>নিউজিল্যান্ড থেকে আসছে কেবল দুঃসংবাদই। চোটাক্রান্ত মোহাম্মদ মিঠুনের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন মুশফিকুর রহিমও। তাঁর খেলা নিয়ে এখন সংশয়। বুধবারের ম্যাচে এখন একাদশ সাজানো নিয়েই দেখা দিয়েছে সমস্যা। জরুরি ভিত্তিতে তাই ওয়ানডে দলে যোগ দিচ্ছেন মুমিনুল হক।
‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ কথাটা খুব খেটে যাচ্ছে এখানে। ওয়ানডে সিরিজের দুই ম্যাচে আশ্চর্য ধারাবাহিকতা বজায় রেখে শোচনীয় পরাজয়ে এমনিতেই বিপর্যস্ত বাংলাদেশ দল, এর মধ্যে আবার দলে হানা দিয়েছে চোট।
এর মধ্যে মোহাম্মদ মিঠুনের চোটের খবর পুরোনো, নতুন যোগ হয়েছেন মুশফিকুর রহিম। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ব্যাটিংয়ের সময় হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পেয়েছেন মোহাম্মদ মিঠুন। প্রথম দুই ম্যাচে রান যা করার তিনিই করেছেন। দুই ম্যাচে দুটি হাফ সেঞ্চুরি। সিরিজে বাংলাদেশের হাফ সেঞ্চুরিও এই দুটিই। সেই মিঠুনকে হারিয়ে ফেলাটাই যথেষ্ট বড় ক্ষতি হতো। এর সঙ্গে মুশফিকুর রহিমকে নিয়েও শঙ্কার কারণে আগামী বুধবারের ম্যাচে বাংলাদেশের একাদশ সাজানো নিয়েই এখন মহা দুশ্চিন্তা।
মুশফিক দ্বিতীয় ম্যাচের সময় পাঁজরের একপাশে ব্যথা অনুভব করেছেন। গতকাল তাঁর সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলেছি, কিন্তু চোটের কোনো আভাসও পাইনি। বরং প্রথম দুই ম্যাচে ব্যর্থতা তৃতীয় ম্যাচে পুষিয়ে দেওয়ার প্রতিজ্ঞাই শুনেছি তাঁর মুখে। হয়তো ভেবেছিলেন, এটা এমন কিছু নয়। আজ সকালে প্র্যাকটিসে গিয়ে আবারও একটু অস্বস্তি বোধ করায় ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নিতে বাধ্য হয়েছেন। দুপুরের দিকে মুশফিক জানালেন, একটু সমস্যা আগে থেকেই ছিল। তাঁর অনুমান, গত ১০ ফেব্রুয়ারি প্রস্তুতি ম্যাচের সময়ই লেগেছে টানটা। তা স্ক্যান করলেই তো জানা যায়, সেটি কতটা গুরুতর।
এই স্ক্যান করা নিয়েই হয়েছে সমস্যা। মোহাম্মদ মিঠুন ও মুশফিকুর রহিম দুজনেরই কাল স্ক্যান করানোর কথা ছিল। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্যি, সিরিয়াল পাওয়া যায়নি! বিস্ময়কর, কারণ বাংলাদেশের সঙ্গে এই অভিজ্ঞতা একটুও মিলছে না বলে। বাংলাদেশে সাধারণ মানুষই টাকা থাকলে যখন ইচ্ছা স্ক্যান করিয়ে নিতে পারেন, আর ক্রিকেটার হলে তো কথাই নেই। জামাই আদরে সেটি করে দেবে যেকোনো হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার। নিউজিল্যান্ডে ব্যাপারটা অন্যরকম। এখানে ডাক্তার দেখানোরই অনেক হ্যাপা। গতকাল ব্যর্থ হওয়ার মিঠুন আর মুশফিক তাই আশা করছেন, আগামীকাল হয়তো স্ক্যান করানো যাবে। সেই স্ক্যান কী বলে, সেটির ওপরই নির্ভর করছে মুশফিকের খেলা না-খেলা।
