ক্যালেন্ডারের পাতায় ১৬ মার্চ দিনটা স্মরণীয় হয়েই থাকবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য দিনটা যে শোককে শক্তি বানানোর বিশাল এক উপলক্ষ। ভুলে গেলেন? আজ যে সাবেক ক্রিকেটার মানজারুল ইসলাম রানার মৃত্যু দিন! এই দিনটিতেই কলকাতার ইডেন গার্ডেনে নামছেন মাশরাফিরা। প্রিয় বন্ধু রানার কথা স্মরণ করে পাকিস্তানের বিপক্ষে একটু কী বেশিই তেতে থাকবে বাংলাদেশ দল?
আজ থেকে নয় বছর আগে, ২০০৭ সালের এই দিনে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের ক্রিকেট হারিয়েছিল মানজারুল ইসলাম রানার মতো প্রতিশ্রুতিশীল এক তারকাকে। রানার সঙ্গে সেদিন জীবন-নদীর ওপারের বাসিন্দা হয়েছিলেন খুলনা বিভাগীয় দলের আরও এক প্রতিশ্রুতিশীল প্রতিভা সাজিদুল ইসলাম।
মানজার রানা যেদিন প্রাণ হারিয়েছিলেন, হাজার মাইল দূরে তখন অবস্থান ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে তখন চলছে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসর। ২০০৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেকের পর জাতীয় দলে নিয়মিত থাকলেও ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ দলে ছিলেন না রানা। জাতীয় লিগে ভালো করে তিনি তখন জাতীয় দলে ফিরতে ব্যাকুল। কিন্তু ভাগ্য ফিরতে দেয়নি কোথাও। বিশ্বকাপে ভারত ম্যাচের আগের দিন এই ভয়াবহ দুঃসংবাদ বিমূঢ় করে দিয়েছিল গোটা বাংলাদেশ দলকে।
১৭ মার্চ পোর্ট অব স্পেনে এসেছিল সেই ঐতিহাসিক জয়। বাংলাদেশের কাছে ৫ উইকেটে হেরে প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিয়েছিল রাহুল দ্রাবিড়ের ভারত। রানাকে স্মরণ করে হাতে কালো ব্যান্ড নিয়ে মাঠে নামা বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা সেদিন নিজেদের ছাপিয়ে গিয়েছিলেন দুর্দান্ত নৈপুণ্যে।
ব্যাপারটা কাকতাল ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু মাশরাফিসহ পোর্ট অব স্পেনে মাঠে নামা প্রায় সব খেলোয়াড়ই বিশ্বাস করতে ভালোবাসেন, রানার মৃত্যু কোনো না কোনোভাবে সেদিন আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল তাঁদের সবার মধ্যেই। শোককে ‘শক্তিতে’ রূপান্তর করেই ভারতে হারানোর ইতিহাস গড়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।
১৬ মার্চ মাঠে নামলেই বাংলাদেশ জেতে—এমন একটা বিশ্বাস কিন্তু ক্রিকেটপ্রেমীদের মনেও শেকড় গড়েছে। ২০১২ সালে ঢাকায় এশিয়া কাপের কথা মনে আছে? ওই যে শচীন টেন্ডুলকারের শততম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির দিনটি! ভারতের বিরাট সংগ্রহকে ( ২৯০ রান ছিল লক্ষ্য) তাড়া করে কী অনায়াসেই না ৫ উইকেটে ম্যাচটা জিতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর ঢাকায় ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে এই দিনেই আফগানিস্তান ‘জুজু’কে উড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ।
ইডেনে আজ মাঠে নামার আগে মানজারুল ইসলাম রানাকে নিশ্চয়ই মনে পড়বে মাশরাফির। কে জানে, রানা হয়তো খুব করেই থাকবেন বাংলাদেশের প্রতিটি ক্রিকেটারের সঙ্গে!
অতি-প্রাকৃত কিছুতে বিশ্বাস রাখা হয়তো ঠিক নয়। কিন্তু রানার স্মৃতিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এতটুকুতে নিশ্চয়ই বিশ্বাস রাখাই যায়!