যাদের বিশ্বকাপ তাদের খোঁজ নেই, পাড়াপড়শির ঘুম নেই!

ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ চলাকালীন বিবিসি স্পোর্টস পেজের প্রচ্ছদ। ছবি: সংগৃহীত
ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ চলাকালীন বিবিসি স্পোর্টস পেজের প্রচ্ছদ। ছবি: সংগৃহীত
>বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আয়োজক ইংল্যান্ড। কিন্তু দেশটির প্রধান সংবাদমাধ্যমগুলোয় বিশ্বকাপ নিয়ে উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে খুব কমই।

২০১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ঢাকে তো কাঠি পড়ল। উপমহাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের এ নিয়ে উত্তেজনার শেষ নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশ্বকাপ নিয়ে চলছে অহর্নিশ যুক্তি-তক্ক। উপমহাদেশের সংবাদমাধ্যমও মেতে আছে বিশ্বকাপ নিয়ে। এই টুর্নামেন্টের ‘জুতো সেলাই থেকে চণ্ডিপাঠ’—জানিয়ে দিচ্ছে এখানকার সংবাদমাধ্যম। কিন্তু বিশ্বকাপ যেখানে গড়িয়েছে সেই ইংল্যান্ডেরই যেন ঘুম ভাঙেনি! বিশ্বকাপ ক্রিকেট নিয়ে ইংলিশদের আগ্রহ যেন একটু কমই। অন্তত তাদের শীর্ষ সংবাদমাধ্যমগুলো দেখে বোঝার উপায় নেই ‘বিশ্বকাপ’ বলে কিছু হচ্ছে!

মাইকেল ভন এর আগে একটা ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, ইংলিশরা আপাতত ফুটবল নিয়ে মত্ত। কাল রাতে হয়ে গেল ইউরোপা লিগের ফাইনাল। আর রোববার বাংলাদেশ সময় রাতে গড়াবে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল। ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সেরা এ দুটি টুর্নামেন্টের ফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বী চারটি দলই ইংল্যান্ডের। এমনিতে দেশটি ‘ক্রিকেটের জনক’ হলেও সেখানকার খেলা-পিপাসুদের ফুটবলের প্রতি টানটা একটু বেশিই। আর তাই ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ভন মনে করেন, ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসল আমেজ বোঝা যাবে এ সপ্তাহের পর থেকে। চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল হয়ে যাওয়ার পর ক্রিকেটে মজবে ইংলিশরা।

টেলিগ্রাফ স্পোর্টস পেজের প্রচ্ছদ। ছবি: সংগৃহীত

কিন্তু তারপরও একটু খটকা লাগেই। হাজার হোক ক্রিকেটের সেরা টুর্নামেন্ট আর ইংল্যান্ড তো ক্রিকেটের ‘জনক’—তাহলে সেখানকার সংবাদমাধ্যমের একটা দায়িত্ব তো থাকেই। আশ্চর্যের বিষয় হলো, বিবিসি ওয়েবসাইটের মতো ইংল্যান্ডের খ্যাতনামা সংবাদমাধ্যম পর্যন্ত কাল বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে কোনো সংবাদই দেয়নি। হ্যাঁ, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তেমন আড়ম্বর ছিল না সত্য কিন্তু তারপরও টুর্নামেন্টটি বিশ্বকাপ আর কাল ছিল উদ্বোধন। কিছুটা দায় তো থাকেই। তবে শুধু বিবিসি নয়, ইংল্যান্ডের বেশির ভাগ সংবাদমাধ্যমই হেঁটেছে একই পথে। আসলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে ইংলিশদের আগ্রহ কেমন ছিল সেটি বোঝা যায় ভনের টুইটে, ‘কয়েকজন আমাকে জিজ্ঞেস করেছে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাচ্ছি কি না...এ ধরনের কোনো অনুষ্ঠান আছে সেটাই তো জানতাম না।’

এই প্রতিবেদন লেখার মুহূর্তে বিবিসি ওয়েবসাইটের স্পোর্টস পেজে শুধু ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের ‘লাইভ স্কোর’ ছিল। কাল এ নিয়ে তারা প্রিভিউও করেছে। কিন্তু ওই এক-দুটি খবরেই বিশ্বকাপ শেষ! বাকি প্রতিবেদনগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই ফুটবল, টেনিস কিংবা অন্যান্য খেলার। ক্রিকেট নিয়ে আর কোনো প্রতিবেদন দেখা যায়নি। ইংল্যান্ডের আরেক খ্যাতনামা সংবাদমাধ্যম ‘টেলিগ্রাফ’ও তেমন আড়ম্বর করছে না বিশ্বকাপ ক্রিকেট নিয়ে। তাদের ‘স্পোর্টস’ পেজের প্রধান খবর ছিল ফুটবল নিয়ে। পাশে ছোট্ট একটু জায়গা দেওয়া হয়েছে ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের সরাসরি ফিড দেওয়ার জন্য। এ ছাড়া ক্রিকেট নিয়ে দু-একটি খবর থাকলেও ফুটবল এবং অন্যান্য খেলার প্রতিবেদনের প্রাধান্যই ছিল বেশি।

গার্ডিয়ান স্পোর্টস পেজের প্রচ্ছদ। ছবি: সংগৃহীত

সংবাদমাধ্যম ‘গার্ডিয়ান’ কিছুটা ব্যতিক্রম আনলেও ক্রিকেটের চেয়ে অন্যান্য খেলার খবরে প্রাধান্য বেশি দেওয়া হয়েছে। তাদের মূল খবরে আজকের ম্যাচে সরাসরি ফিড এবং আরও কয়েকটি প্রতিবেদন জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

এ তো গেল ইংল্যান্ডের তিন শীর্ষ মূলধারার সংবাদমাধ্যমের বিশ্বকাপ ‘জ্বরে’র মৃদু উত্তাপের খবর। ইংলিশ ট্যাবলয়েড দ্য সান, মিরর—এরাও ক্রিকেট বিশ্বকাপ নিয়ে খুব একটা উন্মাদনায় আক্রান্ত নয়। দেখা যাক, ফুটবলের ঘোর কেটে গেলে সেই জ্বরটা আসে কি না!