মিঠুনকে নিয়ে সেই অনিশ্চয়তা নেই। তৃতীয় ওয়ানডেতে তাঁর খেলতে পারার সম্ভাবনা বলতে গেলে শূন্য। ফিজিও প্রাথমিক যে ধারণা দিয়েছেন, বরং বলা ভালো আশা করছেন, তাতে মিঠুনের হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটটা গ্রেড ওয়ান পর্যায়ের। এই আশাবাদ সত্যি হলেও মিঠুনকে কমপক্ষে সাত দিন মাঠের বাইরে থাকতে হবে। আজ দুপুরে টিম হোটেলের সামনে দেখা হওয়ার পর নিজেই বললেন, ‘এখন আশা করছি, প্রথম টেস্টের আগে যেন ফিট হতে পারি।’
অলৌকিক কিছু না হলে মোহাম্মদ মিঠুনকে পাওয়া যাচ্ছে না নিশ্চিত। মুশফিকের স্ক্যানেও যদি গুরুতর কিছু ধরা পড়ে? তাহলে তো বাংলাদেশের একাদশ সাজানোই মুশকিল। শেষ মুহূর্তে সাকিব আল হাসান ছিটকে পড়ার পর এই সফরে বাংলাদেশের ওয়ানডে দল ১৪ জনের। প্রথম দুই ম্যাচে বাইরে থাকা তিনজনই বোলার—দুই পেসার রুবেল হোসেন, শফিউল ইসলাম ও অফ স্পিনার নাঈম হাসান। মিঠুনের বিকল্পই তো নেই, আর মুশফিকও না থাকলে একাদশই তো সাজানো যায় না। এ কারণেই জরুরি ভিত্তিতে কাল ক্রাইস্টচার্চ থেকে উড়িয়ে আনা হচ্ছে মুমিনুল হককে।
বিপিএলের কারণে ওয়ানডে দলের অনেকেই নিউজিল্যান্ডে দেরিতে এসেছেন। সে কারণে একদিনের প্রস্তুতি ম্যাচের এগারোজন পূর্ণ করতে ৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম দলের সঙ্গেই নিউজিল্যান্ডে চলে এসেছিলেন মুমিনুল। এত দিন ওয়ানডে দলের সঙ্গেই ছিলেন। ক্রাইস্টচার্চে দ্বিতীয় ওয়ানডের পর তিনি ও টেস্ট দলের ওপেনার সাদমান বিচ্ছিন্ন হয়েছেন ওয়ানডে দল থেকে। তাঁরা থেকে গেছেন ক্রাইস্টচার্চেই। শুধু টেস্ট দলে আছেন, এমন বাকি চারজনও সেখানে চলে এসেছেন। বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম ছাড়া বাকি তিনজনই পেসার—আবু জায়েদ, খালেদ আহমেদ ও এবাদত হোসেন। তাঁদের অনুশীলন করাতে বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ তাই থেকে গেছেন ক্রাইস্টচার্চে। সঙ্গে ট্রেনার মারিও ভিল্লাভারায়নও। ডানেডিনে তৃতীয় ওয়ানডে খেলার পর বাংলাদেশ দল টেস্ট সিরিজের আগে দুই দিনের একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে আবার তো সেখানেই ফিরবে।
মোহাম্মদ মিঠুনের খেলতে না পারাটা তো মোটামুটি নিশ্চিতই। মুশফিকুর রহিম পারবেন বলেই আশা করছে বাংলাদেশ দল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনিও যদি না পারেন, তাহলে মুমিনুল ওয়ানডেতে আবারও একটা সুযোগ পাচ্ছেন। বেশ কিছুদিন ধরে এমন তালেগোলেই তো তাঁর ওয়ানডে খেলা!