>উচ্চতায় খুব একটা লম্বা না হতে পারেন, তবে দুজনই যে লম্বা ইনিংস খেলতে সিদ্ধহস্ত, ঢাকা টেস্টে সেটি প্রমাণ করে চলেছেন দুই ‘ম’—মুমিনুল ও মুশফিক। বিশেষ করে মুমিনুল। ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরির পর নয় মাস পর তিন অঙ্কের দেখা পেয়েছেন বাঁহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান।
ফিফটির পর ব্যাটও উঁচু করেননি। সেঞ্চুরির পর আহামরি উদ্যাপন করেছেন, সেটিও নয়। সিকান্দার রাজার ফুলটসটা মিড উইকেট দিয়ে বাউন্ডারি মেরে চঞ্চল পায়ে খানিকটা এগিয়ে গেলেন, ড্রেসিংরুমের দিকে ব্যাট উঁচিয়ে ধরলেন। ব্যাট দিয়ে প্যাডে একটা ঘা মারলেন! অন্য প্রান্তের সঙ্গী মুশফিকুর রহিম কাছে আসতেই ধরলেন জড়িয়ে। এই হচ্ছে মুমিনুল হকের সপ্তম টেস্ট সেঞ্চুরি উদ্যাপনের গল্প।
সেঞ্চুরিটা বড় দরকার ছিল মুমিনুলের। দরকার ছিল বাংলাদেশেরও। ‘টেস্ট ব্যাটসম্যান’ তকমা লেগে যাওয়া বাঁহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান এই একটা সংস্করণই তো নিয়মিত খেলেন। সেখানে যদি রান না পান, ভীষণ চাপে পড়তে হয় তাঁকে। এ টেস্টের আগে কেউ কেউ তো প্রশ্নও তুলেছেন, মুমিনুল সবশেষ লম্বা ইনিংস খেলেছেন কবে? কে বলবে, গত ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টেও জোড়া সেঞ্চুরি করেছেন। সমালোচকদের আর দোষ কী, স্মৃতিতে ধুলো তো পড়বেই। গত চার টেস্টের আট ইনিংসে মুমিনুলের রান ৬৯, শূন্য রানেই ফিরেছেন তিনবার। ফিফটি দূরে থাক, সর্বোচ্চ করেছেন ৩৩ রান।
যখন খেলেন, তাঁর খেলা শুধু চেয়ে দেখতে হয়। মুগ্ধ করা সব শট, ২২ গজে তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ চোখে লেগে থাকে অনেকক্ষণ। সেই মুমিনুল যদি খোলসবন্দী হয়ে পড়েন, প্রভাব পড়ে পুরো দলে। অবশেষে মুমিনুল খোলস থেকে বেরিয়ে এলেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ বাঁচানোর ঢাকা টেস্টে করলেন সেঞ্চুরি। তিনে নামা মুমিনুলের কাছ থেকে যখন এমন দ্যুতিময় ইনিংস দেখা যায়, নিঃসন্দেহে উপকৃত হয় পুরো দল। যেটি হয়েছে আজ।
গত ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশের টপ অর্ডারে কী একটা ‘ভাইরাস’ আক্রমণ করেছে। সেই ভাইরাসের আক্রমণে ইনিংসের শুরুতেই ধুপধাপ কয়েকটা উইকেট পড়ে যায়। যেটির ধাক্কা পরে সামলানো যায় না। আজও হয়েছে। ২৬ রানে বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলে ৩ উইকেট। এ ধাক্কা সামলাতে মুমিনুলের যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। শুরুতে তাই একটু নড়বড়ে ছিলেন। সেই কম্পমান অবস্থায় ১৫তম ওভারে চাতারার বলে পয়েন্ট দিয়ে স্ল্যাশ করতে গিয়ে অল্পের জন্য বেঁচে যান। ব্রায়ান চারি যখন সুযোগটা হাতছাড়া করেন মুমিনুলের রান ৯। সকালের সেশন স্বচ্ছন্দে এগোতে পারেননি মুমিনুল, এগোতে পারেনি বাংলাদেশও। প্রথম সেশনটা তাই জিম্বাবুয়ের।
বাংলাদেশ লাগামটা নিজেদের হাতের মুঠোয় নিয়েছে দ্বিতীয় সেশন। স্বপ্নের মতো এক সেশন কাটিয়েছে বাংলাদেশ। কত দিন পর দেখা গেল এমন সুন্দর দৃশ্য। প্রথম সেশনে ৩ উইকেটে ৫৬ করা বাংলাদেশ পরের সেশনে কোনো উইকেট না হারিয়ে যোগ করেছে ১৫৬ রান। আর এটির পুরো কৃতিত্ব মুমিনুল আর মুশফিকুর রহিমের। দুজন ভেঙে দিয়েছেন বাংলাদেশের আগের চতুর্থ উইকেট জুটির রেকর্ড। সেটির সঙ্গেও অবশ্য জড়িয়ে মুমিনুল। গত ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে লিটন-মুমিনুলের চতুর্থ উইকেট গড়ে ১৮০ জুটি। ১০ মাস পর আজ মুশফিককে নিয়ে এটি টপকে গেলেন মুমিনুল। চা বিরতির আগে তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন মুমিনুল, সেঞ্চুরির পথে মুশফিক।
প্রথম সেশনে ছন্দ খুঁজে পেতে একটু সময় নিয়েছেন মুমিনুল। প্রথম ৬৪ বলে করেছেন ২৫ রান। সময় গড়াতে নিজেকে ফিরে পেয়েছেন বাঁহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। পেছনের পায়ে কাট, সামনের পায়ে ভর করে কাভার ড্রাইভ। কখনো সোজা ব্যাটে স্ট্রেট ড্রাইভ। চোখজুড়ানো সব শটে ভেসে আসে স্তুতি, ‘মুমিনুল ইউ বিউটি’! দ্বিতীয় সেশনে ৮৬ বলে করেছেন ৭৭ রান। সেঞ্চুরি করেছেন ১৫০ বলে, স্ট্রাইকরেট প্রায় ৬৭। সেঞ্চুরির পথে বাউন্ডারি মেরেছেন ১২টি, ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে এগিয়ে চলেছেন ইনিংসটা আরও বড় করতে। তাঁকে দারুণ সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছেন মুশফিক। এই দুইয়ে বাংলাদেশের স্কোরটাও হচ্ছে হৃষ্টপুষ্ট। আট ইনিংস পর বাংলাদেশ ২০০ রান পেরিয়েছে। ২০০ কেন, দুই ‘ম’—মুমিনুল-মুশফিক যেভাবে এগোচ্ছেন বাংলাদেশের উচিত জিম্বাবুয়ের কাঁধে রানের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া। সেই বোঝা এত ভারী হবে যে জিম্বাবুয়ে আর উঠেই দাঁড়াতে পারবে না এই মিরপুরে!