আজ স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের আগে আত্মবিশ্বাসী মাহমুদউল্লাহ
আজ স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের আগে আত্মবিশ্বাসী মাহমুদউল্লাহ

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু আজ

মরুর দেশের বিশ্বকাপে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ

স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ।

দিনের উত্তাপটা তখন আর নেই। উল্টো কেমন যেন শীত শীত ভাব। মাসকাটের আল আমেরাত পর্বতমালার ওপারে সূর্যাস্তের রক্তিম আভার দৃশ্যটা যে কারও চোখে আটকে যাবে। একটু পরই মাসকাটের পাহাড়ে নামল আঁধার, জ্বলে উঠল ফ্লাডলাইট। বাংলাদেশ দল আল আমেরাত ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু করল বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের প্রস্তুতি। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে আজ ঠিক এমন সময়ই শুরু হবে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ।

স্টেডিয়ামের পাশেই ওমান ক্রিকেট একাডেমি মাঠ। সেখানে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছিল স্কটল্যান্ড। মূল মাঠে যখন বাংলাদেশ দল গা গরমে ব্যস্ত, স্পষ্ট কানে আসছিল স্কটিশদের ব্যাট-বলের ঠুকঠাক শব্দ। কাগজ-কলমের শক্তি, অভিজ্ঞতা, ক্রিকেট ঐতিহ্য—সব দিক থেকেই বাংলাদেশ দল স্কটিশদের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে। অনুশীলনে মাহমুদউল্লাহদের শরীরী ভাষায় বাড়তি আত্মবিশ্বাসের বিচ্ছুরণ হয়তো সে কারণেই।

মাহমদু্ল্লাহর স্বস্তি আছে সাকিবের ফেরা

আত্মবিশ্বাসী হওয়ার আরেক কারণ হতে পারেন সাকিব আল হাসান। ওমান সীমান্তের ওপারের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আইপিএলের ফাইনাল খেলে কাল সকালেই দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন তিনি। সারা দিন বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যার অনুশীলনে হাজির সাকিব। বাংলাদেশ দলের আরেক স্তম্ভ মুশফিকুর রহিমও অনুশীলনে ছিলেন বেশ চনমনে। পিঠের পুরোনো চোট থেকে সেরে ওঠা মাহমুদউল্লাহ তো আগেই অনুশীলনে ফিরেছেন।

তারুণ্য আর অভিজ্ঞতার মিশেলই এবারের বাংলাদেশ দলকে আগের ছয়টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল থেকে আলাদা করেছে। কাগজ-কলমের হিসাবে এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এমন সুন্দর সমন্বয় নিয়ে মাঠে নামেনি বাংলাদেশ দল। দলটার মধ্যে আছে জয়ের অভ্যাসও। জিম্বাবুয়ের মাটিতে সিরিজ জয়ের পর ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে সিরিজে হারিয়ে বিশ্বকাপে এসেছে বাংলাদেশ দল। ঘরের মাঠের কন্ডিশন কাজে লাগিয়ে পাওয়া এসব জয়কে অবশ্য অনেকে বাঁকা চোখে দেখেছেন। বিশ্বকাপের আগে শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচের হার সেই আলোচনা আবারও উসকে দিচ্ছে।

কাল অবশ্য এসব আলোচনা একগাল হেসে উড়িয়ে দিলেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের শঙ্কা ও সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্নগুলোর সাদামাটা উত্তরই দিয়েছেন তিনি। বিশ্বকাপের উন্মাদনা, রোমাঞ্চ—কিছুই যেন মাহমুদউল্লাহকে স্পর্শ করছিল না। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের আগে দলের মনোজগতের যা একটু ছবি পাওয়া গেল তাঁর এই কথায়, ‘আমরা দুটি প্র্যাকটিস ম্যাচ হারলেও সেটার প্রভাব বিশ্বকাপে পড়বে না। আমাদের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় একাদশে ছিল না। তাই প্রস্তুতি ম্যাচের ফলাফল আমাদের মানসিকতায় প্রভাব ফেলবে না।’

