মুশফিক আর মিঠুন দিনের শেষভাগে দারুণভাবেই লড়েছেন।
মুশফিক আর মিঠুন দিনের শেষভাগে দারুণভাবেই লড়েছেন।

দ্বিতীয় দিন শেষে

মুশফিকদের পরীক্ষা তো মাত্র শুরু হলো

পর্দায় বলের গতি দেখাচ্ছিল ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটারের কাছাকাছি। যদিও কাইল মেয়ার্সের বোলিং অ্যাকশন আর উইকেটে পড়ার পর বল যেভাবে যাচ্ছিল, তাতে গতি এর চেয়েও কম বোধ হচ্ছিল। খুব বেশি নিয়ন্ত্রণ নেই, ভালো জায়গায় টানা কয়েকটি বল করতেও পারছিলেন না। কিন্তু এই গতি আর নিয়ন্ত্রণ দিয়েই নিভে আসা আলোয় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ঝামেলায় ফেলছিলেন মেয়ার্স।

এই মেয়ার্সেরই এক ইনিংস বদলে দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম টেস্টের পঞ্চম দিনে রেকর্ডভাঙা এক ইনিংসে শুধু দলকেই জেতাননি, সবার মধ্যে আত্মবিশ্বাস এনে দিয়েছেন এই অলরাউন্ডার।

যে আত্মবিশ্বাস আজ ঢাকায় দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনে তথাকথিত স্পিন বান্ধব উইকেটেও আগ্রাসী ব্যাটসম্যান বানিয়ে দিয়েছে আলজারি জোসেফকে। সে আত্মবিশ্বাসের জোরেই শ্যানন গ্যাব্রিয়েল মিরপুরের উইকেটে শেষ বিকেলেও ঘন্টায় ১৪০ কিলোমিটারের ওপর বল করছিলেন।

আত্মবিশ্বাসী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় দিনটা শেষে মিরপুর টেস্টে চালকের আসনেই থাকল। প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৪০৯ রানের জবাবে বাংলাদেশ দিন শেষ করেছে করেছে ৪ উইকেটে ১০৫ রানে। ৬ উইকেট হাতে নিয়ে স্বাগতিক দল এখনো পিছিয়ে ৩০৪ রানে। ক্রিজে দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম (২৭*) ও মোহাম্মদ মিঠুন (৬*)।

চট্টগ্রামে মাত্র এক পেসার নিয়ে নামায় সমালোচনা হয়েছিল বাংলাদেশ দলের। কিন্তু তাতে টিম ম্যানেজমেন্টের বয়েই গেছে। এমনিতেই মিরপুরের উইকেট স্পিনারদের বাড়তি সুবিধা দেয়। সে উইকেটে পেসার নয়, স্পিনারকেই তুরুপের তাস ভেবেছে বাংলাদেশ।

তামিম দারুণ শুরু করেও ফিফটি করার আগেই ফিরেছেন।

কিন্তু সেটির ফল? প্রথম ইনিংসে উইন্ডিজের দশ উইকেটের পাঁচটি পেয়েছেন পেসাররা! ২০১০ সালের পর ঘরের মাঠে এই প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট পেলেন বাংলাদেশের পেসাররা। মূল পেসার আবু জায়েদ পেয়েছেন ৪ উইকেট। আর ওপেনার কাম মিডিয়াম পেসার সৌম্য সরকার তো কালই উইকেট পেয়েছেন।

পেসারদের সাফল্যগাথা মানেই যে স্পিনাররা ব্যর্থ—এমনটা ভাবা ঠিক না। তবে মিরপুরে প্রথম ইনিংসে অন্তত তাদের সফলও বলা যাচ্ছে না। তাইজুল ৪ উইকেট নিয়েছেন, মিরাজ সেঞ্চুরিবঞ্চিত করেছেন এনক্রুমা বোনারকে।

কিন্তু যে দাপট স্পিনাররা দেখাবেন বলে এক পেসার নিয়ে নেমে পড়েছে বাংলাদেশ, তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি স্পিনারদের বোলিংয়ে। ভয়ংকর বাঁক নেয়নি কারও বল। কারও অনিয়মিত বাউন্সে ভয় পেতে দেখা যায়নি জশুয়া দা সিলভা কিংবা জোসেফদের। তবু ভাগ্য ভালো, দিনের সেরা বলটি দা সিলভার জন্য রেখে দিতে পেরেছিলেন তাইজুল। তাই ৮ রানের জন্য প্রথম সেঞ্চুরি পাওয়া হয়নি উইন্ডিজ উইকেটকিপারের।

