>সম্প্রতি তাঁর ফর্ম এত বাজে, নামটা মাহমুদউল্লাহ বলেই চোখে বিঁধছে আরও বেশি করে। টেস্টে তাঁর সর্বশেষ ফিফটির পর ৮ ইনিংসের কোনোটাইতেই ২০ রানও পেরোতে পারেননি। সর্বশেষ ২৭ ইনিংসে মাত্র তিনটি ফিফটি। মাহমুদউল্লাহ নিজে কী ভাবছেন নিজের ব্যাটিং নিয়ে?
সর্বশেষ ৬ ইনিংসের তিনটাতেই শূন্য। বাংলাদেশ টেস্ট দল এখন তার ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের মতো। ব্যর্থতার ভারে নুয়ে পড়ছে। টেস্টে মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিং অনেক দিন ধরেই কথা বলছে না। অবশ্য এটাও ঠিক, টেস্টে মাহমুদউল্লাহ ৯ বছরের ক্যারিয়ারে করেছেনই মাত্র একটা সেঞ্চুরি। কিন্তু সম্প্রতি তাঁর ফর্ম এত বাজে, নামটা মাহমুদউল্লাহ বলেই চোখে বিঁধছে আরও বেশি করে। টেস্টে তাঁর সর্বশেষ ফিফটির পর ৮ ইনিংসের কোনোটাইতেই ২০ রানও পেরোতে পারেননি। সর্বোচ্চ ১৭, মোট রান ৫৮ রান। এই সময়ে তাঁর ব্যাটিং গড় ৭.২৫!
মাহমুদউল্লাহ নিজেও চিন্তিত ব্যাটিং নিয়ে। সবচেয়ে বড় কথা, এই দলের নেতা তিনি। নিজে সামনে থেকে নেতৃত্ব না দিলে বাকিদের উজ্জীবিত করবেন কী করে। এই প্রশ্ন নিজেই নিজেকে করছেন মাহমুদউল্লাহ, ‘আমি সব সময় বিশ্বাস করি, আপনাকে ভালো অধিনায়ক হতে হলে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে। এটি শুধু বিশ্বাস করি না, চেষ্টাও করি মাঠে এবং মাঠের বাইরে যেন আমি এই দিক থেকে এগিয়ে থাকতে পারি। আর আমি যেহেতু সবার আগে একজন ব্যাটসম্যান, সুতরাং ব্যাটিং দিয়ে যেন অবদান রাখতে পারি সেটাও ভাবনার মধ্যে থাকে। যেহেতু গত তিন-চারটি ম্যাচে আমার ভালো কোনো ইনিংস নেই, সুতরাং অবশ্যই আমি পারফরম্যান্স নিয়ে চিন্তা করছি। আমি আমার সেরা চেষ্টাটাই দেব এই ম্যাচে, যেন দলকে ভালো কিছু দিতে পারি।’
৪০ টেস্টের ক্যারিয়ারে একটাই সেঞ্চুরি। ক্যারিয়ারের শুরুতে মূলত আটে ব্যাটিং করলেও এখন নিয়মিত চার-পাঁচে ব্যাটিং করেন। এই ব্যাটিং পজিশনের একজনের ক্যারিয়ার গড় ত্রিশের নিচে হলে সেটার প্রভাব দলের মধ্যেই পড়ে। সর্বশেষ ২৭ ইনিংসেই ফিফটি মাত্র তিনটি। এই সময়ে ব্যাটিং গড় অবশ্য খুব বেশি হেরফের হয়নি মাহমুদউল্লাহর। ক্যারিয়ার গড় ২৯.১৬, গত ২৭ ইনিংসে সেটি ২৫.১৬। অর্থাৎ এই বাস্তবতা মানতে হবে, এটাই মাহমুদউল্লাহর টেস্ট-সামর্থ্য!
মাহমুদউল্লাহ এই টেস্টে নিজেও ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া। আজ অনুশীলনে বাড়তি ঘাম ঝরিয়েছেন। নিজেও বলছেন, ‘অনুশীলনে আমরা অনেক কিছুই চেষ্টা করি। মাঠে গিয়ে কী করি সেটাই দেখার বিষয়। অনুশীলনে সবাই সবার তার দুর্বলতা নিয়ে কাজ করে। আশা করছি আমরা মাঠে গিয়ে আমাদের সেরা দিতে পারব।’
মাহমুদউল্লাহ যেন এখনকার ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রতীক। ওয়ানডেতে দারুণ, টেস্টে ভয়াবহ। গত আট ইনিংসে দল হিসেবেও বাংলাদেশ ২০০ পেরোতে পারেনি। কেন? এর উত্তর মাহমুদউল্লাহও খুঁজছেন, ‘আমার কাছে মনে হয় শৃঙ্খলার অভাবের কারণেই এমনটা হচ্ছে। যেটি আমি আগেই বললাম যে টেস্ট ক্রিকেটে মনোযোগটা অনেক ওপরে থাকতে হবে। তা না হলে পারফর্ম করার সুযোগ অনেক কম। কারণ, স্লো এবং স্পিনিং উইকেটে যেখানে বল হয়তো ঠিকমতো ব্যাটে আসে না, তখন আপনাকে অবশ্যই সেভাবে খেলতে হবে। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে খেলতে হবে। শৃঙ্খলার ব্যাপারটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। টেস্টে আরও ধৈর্য নিয়ে খেলতে হবে।’
টেস্টে ব্যর্থতার আরও একটা বড় কারণ, সিনিয়রদের শূন্যতা জুনিয়ররা পূরণ করতে পারছেন না। সাকিব-তামিমের অনুপস্থিতি এই সিরিজে অনেকের জন্য সুযোগ হয়ে এসেছিল নিজেকে মেলে ধরার। সেটি তরুণেরা ঠিকমতো কাজে লাগাতে পেরেছেন কি?
মাহমুদউল্লাহ অবশ্য মনে করেন, একজন খেলোয়াড় জাতীয় দলে চলে এলেই আর তাঁকে বয়স দিয়ে বিবেচনা করা উচিত নয়, ‘প্রথমত আমি একটি বিষয় বলতে চাই। এখানে আমার সিনিয়র এবং জুনিয়র ইস্যুটা খুব বেশি পছন্দ না। আমরা সবাই যখন খেলি, তখন ১১ জন ক্রিকেটারই সমান অধিকার নিয়ে মাঠে নামি। আপনি হয়তোবা এটি বলতে পারেন যে কারও অভিজ্ঞতা বেশি আবার কারও কম। এরপরেও আমরা যখন আমরা মাঠে নামি তখন সেরা একাদশটি নিয়েই নামি। আর এভাবেই চিন্তা করা উচিত যে আমি ম্যাচ জেতাতে পারব। সেটি ১১ নম্বর ব্যাটসম্যানই হোক, কিংবা বোলারই হোক। অনেক সময় ছোট অবদানও ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। সুতরাং আমি যদি আমার ভূমিকাটি ভালো মতো জানি তাহলে আমার কাছে পারফর্ম করা সহজ হবে বলে মনে হয়।’