শক্তিতে স্কটল্যান্ডের চেয়ে যোজন ব্যবধানে এগিয়ে বাংলাদেশ

ওদিকে স্কটল্যান্ড দলের আত্মবিশ্বাসটা যেন অনুশীলনে তাদের ব্যাট-বলের ঝংকারের মতোই তীব্র। বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে যে ‘ফেবারিট’ পরিচয়টা উপভোগ করছে, স্কটল্যান্ড সেটিকে পাত্তাই দিচ্ছে না। ২০ ওভারের ক্রিকেটে সাধারণত বড় দল-ছোট দলের ভেদাভেদ কমে আসে। নিজের দিনে যে কেউই এসে তছনছ করে দিতে পারে প্রতিপক্ষের সাজানো পরিকল্পনা। ছোট সংস্করণের ক্রিকেটের এই সৌন্দর্যই স্কটিশদের উঁচু গলায় কথা বলার সুযোগ করে দিচ্ছে।

কাল যেমন স্কটিশ কোচ শেন বার্জার বাংলাদেশ দলকে গ্রুপ ‘বি’র বাকি দুই প্রতিপক্ষ ওমান ও পাপুয়া নিউগিনির সমতলে নামিয়ে এনে হইচইই ফেলে দিয়েছেন, ‘বাংলাদেশই হোক বা ওমান, পাপুয়া নিউগিনি—আমরা যেকোনো দলকে হারাতে পারি। গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলোয় বাংলাদেশকে আমরা পাপুয়া নিউগিনি বা ওমানের চেয়ে ওপরে দেখি না। বাংলাদেশের জন্য আমরাই হব সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ।’

কাল সকালে বার্জারের বলা এই কথা বিকেলের সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদউল্লাহকে শোনানো হলো। এ প্রসঙ্গেও মাহমুদউল্লাহ কথা বললেন নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে, ‘উনি কী বলেছেন, এটা নিয়ে আমি খুব একটা ভাবছি না। আমরা আমাদের সামর্থ্য সম্পর্কে জানি। আশা করি দল হিসেবে আমরা সেরাটাই মাঠে দেব। আমরা প্রতিটি দলকেই সমানভাবে সম্মান করি।’

এই সতর্ক পদক্ষেপ আজ প্রথম ম্যাচেও ধরে রাখতে চাইবেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। কারণ, বাংলাদেশ দলও জানে যে এখানে পা পিছলে গেলেই বিপদ। আর বিপদের শঙ্কা যদি কিছু থাকে, সেটি এই স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচেই বেশি। টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত দুই দলের একবারের সাক্ষাতে যে জিতেছিল স্কটিশরাই! সে জন্য আজ সেরা সমন্বয় নিয়েই মাঠে নামতে চাইবে বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসান দলে যোগ দেওয়ায় সেই সমন্বয়টা খুঁজে পেতে খুব একটা সমস্যাও হবে না। স্পিন কিংবা পেস—কন্ডিশন অনুযায়ী যেকোনো সমন্বয়ের একাদশই সাজাতে পারবেন মাহমুদউল্লাহ-রাসেল ডমিঙ্গোরা।

একটা প্রশ্নে অবশ্য মাহমুদউল্লাহ-রাসেল ডমিঙ্গোরাও একটু ভাবনায় পড়তে পারেন। লিটন দাসের সঙ্গে ইনিংস শুরু করতে নামবেন কে—সৌম্য সরকার, নাকি মোহাম্মদ নাঈম? আবুধাবির প্রস্তুতি ম্যাচ দুটিতেই তিনে নেমে ভালো ব্যাটিং করেছেন সৌম্য। বিশ্বকাপে সাকিব ফেরায় তিনে তাঁরই খেলার কথা। সে ক্ষেত্রে ওপেনিংয়ে লিটনের সঙ্গী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি সৌম্যরই।