>কাল পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের পথে থেকেও শেষ পর্যন্ত হেরেছে আফগানিস্তান। এ জন্য কাঠগড়ায় আফগান অধিনায়ক গুলবদিন নাইব। তাঁর চেয়ে ভালো করা বোলার থাকতেও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নিজেই বল করে ম্যাচটা পাকিস্তানের হাতে তুলে দিয়েছেন গুলবদিন। ৪৬তম ওভারে তিনি কেন নিজেই বল করলেন—সংবাদ সম্মেলনে এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন আফগান অধিনায়ক
কাল আফগানিস্তান-পাকিস্তান ম্যাচের প্রতিবেদনে এক সংবাদমাধ্যম লিখেছে, শেষ ৫ ওভারে ৪৬ রান দরকার ছিল পাকিস্তানের। এ অবস্থায় ৪৬তম ওভারে বল করতে আসেন আফগান অধিনায়ক গুলবদিন নাইব। সিদ্ধান্তটির পক্ষ নিয়ে বিশ্বের সেরা আইনজীবীও গুলবদিনকে রক্ষা করতে পারবেন না। আত্মপক্ষ সমর্থন করে সিদ্ধান্তটির পক্ষে বলার মতো কিছু নেই।
শুধু সংবাদমাধ্যম নয়, বেশির ভাগ ক্রিকেটপ্রেমীও মুণ্ডুপাত করছেন গুলবদিনের। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তো রীতিমতো ঝড় বইছে। কেউ বলছেন, আফগান অধিনায়ক ম্যাচ পাতিয়েছেন। কেউ আবার গুলবদিনের মস্তিষ্কের সুস্থতা নিয়ে সন্দিহান। ভীষণ স্বার্থপর বলেও মনে করছেন অনেকে। মাইকেল ভনের মতো নিপাট ভদ্রলোক পর্যন্ত কাল গুলবদিনের কাণ্ডকীর্তি সহ্য করতে না পেরে টুইটারে ক্ষোভ ঝেড়েছেন লেখার অযোগ্য ভাষায়। কাল ম্যাচের ৪৬তম ওভার থেকেই গোটা ক্রিকেটবিশ্বে যেন একটাই প্রশ্ন—কেন, গুলবদিন কেন?
৪৬তম ওভারে গুলবদিনকে বল করতে আসতে হবে কেন? যেখানে পাকিস্তান ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস তুলে ফেলেছিলেন আফগান স্পিনাররা। তখন শিনোয়ারি, রশিদ ও মুজিবের মোট ৫ ওভারই বাকি ছিল। অর্থাৎ স্পিনারদের দিয়েই ওভারগুলো শেষ করাতে পারতেন গুলবদিন। পার্টটাইমার হয়েও দুর্দান্ত বল করা শিনোয়ারিকে দিয়ে অন্তত ৪৬ ও ৪৮তম ওভার বল করাতে পারতেন। কিন্তু আগের ৮ ওভারে ৪৭ রান দেওয়া গুলবদিন সেসব চিন্তা মাথাতেই আনলেন না।
নিজের হাতেই বল তুলে নিয়ে লাইন-লেংথের বালাই না করে ফুল টস আর বাজে স্লোয়ারে এই বিশ্বকাপে সম্ভবত সবচেয়ে জঘন্য ওভার উপহার দিয়েছেন গুলবদিন। তখন হাতে মাত্র ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়া পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত ম্যাচে ফিরেছে গুলবদিন ওই ওভারে ১৮ রান দেওয়ায়। কিন্তু আফগান অধিনায়কের বোকামি, স্বার্থপরতা যাই বলুন না কেন সেসবের এখানেই শেষ নয়।
জয়ের জন্য শেষ ওভারে ৬ রান দরকার ছিল পাকিস্তানের। শিনোয়ারির হাতে বল দিয়ে অধিনায়ক হিসেবে গুলবদিন তখনো ম্যাচে ফেরার লড়াই করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে শেষ ওভার করেছেন তিনি নিজেই! ম্যাচটা শেষ হয়েছে ৪ বলের মধ্যে, গুলবদিন এর মধ্যে নষ্ট করেছেন একটি রানআউটের সুযোগও। এসব দেখে অনেক ক্রিকেটপ্রেমীই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছেন গুলবদিন কি ম্যাচ পাতিয়েছেন? নইলে ম্যাচের অমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিনি বোলিংয়ে আসবেন কেন?
