লর্ডসেই কি শেষ মাশরাফির? একটা অধ্যায় তো অবশ্যই শেষ। আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শেষ হচ্ছে বাংলাদেশের এবারের বিশ্বকাপ। শেষ হচ্ছে মাশরাফি বিন মুর্তজার বিশ্বকাপও। আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, এবারের পর বিশ্বকাপ আর খেলবেন না। পাকিস্তানের বিপক্ষে এ ম্যাচই তাই বিশ্বকাপে তাঁর শেষ ম্যাচ।
তবে আরও কিছুদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলবেন বলে কদিন আগে প্রথম আলোকে তিনি নিজেই বলেছিলেন। কাল পর্যন্ত তাঁর সে চিন্তায় কোনো পরিবর্তনের কথা শোনা যায়নি। বরং বিশ্বকাপের পরপরই শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠেয় তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের আলোচনায় অধিনায়ক মাশরাফি ভালোভাবেই আছেন। বড় কোনো চমক না ঘটে গেলে তাই এই বিশ্বকাপ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে তাঁর অবসরের সম্ভাবনা কম। তবে হ্যাঁ, ঘনিষ্ঠ মহলে মাশরাফি নাকি বলেছেন, বিশ্বকাপ শেষে দেশে ফিরে বিষয়টি নিয়ে আরও ভাববেন তিনি।
কাল মাঠে এসেও মাশরাফির অনুশীলন না করা এবং সংবাদ সম্মেলনে না আসা গুঞ্জনের ডালপালা ছড়িয়ে দিয়েছে। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট আছে। ফর্মটাও ভালো যাচ্ছে না বিশ্বকাপে। সাত ম্যাচের মাত্র একটিতেই পুরো ১০ ওভার বোলিং করেছেন। এর মধ্যেই ৩১৫ রান দিয়ে পেয়েছেন মাত্র ১ উইকেট। মাঠে তাঁর ফিটনেসের অভাবও প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে কখনো কখনো। তাহলে কি এখন মাশরাফিও বিদায়ের ডাক শুনতে পাচ্ছেন! সে জন্যই শেষ বেলায় হঠাৎ সবকিছু থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া! দলের একটি সূত্র অবশ্য ব্যাপারটা সে রকম নয় বলেই নিশ্চিত করেছে। শারীরিকভাবে ভালো বোধ করছিলেন না বলেই নাকি কাল তিনি অনুশীলন করেননি, এড়িয়ে গেছেন সংবাদ সম্মেলনও।
কিন্তু অধিনায়ক যেহেতু, খেলাটা তো চালিয়ে যেতে হবে। মাশরাফি সেটিই চালিয়ে যাচ্ছেন। ফর্মের কথা যদি বলেন, সে প্রশ্নের উত্তর তো আগেই দিয়েছেন কোচ স্টিভ রোডস। মাশরাফির বিকল্প কাকে নেবেন তিনি! কাল রোডসের সংবাদ সম্মেলনে আবারও এল মাশরাফির প্রসঙ্গ। এবার একটু অন্যভাবে। বিশ্বকাপে আজ শেষ ম্যাচ খেলবেন তিনি। ড্রেসিংরুম এতে কতটা আবেগাক্রান্ত? কোচের উত্তর, ‘ও যেহেতু বলেই দিয়েছে, এটি তার শেষ বিশ্বকাপ, ব্যাপারটা তার জন্য আবেগের। মাশরাফির পরিস্থিতি আমিও বুঝতে পারছি। তবু চাই সবাই ক্রিকেটে মনোযোগী থাকুক। আশা করি ছেলেরাও তাদের খেলার মাধ্যমে তাকে যথাযথ সম্মান দেখাবে। তবে সবকিছুর পর আমাদের খেলায়ই মনোযোগটা রাখতে হবে।’
বিশ্বকাপে মাশরাফির বিদায়ী ম্যাচ নিয়ে আবেগ দলে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না বলে বিশ্বাস কোচের। মাশরাফি নিজেও এ ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্ক। বিশ্বকাপের মধ্যে তাই এড়িয়ে চলেছেন অবসর-প্রসঙ্গ। ‘এটা দলকে কোনোভাবেই প্রভাবিত করছে না। সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের চাপ নিতে এখন অভ্যস্ত দলটা। কাজেই এটা কোনো সমস্যাই নয়, ’ বলেছেন বাংলাদেশ দলের ইংলিশ কোচ।
একটার পর একটা চোট, হাঁটুতে সাতবার অস্ত্রোপচার-ক্যারিয়ারজুড়ে লড়াই মাশরাফির নিত্যসঙ্গী। তবু প্রতিবারই ফিরে এসেছেন দারুণভাবে। চোট থেকে ফেরা ক্রিকেটারদের ‘ব্র্যান্ড নেম’ই যেন হয়ে গেছেন মাশরাফি! স্টিভ রোডস সে কারণেই তাঁকে বলেন ‘সাহসী যোদ্ধা’। দলের জন্য যুদ্ধে নামেন মাশরাফি, ‘খেলোয়াড়েরা তাকে দারুণ সম্মান করে। আমি তো তাকে সাহসী যোদ্ধা বলি। মানুষও সেটা বোঝে এবং তার এই মানসিকতাকে শ্রদ্ধা করে। তাকে এ জন্যই ভালোবাসে। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড়েরাও তাকে ভালোবাসে।’ অবশ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে মাশরাফির অবসরের প্রসঙ্গে নিজের কোনো মতামত দেননি রোডস। বিষয়টা ছেড়ে দিতে চাইলেন মাশরাফির ওপরই, ‘বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে মাশরাফিই এটা ঠিক করবে। আমিও সেটিই ঠিক মনে করি।’ কোচ চান চিন্তা-ভাবনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা মাশরাফিই নিন। তাঁর প্রতি এই সম্মানটুকু অন্তত দেখাক সবাই।
বয়স প্রায় ৩৬ হয়ে গেছে। ক্যারিয়ারজুড়ে শরীরে বহন করা চোট-আঘাতের প্রতিশোধ তো আছেই। সব মিলিয়ে সামর্থ্যে ভাটার টান মাশরাফি নিজেও যে উপলব্ধি করেন না, তা নয়। তা ছাড়া খেলা আর জাতীয় দলের নেতৃত্বের সঙ্গে যোগ হয়েছে নিজ এলাকার সংসদ সদস্যের দায়িত্ব। রাজনীতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়া মাশরাফির জন্য যে আরেকটি বিশ্বকাপ পর্যন্ত ক্যারিয়ার টেনে নেওয়ার সুযোগ নেই, সেটি তাঁর চেয়ে ভালো আর কে বুঝবেন। ক্রিকেটকে কখন বিদায় বলতে হবে, সেটি নিশ্চয়ই তিনিই সবচেয়ে ভালো জানেন।