যেসব টি-টোয়েন্টিতে কেঁদেছিলেন বোলাররা

আইরিশ বোলারদের কাল বেধড়ক মেরেছেন জাজাই। ছবি: এএফপি
আইরিশ বোলারদের কাল বেধড়ক মেরেছেন জাজাই। ছবি: এএফপি
দেরাদুনে কাল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড গড়েছে আফগানিস্তান। ম্যাচে ৮৪ রানের জয়ও পেয়েছে আফগানরাই। এমন পাঁচটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের দিকে চোখ ফেরানো যাব যেখানে বোলারদের বেধড়ক মেরেছেন ব্যাটসম্যানেরা


‘মেরে বলের সুতো খুলে ফেলব’—ক্রিকেটে কথাটা বেশ প্রচলিত। সত্যি সত্যিই হয়তো তা করা যায় না। ব্যাটসম্যানেরা মারের প্রচণ্ডতা বোঝাতে কথাটা বলে থাকেন। হজরতউল্লাহ জাজাই কি কাল এমন প্রতিজ্ঞা নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন? মেরে তিনি বলের সুতো হয়তো খুলতে পারেননি তবে বোলারদের দফারফা করে ছেড়েছেন। মাত্র ৬২ বলে তাঁর ১৬২ রানের ইনিংসে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড গড়েছে আফগানিস্তান। আইরিশ বোলারদের মধ্যে শুধু বোড র‌্যানকিন ওভার প্রতি দশের নিচে রান দিয়েছেন। বাকিরা সবাই দশ নয় বারো-র ওপাশে! কাল দেরাদুনে যা ঘটে গেছে, সেটি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভাবনীয়ই। 

সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত সংস্করণ বলেই ব্যাটসম্যানেরা কুড়ি-কুড়ির এই বাইশ গজে মারমুখী থাকেন। তাই বলে এতটা মারমুখী! হোক টি-টোয়েন্টি, এই সংস্করণেও বোলারদের ওপর এমন ঝড় খুব বেশি দেখা যায় না। জাজাই কাল সত্যিই মেরে বলের সুতো খুলে নিয়েছেন! আসুন ফিরে দেখি এমন পাঁচটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচকে—যেখানে ব্যাটসম্যানদের মারে বলের সুতো খুলেছে আর বোলাররা ছিঁড়েছেন মাথার চুল।

আফগানিস্তান ২৭৮/৩, দেরাদুন ২০১৯
বোলারদের নাকের জল চোখের জল এক হওয়ার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ দেরাদুনে কালকের ম্যাচটি। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে আফগানিস্তান। টি-টোয়েন্টিতে রেকর্ড ২২ ছক্কা আর ১৯ চারের এই ম্যাচে ৩ উইকেটে ২৭৮ রান তোলে আফগানরা। ১৬২ রানে অপরাজিত থাকা হজরতউল্লাহ জাজাই একাই মেরেছেন ১৬ ছক্কা আর ১১টি চার। বিপিএলে খেলা এই ওপেনারের জন্য কোনো আইরিশ বোলারই স্বস্তিতে ছিলেন না। এক ইনিংসে যুগ্মভাবে রেকর্ড সর্বোচ্চ আট বোলার ব্যবহার করেন আইরিশ অধিনায়ক পল স্টার্লিং। রান দেওয়া বিচারে র‌্যানকিনের (৮.৭৫) আইরিশদের দ্বিতীয় সেরা বোলার ডকরেলও ওভারপ্রতি ১২ করে রান দিয়েছেন। স্টার্লিং নিজে এক ওভার বল করে দিয়েছেন ২৪। আহা, কী ঝড়টাই না গেছে!

