মরগানই। কার্তিক এখন সেখানে শুধুই আরেকজন খেলোয়াড়।
কিন্তু কেন? প্রায় আড়াই মৌসুম কলকাতাকে নেতৃত্ব দিয়েছেন কার্তিক, এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতে হয়ে যাওয়া গত আইপিএলের মাঝপথে গিয়ে কেন অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিয়েছেন ভারতীয় উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান? সেটির জবাব এবার নিজেই দিয়েছেন কার্তিক। তাঁর হিসাব, বেশ কয়েক বছর ধরে ইংল্যান্ডের ওয়ানডে অধিনায়ক এউইন মরগানকে সুযোগ দিতে চেয়েছিলেন বলে সরে গেছেন কার্তিক।
গত মৌসুমে কলকাতার হয়ে প্রথম ৭টি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন কার্তিক। হার দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করা কলকাতা এর মধ্যে টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচটিতে হেরে যায়। এরপর পাঁচ ম্যাচের চারটি জিতে যা-ও পয়েন্ট তালিকার তিন নম্বরে উঠে এসেছিল, পরের দুই ম্যাচে আবার হেরে যায়! অর্থাৎ, কার্তিকের অধিনায়কত্বে সাত ম্যাচে চার জয়, তিন হার।
এরপরই মরগানের হাতে দায়িত্ব তুলে দেন কার্তিক। ইংল্যান্ড অধিনায়কের অধীনেও যে একেবারে মহাভারত উলটে ফেলেছিল কলকাতা, তা নয়। সাত ম্যাচে তাঁর রেকর্ডটাও কার্তিকের মতোই, চার জয়, তিন হার। শেষ পর্যন্ত ১৪ ম্যাচে ৭ জয় ও ৭ হার নিয়ে পয়েন্ট তালিকার পাঁচ নম্বরে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করে কলকাতা, বাদ পড়ে গ্রুপ পর্বেই।
অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর মনে কী চলছিল, কলকাতার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক ভিডিওতে এ নিয়ে প্রশ্নে কার্তিক বলেন, ‘আমি তো শুধু মরগানকে একটা সুযোগ দিতে চেয়েছিলাম। আমরা সে সময় সাত ম্যাচে খেলেছিলাম, সাত ম্যাচ বাকি ছিল। সে হিসাবে আমাদের হাতে (নতুন অধিনায়ককে দেওয়ার মতো) যথেষ্ট সময় ছিল। আমরা টুর্নামেন্টে যদি খুব খারাপ করতাম, আমাদের যদি টুর্নামেন্টের সামনের দিকে যাওয়ার কোনো সুযোগ না থাকত আর তখনই যদি আমি অধিনায়কত্ব থেকে সরে যেতাম, তখন ব্যাপারটা খুব অন্যায্য হতো।’
যদিও কার্তিক অধিনায়কত্ব ছাড়ার ইচ্ছাটা আরও সাত দিন আগেই কলকাতা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন। গত বছরের ৭ অক্টোবর ধোনির চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে জয়ের পর অধিনায়কত্ব ছাড়ার কথা কর্তৃপক্ষকে জানান কার্তিক। কিন্তু সেটি কলকাতা কার্যকর করে ১৫ অক্টোবর, মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে ম্যাচের আগে।
তা নিয়ে অবশ্য ভাবেন না কার্তিক। নিজে তো আড়াই বছরই ছিলেন ‘মসনদে।’ সে অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে তাঁর যেন বেশ গর্বও হলো, ‘দলকে যে আড়াই বছর নেতৃত্ব দিয়েছি, তাতে ক্রিকেটারদের ভরসা অর্জন করে নিয়েছি। এটা নেতৃত্বের দিক থেকে আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। খেলোয়াড়েরা নিশ্চিত করেই জানত আমার কাছ থেকে ওরা বেশ সততা পাবে। এতে কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়।’
এ জায়গায় কলকাতার বর্তমান অধিনায়ক মরগানের সঙ্গে নিজের একটা মিলও খুঁজে পাচ্ছেন কার্তিক, ‘(সততার দিক থেকে) মরগান আমার মতোই। আমার মনে হয় ছেলেরা জানে যে এখানে দুজনই (মরগান ও কার্তিক) নিজেদের চেয়ে দলকে এগিয়ে রাখে। এ কারণেই হয়তো সিদ্ধান্তটা (অধিনায়কত্বে বদল) নেওয়া সহজ হয়েছে।’
এবারের আইপিএলটা এখন পর্যন্ত অবশ্য ভালো-মন্দে মেশানোই কেটেছে কার্তিকের। প্রথম ম্যাচে ৯ বলে ঝোড়ো ২২ রানে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিপক্ষে কলকাতাকে ১০ রানে জিতিয়েছিলেন। পরের ম্যাচে আবার কাঠগড়ায় কার্তিকের ব্যাটিং। মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে জেতা ম্যাচে অসম্ভব সম্ভব করে হেরে যায় কলকাতা, সে পথে কার্তিক শেষ দিকে দলের খুব প্রয়োজনের সময়ে করেছেন ১১ বলে ৮ রান।