মিসবাহর চেয়ে 'বয়স' বেশি শোয়েব মালিকের

শোয়েব মালিক। কাল ম্যাচের এক মুহূর্তে। ছবি: এএফপি
শোয়েব মালিক। কাল ম্যাচের এক মুহূর্তে। ছবি: এএফপি
>

কাল প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন শোয়েব মালিক। হুট করে তাঁকে বিব্রতকর এক প্রশ্ন করে বসেন এক সংবাদকর্মী

দলের কোচ মানেই মনের কোণে ভেসে ওঠে গুরুগম্ভীর কোনো মুখ। ভ্রু কুচকে বিভিন্ন ভুলভ্রান্তি ধরবেন আর তরুণ শিষ্যদের সেসব ভুল শুধরে দেবেন ভারিক্কি চেহারায়। কিন্তু বর্তমানে ক্রীড়াবিদদের ক্যারিয়ার দীর্ঘ হচ্ছে। আর অনেক তরুণ বেশ আগেভাগেই ঢুকছেন কোচিংয়ে। জার্মান ফুটবল ক্লাব আরবি লাইপজিগের কোচ জুলিয়ান নাগেলসমান যেমন ২৮ বছর বয়সে শীর্ষ লিগের কোচ হয়েছিলেন। হফেনহেইমের মূল দলে পেয়েছিলেন তাঁর চেয়ে বয়স্ক পাঁচজন খেলোয়াড়! শোয়েব মালিক ও পাকিস্তান কোচ মিসবাহ-উল-হকের মধ্যকার সম্পর্কটাও কি এমন?

কাল সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে দারুণ খেলেছেন শোয়েব মালিক। তাঁর ৪৫ বলে অপরাজিত ৫৮ রানের ইনিংসে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে পাকিস্তান। বয়স ৩৭ বছর পেরিয়ে গেলেও শোয়েবের যেন কোনো ক্লান্তি নেই। এখনো মাঠে নেমে নিজের সর্বোচ্চটাই দেন। ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনটা হলো তাঁর ক্যারিয়ার নিয়েই। হাসিমুখেই জবাব দিচ্ছিলেন বর্ষীয়ান এ অলরাউন্ডার। কিন্তু হুট করে সেখানে ছন্দপতন ঘটালেন বয়স্ক এক সংবাদকর্মী।

মালিক দারুণ কেতায় পাকিস্তানের বিভিন্ন সংবাদকর্মীদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন। মাঝেমধ্যে মনে হচ্ছিল, তিনি যেন শ্রেণিকক্ষে ক্লাস নেওয়া এক অধ্যাপক। ছাত্রদের পড়াচ্ছেন জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসেবও কষছেন। হঠাৎ এক সংবাদকর্মী প্রশ্ন করতে গিয়ে মালিককে হতভম্ব করে দিয়ে বলে বসলেন, ‘আপনার বয়স তো পাকিস্তান কোচের চেয়েও বেশি।’ আক্কেল গুড়ুম মালিক কিছুটা থতমত। এরপরই হো হো করে হেসে উঠলেন। ওই সাংবাদিক আসলে ‘বয়স’ বলতে কোচ মিসবাহ-উল-হক আর শোয়েব মালিকের ক্যারিয়ারের কথাই বলেছেন। মালিকের অভিষেকের পর যে পাকিস্তান দলে সুযোগ পান মিসবাহ।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মালিকের অভিষেক ১৯৯৯ সালে। পাকিস্তান দলের বর্তমান কোচ ও প্রধান নির্বাচক ৪৫ বছর বয়সী মিসবাহর অভিষেক ২০০১ সালে। এ নিয়ে শোয়েবের জবাবটা ছিল দার্শনিকসুলভ, ‘দেখুন, পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যে বলতে পারে সে সবকিছু শিখে ফেলেছে। শেখার কিন্তু কোনো শেষ নেই। খারাপ সময় যায়, ভালো সময় যায়, ওই শেখার প্রক্রিয়া কিন্তু কোথাও যায় না। আমরা খুব দ্রুতই যে কারও পেছনে পড়ি। একদিনেই আমরা ফলাফল চাই। এভাবে তো হয় না। কাউকে যদি সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে কিছুটা অপেক্ষা করা উচিত। আমাদের মসলা দরকার। কিন্তু দেশের জন্য কিছুটা অপেক্ষা করতে হয়।’

শোয়েব মাত্র অষ্টম ক্রিকেটার হিসেবে চারটি দশকেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন। চারটি ভিন্ন দশক জুড়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার কাজটা বেশ কঠিন। আধুনিক ক্রিকেটে শোয়েব ছাড়া আর যে দুজন কাজটা করেছেন তাঁরা দুজনই উপমহাদেশের—শচীন টেন্ডুলকার ও সনাথ জয়াসুরিয়া। এঁদের আগে এ কাজ করতে পেরেছেন উইলফ্রেড রোডস, ব্রায়ান ক্লোজ, ফ্র্যাঙ্ক উলি, জ্যাক হবস ও জর্জ গান।