মাশরাফি ছন্দে নেই। ৩ ম্যাচের একটিতেই ১০ ওভারের কোটা পূরণ করেছেন। আজ সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফিকে উত্তর দিতে হলো নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে
বাংলাদেশ দল আজ যখন কাউন্টি মাঠে অনুশীলন করতে এল, কী ঝলমলে রোদ্দুর। অনুশীলন শেষ হতেই মেঘেদের দল দখল করে নিল ব্রিস্টলের আকাশ। টিম বাস ধরার আগে সেই মেঘলা আকাশের দিকে উদ্বেগভরা দৃষ্টিতে তাকালেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। ‘কাল বৃষ্টি হলে অনেক বড় সমস্যা আমাদের জন্য’—শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বৃষ্টিতে ম্যাচ ভেসে গেলে পয়েন্ট টেবিলের হিসাবটা বড় কঠিন হয়ে যাবে, মাশরাফির কপালে চিন্তার ভাঁজ তো থাকবেই।
৭ জুন এই ব্রিস্টলেই পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার ম্যাচটা ভেসে গেছে। বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে কালও। ২০১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে নিউজিল্যান্ড আর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচ হারের পর বাংলাদেশ চোখ রেখেছে শ্রীলঙ্কার দিকে। লঙ্কানদের বিপক্ষে সাম্প্রতিক সময়ের দুর্দান্ত রেকর্ড আর কন্ডিশনটা যেহেতু দুই দলেরই অপরিচিত—বাংলাদেশ লক্ষ্য ঠিক করেছে, ম্যাচটা তাদের জিততেই হবে। মাঠের লড়াইয়ে কী হবে পরের কথা, খেলাটা তো আগে নির্বিঘ্নে হতে হবে।
ব্রিস্টলের আবহাওয়া নিয়ে চিন্তা যেমন আছে, চিন্তা আছে দলের বেশির ভাগ সিনিয়র খেলোয়াড়কে নিয়েও। সাকিব আল হাসান বাদে কেউই যে ছন্দে নেই। ছন্দে নেই স্বয়ং অধিনায়ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। এমনকি আজ সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক প্রশ্নই করে বসলেন, নিজের ভূমিকা নিয়ে কিছু বলুন, আপনি কিছু ম্যাচে নিজের বোলিং কোটাও পূরণ করছেন না, যার ফলে বাকিদের ওপর চাপ পড়ছে। ধেয়ে আসা বাউন্সারটা মাশরাফি ডাক করলেন এভাবে, ‘গত চার-পাঁচ বছরে আমার অধিনায়কত্বে বহুবার আমি বোলিং কোটা পূর্ণ করিনি। ওই সময়ে কে ভালো করছে সেটার ওপর নির্ভর করে ব্যাপারটা।’
১৮ বছরের ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্ত দাঁড়িয়ে প্রশ্ন শুনতে হচ্ছে নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে। ক্যারিয়ারের শেষ টুর্নামেন্টের শুরুটা ভালো না হওয়ায় মাশরাফিকে বিঁধছে সমালোচনার তির। এমন প্রশ্নে তিনি ভেঙে পড়তে পারতেন, হতাশ হতে পারতেন। কিন্তু এসবের কিছুই তাঁকে স্পর্শ করছে না। কোথায় কী সমালোচনা হচ্ছে, সেটি নিয়ে তিনি চিন্তিত নন। চিন্তা তাঁর নিজেকে নিয়েই।
ব্রিস্টলের এ সংবাদ সম্মেলনে নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে বিশদ ব্যাখ্যাই দিলেন মাশরাফি, ‘হতাশ একেবারেই না। আপনি যখন পেশাদার জীবনে থাকবেন, যখন সেরাটা দিতে পারবেন না, প্রশ্ন উঠবে। খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। এটা মেনেও নিতে হবে। আমার কাছে মনে হয় প্রথম দুই ম্যাচে উইকেটে যেমন ছিল বেশির ভাগ পেসারদের ইকোনমি ৬, সাড়ে ৬ হয়ে যাচ্ছিল। ওখানে যদি স্পিনারদের দিয়ে কাজ হয় তবে তাদের বেশি ব্যবহার করতেই হবে। গত ম্যাচে আমার ১০ ওভার করা প্রয়োজন ছিল, করেছি। ৮-৯ ওভার পর্যন্ত সবই ঠিকঠাক হয়েছিল। ভালো সময়-খারাপ সময় থাকে। নিজের কাছে আমি আরও বেশি প্রত্যাশা করি। ম্যাচ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে চাই। সেটি না হলে নিজেই নিজের কাছে প্রশ্ন করি। মানুষ কে কী বলল, সেটার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমি নিজে কী অনুভব করছি। সেরাটা না দিতে পারলে মানুষের চেয়ে নিজেরই বেশি খারাপ লাগে।’
মাশরাফি আরও বলতে পারতেন, গত দুই বছরে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সেরা দুই বোলারের একজন আমি! এ সময়ে ২৮ ম্যাচে মোস্তাফিজুর রহমান ৪৩ উইকেট নিয়েছে, আমি ৩৪ ম্যাচে ৩৫। মাশরাফি এটাও বলতে পারতেন, ২০১০ সালে এই ব্রিস্টলে ইংল্যান্ডকে যে হারিয়েছিলাম, ওটার ম্যাচসেরা ছিলাম আমি!
কিছুই বললেন না। টিম বাস ধরার আগে শুধু বললেন, ‘ধুর, ওসব বলে লাভ আছে! কাল উইকেটে যদি আবার খারাপ করি, মানুষ কি আর ২০১০ মনে করবে?’