একটা চাপা গুঞ্জন চারদিকে ছিল, করোনাভাইরাস মহামারিতে দিশেহারা একটা দেশ কঠিন এ সময়ে কেন আইপিএলের মতো একটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করছে? কাল এটা আর চাপা থাকেনি। প্রশ্নটি সামনে নিয়ে এসেছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, দেশের এমন দুঃসময়ে আইপিএল কেন আয়োজন করছে ভারত? মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে কাল ম্যাচ জয়ের পর রাজস্থান রয়্যালসের দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার ক্রিস মরিস অবশ্য বললেন, এমন দুঃসময়ে মানুষের মুখে হাসি ফোটাতেই আইপিএল চলছে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে জেরবার ভারত। সংক্রমণের হার তো বেড়েছেই, মৃত্যু বেড়ে গেছে আগের তুলনায় অনেক গুণ। ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাব। শ্বাসকষ্টে ভুগছে রোগীরা, ভুগতে ভুগতে মৃত্যুর মুখেও ঢলে পড়ছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে বিভিন্ন রাজ্য কিংবা শহরে চলছে কারফিউ। লকডাউন দিয়ে সংক্রমণ কমানোর প্রস্তুতি চলছে। এমন সময়েই কি না আইপিএল চলছে মহাসমারোহে।
বিষয়টি ভালো লাগেনি অস্ট্রেলিয়ার সাবেক উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান গিলক্রিস্টের। তিনি টুইট করেছেন, ‘এ মুহূর্তে ভারতে কোভিড পরিস্থিতি খুবই বাজে। এ অবস্থায় আইপিএল চালিয়ে যাওয়াটা কতটুকু ঠিক?’ এই প্রশ্ন তুলে মরিস বলার আগেই তাঁর মনের কথাগুলো বলে দিয়েছেন গিলক্রিস্টই, ‘নাকি এই আইপিএলই কঠিন সময়ে ভারতের মানুষকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিচ্ছে! যেটিই হোক ভারতীয়দের জন্য আমার শুভকামনা সব সময়ই থাকবে।’
৪ ওভার বোলিং করে ২৩ রান ৪ উইকেট নেওয়া মরিস কাল ম্যাচ শেষে ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে গিলক্রিস্টের সুরেই কথা বলেছেন। সংবাদ সম্মেলনের পরও তিনি ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে রাজস্থান দলের পক্ষ থেকে বলেছেন, ‘একটা দল হিসেবে আমরাও গত দুই দিন এ বিষয় নিয়ে অনেক কথা বলেছি। পুরো দেশে না হলেও এ মহামারি ভারতের বিভিন্ন এলাকায় কত ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, সেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি।’
দেশের যখন এমন বাজে অবস্থা, এ সময়ে আইপিএল আয়োজন করা কতটা যুক্তিযুক্ত? মরিস মনে করেন এবারের আইপিএলে রাজস্থানসহ সব দলই যে আসলে এ দুঃসময়ে মানুষের মনে একটু শান্তি দেওয়ার লক্ষ্যে খেলছে, সেটাই বললেন মরিস, ‘একটা দল হিসেবে আমরা শুধু বলতে চাই এই মহামারি ঠেকাতে সারা বিশ্বে সম্মুখসারির যোদ্ধারা কাজ করছে। তাঁরা রাতদিন এক করে দিয়ে মানুষের জন্য অসাধারণ করে যাচ্ছেন। একটা দল হিসেবে আমরা সারা বিশ্বের মানুষের কষ্টটা বোঝার চেষ্টা করি।’
শুধু ভারতেই নয়, পুরো পৃথিবীতে করোনাভাইরাস মানুষের জীবনে কী অবর্ণনীয় কষ্ট বয়ে এনেছে, সেটাও অনুধাবন করতে পারার কথা বলেছেন মরিস, ‘চারদিকে যা হচ্ছে, তা অনুধাবন করতে পারাটা খুবই কঠিন এক ব্যাপার। এসবের মধ্যে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে মুখে হাসি নিয়ে খেলে যাওয়া। আমাদের হাসার অনেক কারণও আছে।’
মরিস এখানেই থামেননি। করোনাভাইরাসের প্রকোপে এলোমেলো হয়ে যাওয়া মানুষদের জন্য নিজের অনুভূতির কথা বলে চলেন রাজস্থানের পেসার, ‘আমরা আশা করি, পর্দার ওপারের মানুষদের আনন্দে রাখতে পারব। আমরা জিতি বা হারি, মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর এটা একটা সুযোগ। আমাদের এই চেষ্টা যদি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারে, তাহলে বুঝতে হবে একটা খেলা হিসেবে আমরা খুব ভালো কিছু করছি।’