বিপিএল ড্রাফটের আগেই নাসুম আহমেদকে পাওয়া নিশ্চিত করে রেখেছিল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। এই বাঁহাতি স্পিনারকে পেতে কেন এত আগ্রহী ছিল দলটি, সেটা মিরপুরের উইকেটেই বোঝা গেছে। তবে চট্টগ্রাম জহুর আহমেদের ব্যাটিং–সহায়ক উইকেটে আরও ভালোভাবে বোঝা গেছে। ৩৮৮ রানের এক ম্যাচেও ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে ২ উইকেট তুলে নিয়েছেন।
কিন্তু আজ ম্যাচ জেতানোর কৃতিত্বটা মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর। এই বাঁহাতি পেসারের ১৮তম ওভারেই ম্যাচ ঘুরে গেছে। এবারের বিপিএলের প্রথম হ্যাটট্রিক করেছেন মৃত্যুঞ্জয়। হ্যাটট্রিকের শুরুটা করেছেন ম্যাচের সর্বোচ্চ ইনিংস খেলা এনামুল হককে দিয়ে। মৃত্যুঞ্জয়ে পথ হারিয়ে চট্টগ্রামের কাছে ১৬ রানে হেরেছে সিলেট সানরাইজার্স।২০৩ রানের লক্ষ্যে নেমে ১৮৬ রান করতে পেরেছে সিলেট।
১৭ ওভার শেষে ৪৯ রান দরকার ছিল সিলেটের। মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর প্রথম বলেই ছক্কা মারলেন এনামুল, পরের বলেই কাভার দিয়ে চার। বোলার নিজের অ্যাঙ্গেল বদলালেন। ফিল্ডার একবার এক জায়গায় রাখলেন, আবার সরালেন। একটু পর আবার রাউন্ড না ওভার দ্য উইকেট থেকে বল করবেন, সেটা নিয়েও একটু বিভ্রান্তি দেখা গেল তাঁর মাঝে। অবশেষে আজই অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া নাঈম ইসলাম এগিয়ে এসে কথা বললেন।
আর এতেই জাদুর মতো কাজ হলো!
তৃতীয় বলটাও ভালো করেননি। আগের বলের মতোই কাভার দিয়ে মারতে চেয়েছিলেন, কিন্তু এবার নাসুমের হাতে ধরা পড়লেন। পরের বলটাও ভালো ছিল না। কিন্তু তুলে মারতে গিয়ে পয়েন্টের সীমানায় থাকা আফিফের হাতে তুলে দিয়েছেন মাত্রই নামা মোসাদ্দেক হোসেন। পরের বল খেলার দায়িত্ব ছিল ১৬ রানে থাকা বোপারার। রাউন্ড দ্য উইকেটে এলেন মৃত্যুঞ্জয়। নিখুঁত এক ইয়র্কারে বোপারার স্টাম্প ওপড়ালেন। হ্যাটট্রিক!
ছক্কা-চারে শুরু হওয়া এক ওভারেই ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিক।
রান তাড়ার শুরুটা ভালো হয়নি সিলেটের। গতকাল এবারের বিপিএলের প্রথম শতক করা লেন্ডল সিমন্সকে দ্বিতীয় ওভারেই ফিরিয়ে দিয়েছেন নাসুম। সে ওভারে কোনো রানই দেননি এই বাঁহাতি স্পিনার! বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম এর আগেপরে দুই ওভারে দিয়েছেন মাত্র ১০ রান। তবু পাওয়ারপ্লে শেষে স্কোরবোর্ডে ৪৬ রান পেয়েছে চট্টগ্রাম। মেহেদী হাসান মিরাজ ও রেজাউর রহমানের দুই ওভার থেকেই ২৯ রান তুলে নিয়েছিলেন এনামুল হক ও কলিন ইনগ্রাম। ধারেভারে ইনগ্রাম এগিয়ে থাকলেও রান তোলায় এগিয়ে ছিলেন এনামুল। পাল্লা দিয়ে রান তুলে দুজনে ৯ ওভারের মধ্যে দলকে ৭০ রানে নিয়ে যান।