ম্যাক্সওয়েলের সামনে এদিন দাঁড়াতেই পারেননি লঙ্কান বোলাররা। ছবি: টুইটার



অস্ট্রেলিয়া ২৬৩/৩, পাল্লেকেলে ২০১৬
আফগানিস্তান টপকে যাওয়ার আগে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ডটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার দখলে। প্রায় তিন বছর আগে ক্যান্ডিতে লাকমল-পেরেরাদের ছাল-চামড়া তুলে নিয়েছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েলরা। সেই ম্যাচেও শ্রীলঙ্কার শুধু একজন বোলার ওভারপ্রতি দশের নিচে রান দিতে পেরেছিলেন। বাকি পাঁচ বোলারই ওভারপ্রতি গড়ে ১২ করে রান দেন। ৬৫ বলে ১৪৫ রানে অপরাজিত ছিলেন ম্যাক্সওয়েল। সেই ম্যাচে প্রথম ১০ ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ছিল ১ উইকেটে ১১০। কিন্তু বাকি ১০ ওভার অর্থাৎ শেষ ৬০ বলে দলটি তুলেছিল ১৫৩!

শ্রীলঙ্কা ২৬০/৬, জোহানেসবার্গ ২০০৭
দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অষ্টম ম্যাচে কেনিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল শ্রীলঙ্কা। টমাস ওদোয়ো-জিমি কামান্দেদের নিয়ে কেনিয়ার বোলিং লাইনআপ তখন খুব একটা খারাপ ছিল না। কিন্তু লঙ্কান ব্যাটিং অর্ডারে সেদিন কী ভর করেছিল কে জানে! ১০ ওভার শেষে যে দলের স্কোর ২ উইকেটে ১০১, বাকি ১০ ওভার শেষে সেই দল-ই থামল ৬ উইকেটে ২৬০ রানে! শেষ ৬০ বলে ১৫৯ রান তুলেছিল শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা। টি-টোয়েন্টিতে তখন এটি সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড। আর এই রেকর্ড গড়তে গিয়ে কেনিয়ার বোলারদের নিয়ে ছেলেখেলায় মেতেছিলেন জয়াসুরিয়া-জয়াবর্ধনেরা। ছয় বোলারের মধ্যে শুধু ওদোয়ো ৪.৬৬ গড়ে রান দেন। বাকিরা ওভারপ্রতি গড়ে ১৩-র ওপাশে! ১১ চার ও ৪ ছক্কায় ৮৮ রান করা জয়াসুরিয়া সবচেয়ে বেশি অত্যাচার চালিয়েছিলেন কেনিয়ার বোলারদের ওপর।

শ্রীলঙ্কার বোলারদের পিটিয়ে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছিলেন রোহিত। ছবি: টুইটার



ভারত ২৬০/৫, ইন্দোর ২০১৭
ভারতের যে ব্যাটিংশক্তি তাতে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ডটি তাঁদের দখলেই থাকার কথা। সেটি না হলেও দুই বছর আগে ইন্দোরে এই সংস্করণে নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের দেখা পায় বিরাট কোহলির দল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই ম্যাচে ২১ ছক্কা মেরেছিলেন ভারতের ব্যাটসম্যানেরা। আফগানরা কাল রেকর্ডটি নতুন করে লেখানোর আগে টি-টোয়েন্টিতে এক ইনিংসে এটি ছিল যুগ্মভাবে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড। ৪৩ বলে ১১৮ রান করেছিলেন রোহিত শর্মা। মোট সাত বোলার ব্যবহার করেছিলেন লঙ্কান অধিনায়ক থিসারা পেরেরা। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস বাদে বাকি ছয় বোলারই গড়ে ১২-র ওপাশে রান দিয়েছেন।

অস্ট্রেলিয়া ২৪৮/৬, সাউদাম্পটন ২০১৩
অ্যারন ফিঞ্চের ম্যাচ। ইংল্যান্ডের বোলারদের বেধড়ক পিটিয়ে টি-টোয়েন্টিতে তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান (১৫৬) করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার এই ওপেনার। সাউদাম্পটনে এদিন ১৮টি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানেরা। সাত বোলার ব্যবহার করেছিলেন ইংলিশ অধিনায়ক স্টুয়ার্ট ব্রড। ডেরেনবাখ (৮.৫০) ছাড়া আর কোনো বোলারই ওভারপ্রতি গড়ে ১২ রানের এপাশে আসতে পারেননি।