এলেন, দেখলেন, জয় করলেন।
শেষ পর্যন্ত শিরোপাও জিতে গেলে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে মাশরাফি বিন মুর্তজার পথচলাটা পুরোপুরি এ রকম বলা যাবে। তবে শিরোপা জেতা না–জেতা পরের ব্যাপার। এখন পর্যন্ত যা করেছেন মাশরাফি, সেটিও-বা এসেই জয় করার চেয়ে কম কী!
অনেক চড়াই-উতরাইয়ের পর টুর্নামেন্টের মাঝপথে জেমকন খুলনা দলে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক। সেই খুলনাকেই কাল বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের ফাইনালে নিয়ে গেলেন মাশরাফি! মাহমুদউল্লাহ, সাকিব আল হাসানদের দলের হয়ে কাল সেমিফাইনালে সবচেয়ে বেশি আলো ছড়িয়ে হয়েছেন ম্যাচসেরা। কীভাবে সম্ভব হলো হঠাৎ এসেই এভাবে ‘বক্স অফিস’ মাতানো গল্প লেখা? ম্যাচ শেষে মাশরাফি তা বলতে গিয়ে জানালেন ২০২০ সাল ক্রিকেটার মাশরাফির জন্য কতটা কঠিন ছিল।
বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে খেলার কথাই ছিল না মাশরাফির। চোটে ছিলেন বলে টুর্নামেন্টের ড্রাফটে ছিল না তাঁর নাম। টুর্নামেন্টের মাঝপথে ফিটনেস প্রমাণ করার পর লটারিতে এসে যোগ দেন তারকায় ঠাসা জেমকন খুলনা দলে। এরপর লিগ পর্বের শেষ দুই ম্যাচে খেলেছেন। দুই ম্যাচেই ভালো বোলিং করেন। রান থামানোর পাশাপাশি দুই ম্যাচেই নেন একটি করে উইকেট।
কিন্তু গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের বিপক্ষে কোয়ালিফায়ার ম্যাচে নেমে কাল নিজের দীর্ঘ টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের অর্জনের খাতায় নতুন একটি অধ্যায় যোগ করলেন মাশরাফি। ৩৫ রানে নিলেন ৫ উইকেট। ছোট সংস্করণের ক্রিকেটে এটিই মাশরাফির প্রথম পাঁচ উইকেট। এর আগে টি-টোয়েন্টিতে মাশরাফির সেরা বোলিং ছিল ১১ রানে ৪ উইকেট। কালকের বোলিং পারফরম্যান্সে ছাড়ালেন টি-টোয়েন্টিতে ১৫০ উইকেটের মাইলফলকও। সাকিব আল হাসানের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে দেড় শ উইকেট নিলেন ৩৭ বছর বয়সী মাশরাফি। সঙ্গে দলকে নিলেন টুর্নামেন্টের ফাইনালে।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারজুড়ে মাশরাফির সাফল্যের মূলে ছিল আঁটসাঁট বোলিং। কালও ম্যাচ শেষে একই কথা মনে করিয়ে দিলেন মাশরাফি, ‘কোনো রহস্য নেই সাফল্যের। শুধু ভালো জায়গায় বল করে যাওয়া... এটাই।’ দীর্ঘদিন পর ক্রিকেটে ফিরে আত্মবিশ্বাসের অভাব হয়নি মাশরাফির। খুলনা দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ ও সাকিব আল হাসানদের প্রেরণা কাজে দিয়েছে মাশরাফির, ‘গত আট-নয় মাস ক্রিকেট খেলা সহজ ছিল না। আমার জন্য আদর্শ ছিল না। তবে দলের সিনিয়র ক্রিকেটাররা আমাকে অনেক আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। শুধু নিজের জায়গাটায় বল করে যাওয়া, এটাই আমি অনেক বছর ধরে করে আসছি। এটাই আত্মবিশ্বাসের একমাত্র কারণ বলা যায়। আমি ঠিক জায়গায় বল করে যেতে পারি। বাকি যা হওয়ার তা তো হবেই।’
সাফল্যের দিন কাল ২০২০ সালের কঠিন সময়ের কথা স্মরণ করলেন মাশরাফি। করোনার সময়টা কারও জন্যই সহজ ছিল না, মাশরাফির পথেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনা। আর তাঁর ক্যারিয়ারজুড়ে বারবার শত্রু হয়ে হানা দেওয়া চোট তো ছিলই!
করোনায় ক্রিকেট ঘরবন্দী হয়ে থাকার দিনগুলোতে অন্য সব ক্রিকেটারের মতো দীর্ঘদিন খেলার বাইরে ছিলেন মাশরাফিও। মার্চে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ ছিল বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টির আগে মাশরাফির শেষ ম্যাচ। এরপর মাশরাফি নিজে হলেন করোনায় আক্রান্ত। পরিবারের সদস্যরাও এতে আক্রান্ত হন। এরপর সুস্থ হয়ে যখন মাঠে ফেরেন মাশরাফি, বাধা হয়ে আসে হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট।
পেছনে ফিরে মাশরাফি বলছিলেন, ‘সময়টা কঠিন ছিল। করোনা পজিটিভ হই। আমি ফিট হওয়ার চেষ্টা করছিলাম। এরপর হ্যামস্ট্রিং চোটে পড়ি। এ সময়টায় আমি লেগে ছিলাম। আত্মবিশ্বাস ছিল এই টুর্নামেন্টটা খেলতে পারব। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, এটাই হয়েছে। এরপর কিছু উইকেট পাওয়ায় নিজে আত্মবিশ্বাস পেয়েছি।’