তাসকিনের লক্ষ্য এখন একটাই—নিজেকে আরও ওপরে নিয়ে যাওয়া। এ লক্ষ্যেই আরও পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তিনি। ধারাবাহিকভাবে ভালো করলে এবং নিজেকে আরও উঁচুতে নিয়ে যেতে পারলে আইপিএলে খেলার সুযোগ আবার আসবে বলেই মনে করেন বাংলাদেশের পেসার।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ৮ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি তাসকিন। ডারবানে টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ বড় ব্যবধানে হারলেও ভালো বোলিং করেছেন বাংলাদেশের পেসার। প্রথম ইনিংসে কোনো উইকেট পাননি। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ১১ ওভার বোলিং করে নিয়েছেন ২ উইকেট। ডারবানেই চোট পেয়ে ছিটকে গেছেন সিরিজ থেকে। চোট নিয়ে দেশের বিমান ধরার আগে কথা বলেছেন বাংলাদেশের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর, নিজের আইপিএল–স্বপ্নসহ আরও অনেক কিছু নিয়ে।
বাংলাদেশের ওয়ানডে সিরিজ চলাকালেই আইপিএলের একটি দলে সুযোগ পাওয়ার কথা উঠেছিল তাসকিনের। কিন্তু দেশের হয়ে খেলার জন্য সেই সুযোগে সাড়া দেননি তাসকিন। তবে কোনো একদিন আইপিএল খেলতে চান তিনি। বিষয়টি নিয়ে তাসকিন বলেছেন, ‘একজন খেলোয়াড় হিসেবে আইপিএল খেলা তো সবারই স্বপ্ন। আমারও খুব ইচ্ছা এটি।’ তবে নিজের ইচ্ছার চেয়েও বড় একটা ব্যাপার আছে। তাসকিন বলে চলেন সেই বড় ব্যাপারটি, ‘আমার মায়ের অনেক বড় স্বপ্ন যে আমি একবার আইপিএল খেলব, আমিও চাই। রিজিকে থাকলে খেলতে পারব।’
এবার কেন সুযোগ দুহাত বাড়িয়ে নিলেন না, এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তাসকিন বলেছেন, ‘সিরিজের মাঝখানে এটা তো অসম্ভবই ছিল। আমি টেস্ট দলের খেলোয়াড়। ব্যক্তিগতভাবে আমি টেস্ট খুব উপভোগও করি। যেহেতু সিরিজের মাঝখানে ছিল, কিছু করার ছিল না। ভাগ্যে থাকলে আবার হবে। কারণ, দেশের খেলা খেলেই তো আইপিএলে সুযোগ পেয়েছি। তাই সামনেও সুযোগ পাব বলে আশা করি।’
একটা সময় ছিল, তাসকিনের বলে ধার হারিয়ে গিয়েছিল। গতি থাকলেও লাইন আর লেংথে ছিল সমস্যা। সেই তাসকিনই এখন অনেক গোছানো। বড় দলের বিপক্ষেও করছেন গোছানো আর ভালো বোলিং। কীভাবে নিজেকে বদলাতে পেরেছেন তাসকিন? শুনুন তাঁর কণ্ঠেই, ‘নিজেকে খুব বেশি বদলাইনি, কিছু প্রক্রিয়া বদলেছি। শৃঙ্খলা আর প্রক্রিয়ার দিকে নজর দিয়েছি। আরেকটু সঠিকভাবে সবকিছু করার চেষ্টা করেছি।’
তাসকিন এরপর নিজের লক্ষ্য নিয়ে বলেছেন, ‘স্বপ্ন তো অনেক বড়, অনেক বড় হতে চাই। আরও ভালো জায়গায় খেলতে চাই, আরও ভালো করতে চাই। নিজের স্বপ্ন পূরণের পেছনে দৌড়াচ্ছি আরকি। চেষ্টা করছি ভুলগুলো শুধরে যেন আরও শাণিত হতে পারি। মূল লক্ষ্য, ভবিষ্যতে যেন আরও ভালো করতে পারি। বিশ্বে ভালো কিছু হওয়ার যেহেতু ইচ্ছা আছে, পরিশ্রম তো বেশি করতেই হবে।’
তাসকিন এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাদের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের রহস্যের কথা বলেছেন। ‘আমাদের সবার বিশ্বাস ছিল, আমরা জিততে পারি। কিন্তু জিতবই, এমন আত্মবিশ্বাস ছিল না। আমাদের জয়ের বিশ্বাস জন্মেছিল। কারণ, এর আগেও আমরা ওদের হারিয়েছি। কিন্তু ওদের মাটিতে কখনো জিততে পারিনি। এটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকায় আসার পর আমাদের কোচ, অধিনায়ক, ম্যানেজমেন্ট—সবাই বলেছে যে এ দলটাকে আমরা হারাতে পারি। আমাদের সেই সামর্থ্য আছে এবং সবাই খুব ভালো খেলেছে।’
খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, বাংলাদেশ ছিল স্পিননির্ভর একটা দল। এখন পেসাররাও বাংলাদেশকে ম্যাচ জেতাতে বড় ভূমিকা রাখে, এর সর্বশেষ উদাহরণ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ। ৩৫ রানে ৫ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডে জেতাতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল তাসকিনের। সেই ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন তিনি। জিতেছেন সিরিজ–সেরার পুরস্কারও।
বাংলাদেশের পেসারদের এভাবে ভালো করার রহস্যের কথাও বললেন তাসকিন, ‘আমাদের সাত-আটজন ফাস্ট বোলারের মধ্যে বন্ধনটা খুব ভালো। একজন আরেকজনকে খুব সাহায্য করে। আমরা সবাই আসলে ভাইয়ের মতো। আমাদের সব সময়ই একজন আরেকজনের সঙ্গে কথা হয়। এমনকি ফিজ আইপিএলে খেলতে যাওয়ার পরও তার সঙ্গে আমাদের নিয়মিত কথা হয়। এই বন্ধন তৈরিতে এবং সম্পর্ক ভালো রাখতে সুজন (খালেদ মাহমুদ) স্যার অনেক সাহায্য করেছেন আমাদের।’