তখন কেন বোলিংয়ে এলেন—এ প্রশ্ন উঠেছিল ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনেও। জবাবে আফগান অধিনায়কের ব্যাখ্যা, ‘আমরা ভেবেছি, সব বোলার ওদের লক্ষ্য নয়। প্রতিটি দলেরই নিজস্ব পরিকল্পনা থাকে আর ৪৬তম ওভারটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে ওভারে আমি ১৮ রান দিয়েছি, মোটেও ভালো হয়নি। হামিদ (হাসান) থাকলে আমি সম্ভবত তিন-চার ওভারের বেশি বল করতাম না। কারণ, এ উইকেটে বল করার মতো পর্যাপ্ত গতি আমার নেই।’
গুলবদিন বোঝাতে চেয়েছেন, দলের সেরা পেসার হামিদ হাসান না থাকায় তাঁকে ম্যাচের ওই মুহূর্তে বল করতে হয়েছে। পাকিস্তানের ইনিংসে ২ ওভার বল করেই হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন হামিদ। কিন্তু ম্যাচের ওই মুহুর্তে ক্লাব পর্যায়ের কোনো অধিনায়কও সম্ভবত পেসারদের হাতে বল তুলে দেবেন না। কারণ, তার আগে আফগান স্পিনারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়েছিল পাকিস্তান। উইকেটও স্পিনারদের সাহায্য করছিল দারুণভাবে। বল থেমে থেমে আসার সঙ্গে ভালোই বাঁক নিচ্ছিল। আর তখন শিনোয়ারির হাতেও দুটি ওভার ছিল।
আফগান অধিনায়কের ব্যাখ্যা ক্রিকেটপ্রেমীদের যে সন্তুষ্ট করতে পারছে না, সে কথা বলাই বাহুল্য। ২০১৯ বিশ্বকাপ শুরুর আগে বিতর্কিতভাবে গুলবদিনের কাঁধে নেতৃত্বভার তুলে দিয়েছিল আফগান টিম ম্যানেজমেন্ট। এ নিয়ে তখন সরাসরি অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন রশিদ খান-মোহাম্মদ নবীর মতো ক্রিকেটাররা। কাল অবিশ্বাস্য ওই সিদ্ধান্তের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীরা গুলবদিনের বিপক্ষে ম্যাচ পাতানোর দাবি তুললেও বর্তমান ও সাবেকদের মুখ থেকে সরাসরি কিছু শোনা যায়নি। তবে প্রায় সবাই একটি বিষয়ে একমত, অধিনায়ক হিসেবে চরম স্বার্থপরতা, বাজে এবং মূর্খতার এটাই সম্ভবত সবচেয়ে জঘন্য নজির।
ম্যাচটি না দেখে থাকলে গুলবদিন আসলে কী করেছেন, তা সহজে বুঝে নেওয়া যায় ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্টের প্রধান সম্পাদক শেখর গুপ্তের টুইট থেকে, ‘মাত্রাতিরিক্ত অহমিকার জন্য আফগানিস্তানের উচিত তাদের অধিনায়ককে ছাঁটাই করা। দলকে জয়ের পথ তৈরি করে দিয়ে তিনি তারকা হতে পারতেন। কিন্তু ম্যাচের খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এবং শেষ ওভারে নিজেই বল করতে এসে ফুলটসের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন। এত বাজে ও স্বার্থপর অধিনায়ক কখনো দেখিনি।’