>ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আজ কার্ডিফে বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচ খেলতে নামবে বাংলাদেশ। সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলামের মতে, এটি এবারের বিশ্বকাপে মাশরাফিদের সবচেয়ে কঠিন ম্যাচ
২০১৯ বিশ্বকাপে আজ খুব সম্ভবত সবচেয়ে কঠিন ম্যাচটি খেলতে নামছে। শক্ত প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। এ মুহূর্তে ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দল। আজ বাংলাদেশ কেমন খেলবে, সেটার ওপরই নির্ভর করছে অনেক কিছু। ইংলিশরা শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও বাংলাদেশ অবশ্যই লড়াই করবে। প্রথম ম্যাচেই আমরা দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছি। নিউজিল্যান্ডকে আর একটু হলেই হারিয়ে দিতাম! লড়াইয়ের আত্মবিশ্বাসটা অবশ্যই বাংলাদেশ দলের আছে। এখন অপেক্ষা কেবল নিজেদের খেলাটা খেলা। ক্রিকেটাররা সেটি খেললেই কিন্তু অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া যায়।
পয়েন্ট টেবিলে বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড দুই দলই একই অবস্থানে আছে। দুই দলেরই একটি করে জয়, হার একটি করে। নিজেদের অবস্থান এগিয়ে নিতে আজ ইংলিশরা থাকবে মরিয়া। আগের ম্যাচেই তারা পাকিস্তানের কাছে হেরেছে। হারটা তাদের কাছে ছিল অপ্রত্যাশিত। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি বাংলাদেশের কিছুটা সুবিধা করে দিয়েছে বলে আমি মনে করি। ফেবারিট হিসেবে পাকিস্তানের কাছে হারটা যেহেতু অপ্রত্যাশিত ছিল, তাই আজ ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া হয়ে এউইন মরগানের দল যথেষ্ট চাপে থাকবে। অন্যদিকে, অনেকটা নির্ভার হয়েই মাঠে নামবে বাংলাদেশ।
দুই দলের বিশ্লেষণ মোটামুটি সবাই জানেন। বাংলাদেশ স্পিননির্ভর দল। ব্যাটিংনির্ভর তো অবশ্যই। ইংলিশদের ফাস্ট বোলিংটা বিরাট শক্তি। ব্যাটিংও। বাংলাদেশের সঙ্গে ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ে একটা জায়গায় পার্থক্য আছে। যেটি ওদের এগিয়ে রেখেছে। ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা মেরে খেলতে পারেন। ওঁদের দলে এমন কয়েকজন ব্যাটসম্যান আছেন, যাঁরা ব্যাট হাতে একাই ম্যাচের চেহারা বদলে দিতে পারেন। আমাদের ব্যাটসম্যানরা ভালো করলেও বাজে সময়ে আউট হয়ে যাওয়ার প্রবণতা আছে, যেটি কাটিয়ে ওঠা যাচ্ছে না। ফাস্ট বোলিংয়ে তো এখন পর্যন্ত আমরা তেমন কিছুই করতে পারিনি। ব্যাটিং লাইন অবশ্য দুই দলেরই যথেষ্ট লম্বা।
গত ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা বড্ড বেশি উইকেট ছুড়ে দিয়ে এসেছেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের স্কোরকার্ডটা দেখুন, ব্যাটসম্যানদের প্রায় সবাই শুরুটা করেছেন। শেষটা করতে পারেননি। ২০-এর ঘরে অনেকেই আছেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আগে ব্যাটিং করলে বড় সংগ্রহ দাঁড় করাতে হবে। পরে ব্যাটিং করলে বড় সংগ্রহ তাড়া করেই জিততে হবে। তাই কার্ডিফে আজকের ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের জ্বলে ওঠাটা খুব জরুরি।
বোলাররা দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের সময়মতো আউট করতে পেরেছেন বলেই আমরা ম্যাচটা জিতেছি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে বোলাররাই লড়াইটাকে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়েছেন, কিউদের ৮ উইকেট ফেলে দিয়ে। কিন্তু তারপরেও বাংলাদেশের বোলিংটাকে কেন ‘আপ টু দ্য মার্ক’ মনে হচ্ছে না। আগেই বলেছি, এখন পর্যন্ত মাশরাফি বিন মুর্তজা, মোস্তাফিজুর রহমান আর সাইফউদ্দিনের সমন্বয়ের গড়া পেস আক্রমণ প্রতিপক্ষকে কাঁপতে পারেননি। আজ কার্ডিফের উইকেটে যদি পেস বোলারদের জন্য অল্প কিছুও থাকে, তাহলে রুবেল হোসেনকে একটা সুযোগ দেওয়া যেতে পারে বলে আমি মনে করি, সেটি যদি একজন ব্যাটসম্যান কমিয়ে হয়, তাই-ই সই।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফিল্ডিংটা হতে হবে দুর্দান্ত। নিউজিল্যান্ড সেদিন আমাদের হারিয়েছে ফিল্ডিং দিয়েই। দুই রকম ক্রিকেট আছে। একটি ‘ইনার ক্রিকেট’ অন্যটি ‘আউটার ক্রিকেট’। ব্যাটিং, বোলিং হচ্ছে ইনার ক্রিকেট। ফিল্ডিং ও রানিং বিটুইন দ্য উইকেট হচ্ছে আউটার। আমাদের দলের আউটার ক্রিকেটে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। জফরা আর্চার, মার্ক উড, লিয়াম প্লাংকেট, ক্রিস ওকসদের বোলিংয়ের সামনে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা চাপে থাকবে, কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সেই চাপ তারা কাটাতে পারে প্রচুর সিঙ্গেলস নিয়ে। এটা বাধ্যতামূলক। সিঙ্গেলস দিয়েই এই বোলারদের ঘায়েল করতে হবে। ক্লান্ত, বিষণ্ন করে দিতে হবে। ৩০ গজ বৃত্তের মধ্যে রান বাঁচানোটাও জরুরি। এই বৃত্তে ফিল্ডারদের দাঁড়াতে হবে একটু ওপরের দিকে। ২৫ গজের মধ্যে। নিউজিল্যান্ডে সেদিন এই কাজটিই করেছে।
কঠিন ম্যাচ, সন্দেহ নেই। তবে বাংলাদেশ এমন অনেক কঠিন ম্যাচই জিতেছে। এউইন মরগান তো কাল বলেই ফেলেছে, আমাদের সিনিয়র খেলোয়াড়দের সমীহ করে তারা। আমাদের সিনিয়ররা ওদের সিনিয়রদের চেয়ে অভিজ্ঞ। সেই অভিজ্ঞতাই কাজে কাজে আসুক। নিজেদের উজাড় করে দিন মাশরাফি, তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহরা।