লিটন দাস ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোরের রেকর্ড গড়েছেন। তামিম ইকবাল তাঁর সঙ্গী হয়ে উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশের হয়ে রেকর্ড গড়েছেন। যেকোনো উইকেটের রেকর্ড থেকেও সরিয়ে দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ ও সাকিব আল হাসানকে। এক ম্যাচ বিরতি দিয়ে মাঠে ফিরেই ৪ উইকেট পেয়েছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। কিন্তু গতকাল ছিল শুধুই মাশরাফি বিন মুর্তজার দিন। বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে গতকালই সর্বশেষ মাঠে নামলেন নড়াইল এক্সপ্রেস।
অধিনায়ক হিসেবে বিদায়ী ম্যাচে সম্ভাব্য সেরা উপহারই পেয়েছেন। ইতিবাচক সব রেকর্ডে দেশের ইতিহাস সমৃদ্ধ হয়েছে। নিজেও ছুঁয়েছেন অনন্য এক মাইলফলক। বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়ে ওয়ানডেতে ৫০ জয় পেয়েছেন মাশরাফি। বাংলাদেশের হয়ে এ কীর্তি যে এই প্রথম সেটা বলাই বাহুল্য। বাংলাদেশের দ্বিতীয় সফল অধিনায়ক হাবিবুল বাশারই তাঁর চেয়ে পিছিয়ে আছেন ২১ ব্যবধানে। নিকট ভবিষ্যতে মাশরাফির পর এমন কিছু বাংলাদেশের হয়ে করার সম্ভাবনা আছে শুধু সাকিব আল হাসানের। তবে সে পথটাও বেশ কঠিন। নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরে এলে দলের দায়িত্ব যদি বুঝে পানও, তবু আরও ২৭ ম্যাচে দলের জয়ে নেতৃত্ব দিতে হবে সাকিবকে।
ওয়ানডেতে অধিনায়ক হিসেবে ৫০ জয় বাংলাদেশের জন্য প্রথম হলেও ক্রিকেট বিশ্ব এমন কিছু আরও ২৪ বার দেখেছে। অর্থাৎ ২৫ জন অধিনায়কের ওয়ানডেতে জয়ের ফিফটি আছে। তিনজন তো দলকে জেতানোর সেঞ্চুরিই করেছেন। আর নার্ভাস নাইনটি নাইনে ‘আউট’ হয়েছিলেন হ্যান্সি ক্রনিয়ে। ফলে ওয়ানডের সফল অধিনায়কদের তালিকায় মাশরাফি বেশ পিছিয়েই আছেন। নিখুঁত হতে চাইলে বলা যায় মাশরাফির চেয়েও সফল অধিনায়ক আছেন আরও ২২ জন।
অধিনায়কত্ব শুধু জয় দিয়ে হিসাব করলে ভুল হবে। জয়গুলো পেতে কার কত ম্যাচ দরকার হয়েছে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। অধিনায়কত্বের শুরুতে জয়-পরাজয়ের অনুপাতে সর্বকালের সেরা অধিনায়কদের সঙ্গেই পাল্লা দিয়েছেন মাশরাফি। কিন্তু ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ধীরে ধীরে সেটা কমে এসেছে। তবু ৮৮ ম্যাচে ৫০ জয় হেলায় উড়িয়ে দেওয়া সম্ভব নয় কারও পক্ষেই। মাশরাফির অধিনায়কত্বে ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ৫৬.৮২ ভাগ ম্যাচেই জয় পেয়েছে।
জয়ের শতকরা হিসেবে কম পক্ষে ৫০ ম্যাচ জেতা অধিনায়কদের মাঝে মাশরাফি বেশ এগিয়েই আছেন। সেরা পঁচিশে জয়ের হারে মাশরাফির চেয়ে পিছিয়ে আছেন আরও দশজন। তাঁদের মাঝে ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানো ও ১১০ ম্যাচ জেতা মহেন্দ্র সিং ধোনি (৫৫ ভাগ) আছেন। বিশ্বকাপজয়ী আরও দুই অধিনায়ক ইমরান খান (৫৩.৯৫) ও অর্জুনা রানাতুঙ্গাও (৪৬.১১ ভাগ) আছেন এ দলে। আরও আছেন ভারতকে বদলে দেওয়ার কৃতিত্ব পাওয়া সৌরভ গাঙ্গুলী (৫১ ভাগ)।
মাশরাফির চেয়ে তাহলে এগিয়ে আছেন কারা? এখানেও আছেন বিশ্বজয়ীরা। অস্ট্রেলিয়ার মাইকেল ক্লার্ক মাশরাফির মতোই ৫০ জয় পেলেও তাঁর অধিনায়কত্বে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ খেলেছে ৭৪টি। ফলে জয়ের হারে ক্লার্ক বেশ এগিয়ে (৬৭.৫৭ ভাগ)। ক্লার্কের চেয়েও এগিয়ে আছেন এখন পর্যন্ত কোনো বৈশ্বিক ট্রফি না জেতা বিরাট কোহলি (৬৯.৬৬)। ক্লার্ক ও মাশরাফির মাঝে দেখা যাচ্ছে এবি ডি ভিলিয়ার্স (৫৭.২৮), ইনজামাম-উল-হককে (৫৭.৭৮)। দুজন বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক অ্যালান বোর্ডার (৬১.১১) ও এউইন মরগান (৬০.৫৩) আছেন এখানেই। অধিনায়ক হিসেবে সফলতায় পিছিয়ে ছিলেন না ওয়াসিম আকরাম (৬০.৫৫), গ্রায়েম স্মিথ (৬১.৩৩), শন পোলকরাও (৬১.৮৫)। সমান ৬৭টি ম্যাচে জয় পেলেও স্টিভ ওয়াহকে (৬৩.২১) একটুর জন্য পেছনে ফেলেছেন ভিভ রিচার্ডস (৬৩.৮১)।
ক্লার্ক আর কোহলির ওপরে থাকা তিনটি নাম অবশ্য আন্দাজ করাই যায়। সবার স্পর্শের বাইরে আছেন ক্লাইভ লয়েড। দুটি বিশ্বকাপজয়ী এই অধিনায়ক মাত্র ৮৪ ম্যাচেই পেয়েছেন ৬৪টি জয়। ৭৬.১৯ ভাগ সাফল্যের গল্পের পরেই আছেন রিকি পন্টিং ও হ্যান্সি ক্রনিয়ে। জয় পাওয়ার রেকর্ডে পন্টিংয়ের ১৬৫কে ছাড়িয়ে যাওয়া হয়তো কারও পক্ষেই সম্ভব হবে না। কিন্তু জয় পাওয়ার হারে তাঁর সঙ্গে সমতায় আছেন ৯৯ ম্যাচে বিজয়ীর হাসি হাসা ক্রনিয়ে। দুজনই নেতৃত্ব দিয়ে ৭১.৭৪ ভাগ ম্যাচেই জয় পেয়েছেন।