প্রথম আলোর পক্ষ থেকে একবার মাশরাফি বিন মুর্তজাকে আহ্বান করা হয়েছিল, এমন পাঁচজন ব্যাটসম্যানের তালিকা করুন, যাঁরা আপনাকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছেন কিংবা ক্যারিয়ারে যাঁদের বোলিং করেছেন, এঁদের মধ্যে কাদের সবচেয়ে বেশি কঠিন মনে হয়েছে?
মাশরাফির সেই তালিকায় সবার ওপরে ছিলেন হাশিম আমলা। ২০১৫ সালের ২৯ জুলাই প্রথম আলোয় ‘এক নম্বরে রাখব আমলাকেই’ শিরোনামে বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ক লিখেছিলেন, ‘দেখে হয়তো মনে হয় হাশিম আমলা অত শট খেলে না। কিন্তু আমার চোখে ওকে বল করাই একজন বোলারের জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ। ওভারপ্রতি একটা চার মারবেই। বোলারের ইকোনমি রেট ওখানেই নষ্ট হয়ে যায়। রেকর্ডও তাই বলে। ওয়ানডেতে দ্রুততম হাজার রানের রেকর্ডগুলো দেখেন, প্রায় সবই তো আমলার! আমার কাছে আমলাকে বল করাই সবচেয়ে কঠিন মনে হয়েছে।’
আসলেই ওয়ানডেতে দ্রুততম দুই, তিন, চার, পাঁচ, ছয়, সাত হাজার রানের রেকর্ড আমলারই। আর কত রেকর্ড নিজের করে নেওয়ার সুযোগ ছিল তাঁর। সুযোগটা নিলেন না—১২৪ টেস্ট, ১৮১ ওয়ানডে আর ৪৪ টি-টোয়েন্টি খেলেই গত বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে দিলেন সাবেক প্রোটিয়া অধিনায়ক।
আমলা এবার প্রথমবারের মতো এসেছেন বিপিএল খেলতে। খেলছেন খুলনা টাইগার্সের হয়ে। আজ বিসিবি একাডেমি মাঠে ঐচ্ছিক অনুশীলনের পর একান্ত সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় তাঁকে যেই না মাশরাফির সেই বিশ্লেষণের কথা বলা হলো, হাসলেন। যেন বলতে চাইলেন, তিনি কোনো ‘ভয়ংকর’ ব্যাটসম্যানই নন! অবশ্য ভয়ংকর না বলে আমলাকে একজন ২২ গজের শিল্পীই বলা যায়, ক্রিকেটের যেকোনো সংস্করণেই তাঁর ব্যাটিং চোখে অদ্ভুত প্রশান্তি দেয়।
মাশরাফির বিশ্লেষণ বিনয়ের সঙ্গে এড়িয়ে গেলেন, ঠিক আছে। ক্যারিয়ারজুড়ে তো অনেক বোলারকে ভুগিয়েছেন, তা তাঁকে কোন কোন বোলার বেশি ভুগিয়েছেন?
আমলা: পাকিস্তানের মোহাম্মদ আসিফ, যে ফাস্ট বোলারদের আমি খেলেছি, তাদের মধ্যে সে আমাকে বেশি অস্বস্তি দিয়েছি। ওর অ্যাকুরেসি দুর্দান্ত। নতুন ও পুরোনো বলে তাকে খেলা সব সময়ই কঠিন ছিল। স্পিনারদের মধ্যে মুত্তিয়া মুরালিধরন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়লেও এখনো পেশাদার ক্রিকেট ছাড়েননি। যখন খেলা একেবারেই ছাড়বেন, কোচিংয়ে জড়ানোর ইচ্ছে আমলার, ‘ব্যাটসম্যানদের নিয়ে কাজ করার আগ্রহ আছে। ক্রিকেট ছাড়ার পর যদি সুযোগ আসে তরুণ ব্যাটসম্যানদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আছে। তাদের সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে ভালো লাগবে। আশা করি সেটা তাদের কাজে দেবে।’
শুধু খেলোয়াড় হিসেবেই নন, মানুষ হিসেবেও অসাধারণ আমলা। তিনি কথা বলেন বিনয়ের সুরে, নরম স্বরে, ধীরস্থির গুছিয়ে। আমলাকে দেখলে যে প্রশ্নটা মনে জাগবেই, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলে খেলেছেন, রাজ্যের ক্রিকেটীয় ব্যস্ততার মধ্যে সমান্তরালে ধর্মীয় জীবনটাও কী দারুণ এগিয়ে নিয়েছেন। ধর্ম ও পেশাগত জীবনের এই ভারসাম্য তিনি নিখুঁতভাবে কীভাবে রক্ষা করছেন, সেটি আরেকবার বললেন আমলা, ‘এখানে একেবারেই কঠিন কিছু দেখি না। যখন কেউ ভালো কিছুর নিয়ত করে, তখন যেভাবে হোক সেটা সে করবে। এখানেও তাই। আমার কাছে কখনোই কঠিন মনে হয়নি দুটির ভারসাম্য রাখতে। যদি মন থেকে চান এটা করবেন, ইনশা আল্লাহ সেটা পারবেন।’
আমলার জীবনদর্শন এটাই—আগে মন থেকে চাইতে হয়। মনই যদি না চায়, কাজ সফলভাবে করবেন কী করে?
* হাশিম আমলার সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত থাকছে কাল প্রথম আলোর মুদ্রিত সংস্করণে