মাশরাফি বিন মুর্তজার ‘আমরা জিতব’ মন্ত্র বুকে নিয়ে ফাইনালে নেমেছিলেন তামিম ইকবাল। একজন বাংলাদেশি ক্রিকেটার ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়ায় খুশি তিনি
‘অল ক্রেডিট গোজ টু মিস্টার মুর্তজা’—ফাইনাল শেষের সংবাদ সম্মেলনে বসে সাহেবি ঢঙে বাক্যটি বললেন ম্যাচের নায়ক তামিম ইকবাল। ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে ফাইনালে জেতার পেছনে কৃতিত্বটা দিলেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ককে। জয়ের মন্ত্রটা যে তাঁর কাছ থেকেই পাওয়া। মাশরাফি বিন মুর্তজা নাকি যেকোনো পরিস্থিতিতেই সবাইকে বলেন, ‘আমরা জিতব।’ সেই মন্ত্র বুকে নিয়েই কাল মাঠে নেমেছিলেন তামিম। পারবেন বলে ঝাঁপিয়ে পড়ার ফলাফল তো দেখাই গেল। অনবদ্য এক সেঞ্চুরি করলেন, তাঁর দল কুমিল্লা ম্যাচ জিতল। সবকিছুর মূলে ওই ‘আমরা জিতব’ মন্ত্র। কুমিল্লার সব খেলোয়াড়ের বুকে কথাটি গেঁথে দিতে পেরেছিলেন তামিম।
ম্যাচের গতিপথ নির্ধারণ করে দেওয়া ওই সেঞ্চুরির পথেও তামিম একই মন্ত্র জপেছেন প্রতি মুহূর্তে। তবে এমন সৌন্দর্যে মোড়া প্রলয়ের মতো ইনিংস কীভাবে খেললেন? সেটি নাকি নিজেও জানেন না তামিম। দলের সঙ্গে বিপিএলের শিরোপা উৎসবের প্রথম পর্ব শেষ করে সংবাদমাধ্যমকে বললেন, ‘আমি এখনো স্বপ্নের ঘোরে আছি। নিজেও জানি না কীভাবে ব্যাট করলাম। পরে গিয়ে খেলার হাইলাইটস দেখে হয়তো বলতে পারব কীভাবে কী হলো!’
এই ঘোরে শুধু তামিমই নন, পুরো কুমিল্লা দলই মাতোয়ারা ছিল কাল মধ্যরাত পর্যন্ত। জয় নিশ্চিত হতেই দৌড়ে মাঠে ঢুকে পড়লেন ডাগ আউটে থাকা ক্রিকেটার, কোচিং স্টাফের সদস্যরা। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল নেমে এসে একে একে বুকে জড়িয়ে ধরছেন শহীদ আফ্রিদি, থিসারা পেরেরা, ওয়াহাব রিয়াজদের। ততক্ষণে মাঠ প্রদক্ষিণ শেষ করেছেন দলের বাকি খেলোয়াড়েরা। তামিম ইকবালকে দেখে তাঁর দিকে এগিয়ে গেল ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তাদের ছোটখাটো জটলাটা। তাঁকে বুকে টেনে নিলেন মুস্তফা কামাল। কুমিল্লার দ্বিতীয় বিপিএল শিরোপা জেতানোর নায়ককে হয়তো ধন্যবাদ দিতে চাইলেন। তামিমও জানালেন ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতার কথা। তিনি কুমিল্লা ও চিটাগংয়ে খেলার সময় প্রাপ্য সম্মানটুকু পেয়েছেন, সেটি জানাতে ভোলেননি।
কাল তামিম সব দায় মিটিয়ে দেওয়ার অমন ইনিংস না খেললে কী হতো কে জানে! অমন দাপুটে সেঞ্চুরিতে ম্যাচের সুরটাই যে বেঁধে দিয়েছিলেন তামিম। সেদিক থেকে তামিমের জন্যও সেঞ্চুরিটা বিশেষ হওয়ারই কথা। সেটি ম্যাচ শেষে স্বীকারও করলেন, ওমানের বিপক্ষে করা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেঞ্চুরির চেয়েও এগিয়ে রাখলেন কালকেরটি, ‘প্রতিটি সেঞ্চুরিই বিশেষ কিছু। সেটা যেকোনো দলের বিপক্ষেই হোক না কেন। ওমানের ম্যাচটাতে আমাদের জিততেই হতো। না হলে আমরা টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যেতাম। সেদিক দিয়ে ওটা খুব স্পেশাল। আর আজ (কাল) ঢাকার সব বোলারই বিশ্বমানের। আবার এমন একটা বোলিং লাইনআপ হয়তো অনেক জাতীয় দলেও থাকে না। তাঁদের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করাটাও বিশেষ। তবে আমি আজকের এই সেঞ্চুরিটাকেই এগিয়ে রাখব।’
নিজে সেঞ্চুরি করেছেন, দল শিরোপা জিতেছে—এমন একটা দিন সারা জীবনই মনে গেঁথে থাকার কথা তামিমের। ষষ্ঠ বিপিএলের ফাইনালটা তামিমের কাছে বিশেষ আরও একটি কারণে, ‘যে ব্যাপারটা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ, এই ম্যাচের গতিপথ নির্ধারণ করে দিতে পেরেছে একজন বাংলাদেশি ক্রিকেটার।’ ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টিতে বিদেশি ক্রিকেটারের ওপর নির্ভরতা যেখানে স্বাভাবিক, সেখানে একজন দেশি ক্রিকেটারের কাছে এ-ও তো এক বড় পাওয়া।’
তামিমের এমন খুশির দিনে তাঁর বন্ধু সাকিব আল হাসানের কষ্টই পাওয়ার কথা। টানা তৃতীয়বার ফাইনালে উঠে, টানা দ্বিতীয়বারই হেরে গেলেন তিনি। আগেরবার রংপুর রাইডার্সের ক্রিস গেইল আর এবার তামিমের সেঞ্চুরি যে শিরোপা কেড়ে নিয়েছে তাঁদের হাত থেকে। সাকিব মজা করেই বললেন, ‘গতবার গেইল ১৪৬ রান করল, আমরা হেরে গেলাম। এবার তামিম ১৪১ রান করল, আমরা হেরে গেলাম। পরেরবার এমন পরিস্থিতি হলে কেউ যেন সেঞ্চুরি না করে ফেলে, সেই চেষ্টা করতে হবে।’
আরও পড়ুন...