>ভারতীয় নারী দলের হয়ে ৮ টেস্ট ও ৬৫ ওয়ানডে খেলা অঞ্জুর জন্য এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হলো এবার। পুরো ক্যারিয়ারে যিনি ভারতের জয় প্রত্যাশা করে এসেছেন। এবার তাঁকেই কি না ভারত-বধের ছক কষতে হয়েছে। যখন তাঁরই দেশ ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশ জিতে গেল এশিয়া কাপের ফাইনালে, কেমন অনুভূতি হয়েছিল অঞ্জুর?
হোটেল সোনারগাঁয়ে গত সোমবার বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের দলের প্রায় সবাইকেই দেখা গেল। কিন্তু সবার চোখ খুঁজে ফিরছিল মেয়েদের কোচ অঞ্জু জৈনকে। মাত্র তিন সপ্তাহ আগে নারী ক্রিকেট দলের দায়িত্ব নিয়েছেন এই ভারতীয়। কিন্তু তিনি ছিলেন না। মালয়েশিয়া থেকেই তিনি দলের সঙ্গে ফেরেননি। বাংলাদেশ মেয়েদের পরের অভিযান হল্যান্ডে। ভিসাপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে তিনি নিজ দেশ অর্থাৎ ভারতে চলে গেছেন।
এশিয়া কাপের মাত্র তিন সপ্তাহ আগে বাংলাদেশ মেয়েদের কোচ হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন অঞ্জু। খুবই অল্প সময়। এই সময়ে দলে বড় কোনো পরিবর্তন আনা বা বিশেষ টোটকা দেওয়া কঠিন। তবুও কী এমন মন্ত্র পড়ে দিলেন সালমাদের, যেটি বাংলাদেশকে এনে দিল বড় সাফল্য?
কাল রাতে ভারত থেকে মুঠোফোনে যোগযোগ হলো অঞ্জুর সঙ্গে। বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের এই ভারতীয় কোচ সব কৃতিত্ব দিলেন খেলোয়াড়দের, ‘অবশ্যই দলে প্রতিভাবান খেলোয়াড় আছে। গত কয়েক সপ্তাহ প্রত্যেক খেলোয়াড়ের সঙ্গে আলাদা আলাদা নিবিড়ভাবে কাজ করেছি আমরা। এটা অনেক কাজে দিয়েছে। আমি অনেক খুশি। যেটা চেয়েছি মেয়েরা যথাযথভাবে সেটা করেছে। তারা অনেক ইতিবাচক ছিল।’
যে দলটা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা ছিল না, যাদের শক্তি-দুর্বলতা সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ধারণা ছিল না। তাদের দায়িত্ব নেওয়ার পরই কঠিন চ্যালেঞ্জ—এশিয়া কাপ অভিযান। এই চ্যালেঞ্জটা কীভাবে উতরে গেলেন সেটিও বললেন অঞ্জু, ‘যখন তারা দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গেল (মে মাসে) তখন চেষ্টা করেছিলাম তাদের খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা। তাদের সম্পর্কে ধারণা পেতে এটা অনেক সহায়তা করেছে। কয়েকটি অনুশীলন সেশনে আমাদের প্রয়োজন হয়েছিল বোলিং-ব্যাটিং দুটির সমন্বয়েই একটু পরিবর্তন আনা। আবারও বলব সব কৃতিত্ব খেলোয়াড়দের। হ্যাঁ, তাদের কী করতে হবে, কীভাবে খেলতে হবে সেটি তারা ভালোভাবে বুঝেছে।’
অঞ্জু যে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের কথা বললেন, এই সফর থেকে বাংলাদেশ ফিরেছিল শূন্য হাতে। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি প্রতিটি সিরিজে হয়েছিল ধবলধোলাই। তবে দলের ম্যানেজার, খেলোয়াড় সবাই এশিয়া কাপ জয়ের পর বলেছেন, ওই সফর থেকে তারা অনেক শিখেছেন যেটি কাজে দিয়েছে এই টুর্নামেন্টে। অঞ্জুও বললেন, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ভালো না করায় খেলোয়াড়দের মধ্যে দুর্দান্ত কিছু করার ভীষণ তাগিদ ছিল, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে প্রতিটি ম্যাচ হেরে যাওয়ায় খেলোয়াড়েরা সত্যি অনেক হতাশ ছিল। তারা উন্নতি করতে ভীষণ উন্মুখ ছিল। তারা ভালো করতে চেয়েছে। এই যে তাদের ইচ্ছে এটাই পরে শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে।’
যখন তাঁরই দেশ ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশ জিতে গেল ফাইনালে, কেমন অনুভূতি হয়েছিল সাবেক এই ভারতীয় উইকেটকিপারের? অঞ্জুর মুখে যে বিস্তৃত হাসি, মুঠোফোনের এ প্রান্ত থেকে বেশ বোঝা যাচ্ছিল সেটা, ‘না, এটা মোটেও অপ্রস্তুত করার মতো ঘটনা নয়। মেয়েরা ভালো খেলেছে দিন শেষে এটাই বড় কথা। সত্যি এটা আমার জন্য অনেক তৃপ্তির। আমরা সবাই অনেক খুশি।’
আপাতত খুশি হলেও মোটেও আত্মতৃপ্তিতে ভুগছেন না অঞ্জু। সামনে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ। টি-টোয়েন্টি বাছাইপর্ব পেরিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠেয় মূল টুর্নামেন্ট খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। আপাতত অঞ্জুর চোখ তাই বিশ্বকাপ বাছাইয়ে, ‘এখনো পর্যন্ত সব ঠিকঠাক আছে। এখনো কিছু জায়গা আছে যেখানে উন্নতি করতে হবে। সবচেয়ে ভালো জিনিস হচ্ছে দলে কিছু ভালো অলরাউন্ডার আছে। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের আগে কিছু ম্যাচ আছে আমাদের, যেটা প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করবে। আত্মতৃপ্তিতে ভোগার কোনো কারণ নেই। আমাদের সামনে এখন বিশ্বকাপ খেলার লক্ষ্য।’