দশম ওভার ম্যাচের রূপ বদলে দেবে বলেই মনে হয়েছিল। রেজাউর রহমানকে আবার সামনে পেয়ে ২১ রান তুলেছেন এনামুল ও ইনগ্রাম। ১ উইকেটে ৯১ রান নিয়ে দশম ওভার শেষ করেছিল সিলেট। ম্যাচ তখন সিলেটের দিকে হেলে পড়েছে। ১২তম ওভারে পঞ্চাশ তুলে নেন এনামুল। ৩২ বলের মধ্যে ৭ চার ও ১ ছক্কা মেরেছেন এনামুল। একটু পর পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন ইনগ্রাম। ৩৬ বলের সে পঞ্চাশে ছিল ৫ চার ও ২ ছক্কা।
পঞ্চাশ করেই অবশ্য বিদায় নিয়েছেন ইনগ্রাম। মুখোমুখি হওয়া পরের বলেই মিরাজের বলে বোল্ড হয়েছেন স্লগ করতে গিয়ে।
পরের ওভারেই আবার নাসুমের হাতে বল তুলে দিয়েছেন নাঈম। প্রথম বলেই আবার উইকেট তুলে নিয়েছেন নাসুম। এবারও স্টাম্পিং, মাত্র ১ রান করে ফিরেছেন আলাউদ্দিন বাবু। এনামুলের এক ছক্কার পরও সে ওভার থেকে এসেছে মাত্র ৯ রান।
নাসুম তাঁর শেষ ওভারেও উইকেট পেতে পারতেন। কিন্তু লুইসের কারণে স্টাম্পিং হওয়ার হাত থেকে বেঁচে গেছেন ৬৬ রানে থাকা এনামুল। এর পরের ওভারেই হলো মৃত্যুঞ্জয়ের সে মহানাটকীয় ওভার।
২ ওভারে ৩৯ রান দরকার ছিল সিলেটের। শরিফুলের শেষ বলে ছক্কা মেরে মুকতার আলী শেষ ওভারের সমীকরণ ২৪ রানে আনেন। সে ওভারে বল বুঝে পেলেন মৃত্যুঞ্জয়। প্রথম বলেই চার মারলেন মোহাম্মদ মিঠুন। পরের দুই বল থেকে এসেছে ২ রান। শেষ ৩ বলে ৩ ছক্কা দরকার ছিল। সিলেট নিতে পারল মাত্র ১ রান। জয় থেকে ১৭ রান দূরে থেমেছে সিলেট।
চট্টগ্রামের ইনিংসের শুরুটা ছিল পুরোপুরি উইল জ্যাকস-ময়। ইনিংসের প্রথম তিন বল খেলেছিলেন কেনার লুইস। সে ওভারেই তাঁকে ছুঁয়ে ফেলেছেন জ্যাকস। এরপর উদ্বোধনী জুটিতে আর জ্যাকসকে টপকাতে পারেননি তাঁর সঙ্গী। পঞ্চম ওভারে জ্যাকস যখন ফিরছেন, ততক্ষণে মাত্র ৯ বল খেলেছেন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান, ওদিকে জ্যাকস খেলেছেন দ্বিগুণের বেশি বল (১৯)।
চট্টগ্রামের তাতে অবশ্য কোনো আপত্তি ছিল না। কারণ, জুটিতে ৯ বলে ৪ রান করেছেন লুইস, তবু ৪.৩ ওভারেই ৬২ রান চট্টগ্রামের। সানজামুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ ও আলাউদ্দিন বাবুদের বল মাঠের যেদিকে ইচ্ছা সেদিকে পাঠিয়ে ৭ চার ও ৩ ছক্কায় ১৮ বলেই ৫২ রান তুলেছেন জ্যাকস। তাসকিনের বলে ১৯তম বলে ফিরেছেন জ্যাকস। পরের ওভারে এক চার মেরে ফিরে গেছেন লুইস।
পরের ৭ ওভারে নতুন করে ইনিংসকে থিতু করার চেষ্টা করেছেন সাব্বির রহমান ও আফিফ হোসেন। ৪৫ বলে ৪৭ রানের জুটি গড়ে সাব্বির ফিরে গেছেন ৩১ করে। ২ ওভার পর ৩৮ করে আফিফও ফিরে গেছেন। কিন্তু ততক্ষণে ঝড় তোলার ভিত পেয়ে গেছেন বেনি হাওয়েল।
একদিকে দ্রুত রান তুলে নিচ্ছিলেন তিনি। নাঈম ইসলাম খুব বেশিক্ষণ টেকেননি। তবে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়া মেহেদী হাসান মিরাজ হাওয়েলকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন ৪ বলে ১৩ রান তুলে। তাসকিন আহমেদের শেষ ওভার থেকে ২২ রান তুলে দলকে ২০০ পার করে দিয়েছেন হাওয়েল (২১ বলে ৪১)।