ইয়াসির আলীর বোল্ড হওয়ার দৃশ্যটা হয়তো বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের প্রতীকি। মহারাজ-হারমারদের কোনো জবাব শুধু ইয়াসির কেন, বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানেরই ছিল না
ইয়াসির আলীর বোল্ড হওয়ার দৃশ্যটা হয়তো বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের প্রতীকি। মহারাজ-হারমারদের কোনো জবাব শুধু ইয়াসির কেন, বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানেরই ছিল না

যাক, চূড়ান্ত লজ্জা তো আর হয়নি!

তাসকিন আহমেদকে একটা ধন্যবাদ দেওয়াই যায়!

মেহেদী হাসান মিরাজ যখন আউট হয়ে ফিরছেন, অবিশ্বাস্য কোনো জয় কিংবা নিদেনপক্ষে ড্রয়ের স্বপ্ন নিয়ে ম্যাচ দেখতে বসা বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের স্বপ্ন তখন অস্তমিত। বরং রেকর্ড নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে গেল। সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে মিরাজের বিদায়ের সময়ে বাংলাদেশের রান ৩৩, সে সময়ে আর কোন রেকর্ড নিয়েই বা টানাটানি হবে!

বাংলাদেশের সবচেয়ে কম রানে অলআউট হওয়ার রেকর্ডটা খুব বেশিদিন পুরোনো তো নয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র ৪৩ রানে গুটিয়ে যাওয়ার রেকর্ডের এখনো চার বছরও হয়নি। ডারবানে আজ মিরাজ আউট হওয়ার পর যখন ব্যাটিংয়ে আসার বাকি শুধু তিন বোলার তাসকিন, খালেদ ও ইবাদত; অন্য পাশে নাজমুল হাসানের ব্যাটেই বাংলাদেশের সেই স্কোর পেরিয়ে যাওয়ার একমাত্র সম্ভাবনা হয়তো দেখেছেন সবাই। কে জানে, মনে মনে তখন হয়তো অনেকে জপছেন ‘আর ১১, আর ১১!’

তাসকিনের ছক্কায় বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোর দেখতে হওয়ার শঙ্কা কেটেছে

তাসকিন আহমেদকে ধন্যবাদ, মুখোমুখি হওয়া তৃতীয় বলে মহারাজকে ছক্কা মেরে বাংলাদেশের স্কোরটাকে ৪২-এ নিয়ে গেছেন, পরের বলে সিঙ্গেলে ৪৩-ও পার। যে মহারাজের হাতেই বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ ধংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, অন্য কোনো দিনে তাঁকে তাসকিনের ওই ছক্কায় পাল্টা আক্রমণ নিয়ে হয়তো গল্প লেখা হতো। কিন্তু আজ বাংলাদেশের ইনিংসের এমন অবস্থা, পাল্টা আক্রমণের কথা বললে লজ্জা আরও বাড়ে।

শেষ পর্যন্ত ৫৩ রানেই গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশ। সবচেয়ে কম রানে অলআউট হওয়ার লজ্জায় পড়তে হয়নি, এই যা রক্ষে! বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রানে, যেটা আবার দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে নিজেদের সর্বনিম্ন রান। আগেরটি ২০১৭ সালে পচেফস্ট্রুফে, সেবার ৯০ রানে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ।

দ্বিতীয় দিনেই যে পিচে বল নিচু হয়ে আসছিল, যে পিচে দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার হারমারকে খেলতেই প্রথম ইনিংসে খাবি খেয়েছে বাংলাদেশ, সে পিচে চতুর্থ ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার দুই স্পিনার মহারাজ আর হারমারের হাতে বাংলাদেশের চুরমার হওয়ার একটা শঙ্কা হয়তো ছিলই। সেটি এভাবে হবে, তা হয়তো কেউ ভাবেনি।

ইনিংসে ১০ উইকেটের ১০টিই দুই স্পিনারের, তাঁদের মাত্র ১৯ ওভারই হাত ঘোরাতে হয়েছে। ৩ উইকেটে ১১ রান নিয়ে দিন শুরু করেছিল বাংলাদেশ, দিনে ১৩ ওভারেই বাকি সব হিসাব-নিকাশ শেষ!

এমন ম্যাচে কী হয়েছে না হয়েছে, তা নিয়ে সম্ভবত আর আলোচনার কোনো অর্থ হয় না। বাংলাদেশের এক স্পিনার নামা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে, ব্যাটসম্যানদের দক্ষতা আরেকবার প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কেমন করেছেন, তার তো একটা বড় প্রমাণ এই যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪ রান তাসকিনেরই! সর্বোচ্চ ২৬ রান অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়া নাজমুলের। দুই অঙ্কে আর কেউ যেতে পারেননি।

এক মহারাজই নাচিয়ে ছেড়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের

এই ম্যাচ ছাপিয়ে বরং বাংলাদেশের এই লজ্জা আগেরগুলোর তুলনায় কেমন, সেটির আলোচনা হতে পারে। টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে কম রানে অলআউট হওয়ার ঘটনাগুলোর বেশির ভাগেই অবশ্য কলম্বো আর শ্রীলঙ্কা জড়িয়ে। টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে কম রানে অলআউট হওয়ার তালিকায় ডারবান আজ দ্বিতীয় স্থান অর্জনের পথে ছাপিয়ে গেছে কলম্বোকে, ২০০৭ সালে বাংলাদেশ যেখানে অলআউট হয়েছে ৬২ রানে। চার নম্বরেও কলম্বোই, ২০০৫ সালে ৮৬ রান। দুটি অবশ্য দুই মাঠে। প্রথমটি পি. সারাভানুমাত্তু স্টেডিয়ামে, দ্বিতীয়টি প্রেমাদাসায়।

মাঝে ঢাকায় দুটি ৮৭ রানের ইনিংস—একটি কয়দিন আগে, ডিসেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে; অন্যটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। এরপরের দুটি আবার কলম্বোয় সেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই, ২০০৭ সালে ৮৯ রানে, আর তার ৬ বছর আগে ৯০ রানে। দুটিই কলম্বোর আরেক টেস্ট ভেন্যু সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে (এসএসসি)।

দক্ষিণ আফ্রিকায় আগের সর্বনিম্ন ৯০ রানের ইনিংসের পর ১০০ রানের নিচে বাংলাদেশের অলআউট হওয়ার ঘটনা আছে আর তিনটি—ঢাকায় অভিষেক টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের বিপক্ষে ৯১ রানে, ২০০৩ সালে পেশোয়ারে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯৬ আর ২০০৩ সালে ডারউইনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৯৭ রানে।