তাঁকে টেলিভিশনে অনেক দেখেছেন। তাঁর ছবি দেখেছেন অনেক। আর গল্প তো কতই শুনেছেন। কিন্তু সামনাসামনি দেখা এই প্রথম, যে সুযোগটা হয়তো এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক না হলে কখনোই পেতেন না মাশরাফি বিন মুর্তজা।
পরশু বিকেলে বিশ্বকাপের আরও ৯ অধিনায়কের সঙ্গে একই বাসে চড়ে মাশরাফি গিয়েছিলেন বাকিংহাম প্যালেসে। মহারানির বাড়িতে মহারানির নিমন্ত্রণে। ইংল্যান্ডের রানি দ্বিতীয় কুইন এলিজাবেথ শুভকামনা জানিয়েছেন তাঁর দেশে অতিথি হয়ে আসা বিশ্বকাপ অধিনায়কদের। হাত মিলিয়ে কুশল বিনিময় করেছেন। এক দিন পরও কয়েক মিনিটের সে অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে রোমাঞ্চিত শোনাল বাংলাদেশ অধিনায়কের কণ্ঠ, ‘আসলে ওনাকে তো আগে কখনো সামনাসামনি দেখিনি। টেলিভিশনে বা ছবিতেই দেখেছি। এই প্রথম সামনে দাঁড়িয়ে কথা বললাম। আমার কাছে এমনিতে এসব বিশেষ কিছু না হলেও এই অভিজ্ঞতা একটু অন্য রকম। ওনাদের প্রতি সম্মান তো সবারই আছে।’
রাজবাড়িতে গিয়ে রানির দর্শন ছাড়া পরশু সন্ধ্যায় লন্ডনের ‘দ্য মলে’র ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯ ওপেনিং পার্টিটাকে তেমন কিছুই মনে হয়নি মাশরাফির, ‘খুবই সাদামাটা একটা অনুষ্ঠান ছিল। আমাদের মধ্যে মরগান, কোহলি আর ফিঞ্চকে কিছু সময়ের জন্য স্টেজে তুলেছে। গান-টান হয়েছে।’
লন্ডনে বাংলাদেশ দলের ঠিকানা টেমস নদীর পাড়ের পার্ক প্লাজা রিভারব্যাংক হোটেল। তবে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ, লেস্টারের অনুশীলন শিবির এবং কার্ডিফের প্রস্তুতি ম্যাচ পর্বের পর ক্লান্ত ক্রিকেটারদের বেশির ভাগকেই এখনো টানতে পারেনি টেমস। মাশরাফি যেমন কাল সারা দিনই কাটিয়ে দিলেন হোটেলে। অন্য ক্রিকেটারদের বেশির ভাগও বিশ্রামেই ছিলেন। লিটন দাস, আবু জায়েদ, সৌম্য সরকার আর মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে দেখা গেছে হোটেল থেকে বের হতে। কারও টুকটাক শপিং ছিল, কেউ হয়তো শুধু ঘুরতেই বেরিয়েছেন।
পরশু দুপুরের পর থেকে দিনভর হওয়া ঝিরঝিরে বৃষ্টি কাঁপন ধরিয়েছিল শরীরে। সেই ভেজা লন্ডন শহর কাল সকাল থেকে রোদে ঝলমল। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী দিনটা তাতে হয়ে থাকল বেশ উষ্ণ। এর মধ্যেই ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ দিয়ে শুরু হয়ে গেল ইংল্যান্ডের মাটিতে পঞ্চম বিশ্বকাপ। তা প্রথম ম্যাচ থেকে বাংলাদেশ দল কি কিছু নিল?
বিশ্বকাপে এবার সবাইকে সবার সঙ্গে খেলতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তো বাংলাদেশ খেলবে ২ জুন নিজেদের প্রথম ম্যাচেই! তাদের একটু বুঝে নিতে ছুটির দিনে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের অনেকেই চোখ রেখেছেন বিশ্বকাপের সূচনা ম্যাচে।
খেলাটা প্রথম বল থেকে যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা একটা ইতিহাসেরও সাক্ষী হয়েছেন। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ৪৪ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম টুর্নামেন্টের প্রথম ওভার করলেন একজন স্পিনার। এই প্রথম বিশ্বকাপ শুরু হলো একজন স্পিনারের হাত দিয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসির ইমরান তাহিরের হাতে বল তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বলে দিচ্ছে, বিশ্বকাপটা ইংল্যান্ডে হলেও ইংলিশ কন্ডিশন এখানে কেউই আশা করছে না।
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান লিটন দাসের দর্শন অবশ্য বরাবরই একটু অন্য রকম। তাঁর কাছে গতিময় বা মন্থর উইকেট বলে কিছু নেই। ভালো খেললে সবটাই ভালো, খারাপ খেললে সবটাই খারাপ। সাম্প্রতিক ম্যাচগুলো লিটনকে বিশ্বকাপের জন্য করছে আত্মবিশ্বাসী। কাল হোটেল থেকে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের বলছিলেন, ‘আমরা সবশেষ যে ম্যাচগুলো খেলেছি সবগুলোতেই ৩০০-এর কাছাকাছি রান করেছি। যদি ৩০০-এর বেশি রান তাড়া করতে হয়, আমরা সে লক্ষ্য নিয়েই খেলব।’
আজ সকালে ওভালে অনুশীলন করবে বাংলাদেশ দল। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে যাদের চোখ, প্রথম ম্যাচের আগে অনুশীলনটা তারা কী লক্ষ্য নিয়ে করবে, তা কারোরই অজানা থাকার কথা নয়। লিটন বলছিলেন, ‘প্রথম ম্যাচ বলেই নয়, শেষ ম্যাচ হলেও আমরা জেতার কথা চিন্তা করতাম। এখানে এসেছি তো জেতার জন্যই।’
উইকেটে রান আছে। আবহাওয়া অসহনশীল নয়। যেটুকু অস্বস্তি ছিল, সেটিও এত দিনে চলে গেছে। তার মানে প্রতিপক্ষ হিসেবে সামনে শুধু প্রতিপক্ষ দলটাই থাকবে, সেটি দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত বা আফগানিস্তানই হোক। লক্ষ্যপূরণে তাই একমাত্র শর্ত ভালো খেলা। সেটিকেও কোনো সমস্যা মনে করছেন না লিটন। তবে জরুরি মনে করছেন ফিল্ডিং ভালো করাটাকে, ‘আমরা সব দিক দিয়ে মোটামুটি ভারসাম্যপূর্ণ দল। ফিল্ডিংটা যদি আরও গুছিয়ে উঠতে পারি, তাহলে ভালো হবে। ব্যাটিংয়ে এখানে রান উঠবে। বোলাররা মার খাবে। ফিল্ডিংয়ে কিছু রান বাঁচাতে পারলে সেটা আমার জন্য প্লাস পয়েন্ট হবে।’
লন্ডনে এসে এখনো দলের সবার একসঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বসা হয়নি। বসলে বোলিং, ফিল্ডিং, ব্যাটিংয়ের বাইরে আরও অনেক করণীয়ও নিশ্চয়ই জানবেন ক্রিকেটাররা। আর জানবেন রানি এলিজাবেথের কথা। বাংলাদেশের ক্রিকেটের ‘রাজা’ নিশ্চয়ই ইংল্যান্ডের রানির গল্প শোনাবেন তাঁদের।