স্পিনারদের পারফরম্যান্সকে যদি ‘মোটামুটি ভালো’ রেটিং দেওয়া হয়, তবে বাংলাদেশের টপ অর্ডারের ব্যাটিংকে বলতে হবে ‘ভীষণ ব্যর্থ।’ একটু আগেই যে উইকেটে সফরকারী দলের আলজারি জোসেফ ৮২ রানের ইনিংস খেলেছেন, সে উইকেটেই ‘নাই’ হয়ে গেল বাংলাদেশের টপ অর্ডার।

চা-বিরতির পর নেমেছিল বাংলাদেশ। প্রথম দুই বল খেলে প্রান্ত বদল করেছিলেন তামিম। অন্যপ্রান্তে যেতে না যেতেই সঙ্গী হারালেন। গ্যাব্রিয়েলের টানা তিন বল খেলেই অস্থির হয়ে উঠলেন সৌম্য। চতুর্থ বলেই কী করতে চাইলেন, সেটা বোঝা গেল না। শুধু টের পাওয়া গেল, শর্ট মিড উইকেটে ফিল্ডারের হাতে নিরীহদর্শন এক ক্যাচ তুলে দিয়ে এসেছেন। আফগানিস্তানের কাছে ঘরের মাঠে হারের স্বাদ পাওয়ার পর এই প্রথম টেস্ট ক্রিকেট খেলতে নামা সৌম্য ফিরেছেন শূন্য রানে।

সৌম্য ব্যর্থ আরেকবার।

সৌম্য খেলেছেন চার বল, ওদিকে ঠিক চার রান করেই ফিরেছেন তিনে নামা নাজমুল হোসেন। গ্যাব্রিয়ের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলটা ব্যাটের সামনে পেয়ে চার মেরেছিলেন লং অফ দিয়ে। পরের বল অফ স্টাম্পের একটু বাইরে ছিল। আগের মতোই ব্যাট চালালেন। জায়গায় দাঁড়িয়ে শট খেলার ফল, গালিতে ক্যাচ।

এরপর কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওভারেই রাকিম কর্নওয়ালকে ছক্কা মেরে যে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তামিম, সেটাই ইনিংসজুড়ে ধরে রেখেছেন। ইতিবাচক ক্রিকেটে দ্রুত রান তুলছিলেন। অধিনায়ক মুমিনুলও ভালোই খেলছিলেন।

কিন্তু ৫৮ রানের জুটি গড়ার পর হঠাৎ ধৈর্যচ্যুতি। কর্নওয়ালের একটু বাইরের বল খেলতে গিয়ে উইকেটরক্ষকের হাতে ধরা পড়লেন মুমিনুল (২১)। দলের রান তখন ৬৯। সেটা ৭১ হতেই বিদায় নিলেন তামিমও। আলজারি জোসেফকে ফ্লিক করতে গিয়ে ওপেনিং সঙ্গীর মতোই শর্ট মিড উইকেটে ধরা পড়লেন।

৭১ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর নতুন আলোচনা শুরু হলো। ফলোঅন এড়াতে বাংলাদেশের তখনো ১৩৯ রান দরকার। পারবে কি বাংলাদেশ? ঘরের মাঠে গত এক দশকে কখনো ফলোঅন করতে হয়নি বাংলাদেশকে। সে রেকর্ড অক্ষুণ্ন রাখার দায়িত্বটা পড়েছে মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ মিঠুনের ওপর। দিনের শেষভাগে ২০ ওভার একসঙ্গে কাটিয়ে দিয়ে প্রাথমিক কাজটা সেরেছেন তাঁরা।

রান তোলা নয়, দিন পার করাটাই যে মূখ্য সেটা বুঝতে পেরে দুজনে সেদিকেই মন দিয়েছেন। পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৩৪ রান এসেছে। মুশফিকের ২৭ রানের ইনিংস দেখেছে ৩টি বাউন্ডারি, ইনিংসের মেয়াদ এখন পর্যন্ত ৬১ বলের। সঙ্গীর চেয়ে ২১ রানে পিছিয়ে থাকলেও মুশফিকের সমান বল খেলেছেন মিঠুন।

এখনো ফলোঅন এড়াতেই আরও ১০৫ রান দরকার, এরপর না ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসের রানের কাছাকাছি যাওয়ার চিন্তা। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চিন্তা তো আপাতত সুদূরপরাহত। মুশফিক-মিঠুনদের জন্য কাল আরও বড় পরীক্ষাই অপেক্ষা করছে।