আশরাফুল চান ভয়ডরহীন ক্রিকেট
আশরাফুল চান ভয়ডরহীন ক্রিকেট

‘ভয়ডরহীন’ ক্রিকেট খেলুক বাংলাদেশ

স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হারটা মেনে নেওয়া কঠিন। কিন্তু ক্রিকেটে তো এমন হয়ই। এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আমার আছে। ২০০৯ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আমরা আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরে যাই। এমন হারের পর অনুভূতিটা কেমন হয়, সেটি আমি বুঝতে পারছি। তবে অধিনায়ক হিসেবে মাহমুদউল্লাহর এখন ভূমিকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ হারে তো আর আমাদের সব সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি। এখনো দুটি ম্যাচ বাকি আছে। অধিনায়কের উচিত বাকি দুটি ম্যাচের জন্য দলকে উজ্জীবিত রাখা। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হারটা যেন বাকি দুই ম্যাচেও প্রভাব না রাখে, সে বিষয় তার খেয়াল রাখতে হবে।

২১ বছর ধরে টেস্ট পরিবারের সদস্য বাংলাদেশ। স্কটল্যান্ড আইসিসির সহযোগী সদস্যদেশ। দুই দলের খেলায় বিরাট পার্থক্য থাকা উচিত। কিন্তু খেলা দেখে সেটি মনে হয়নি। স্কটল্যান্ডকে বাংলাদেশের সমমানেরই মনে হয়েছে। যে দলে সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহদের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছে, সে দলের সঙ্গে সহযোগী সদস্য স্কটল্যান্ড সমানতালে লড়বে, কখনো কখনো আধিপত্য বিস্তার করবে—এটা মেনে নেওয়া কঠিন। কিন্তু মেনে নিতেই হচ্ছে।

ব্যাটিংটা ইতিবাচক হোক বাংলাদেশের

স্কটল্যান্ডের বোলিং আমার খুব ভালো লেগেছে। অবাক হয়েছি তারা যেভাবে রাতের শিশির মোকাবিলা করে বাংলাদেশের বিপক্ষে দারুণ বোলিং করল, সেটি দেখে। ওরা যখন বোলিং করছিল, তখন শিশির পড়েছে। বল ভিজে যাচ্ছিল, গ্রিপ করা যাচ্ছিল না। কিন্তু তার পরও ওদের বোলিং দেখে মনেই হয়নি যে সমস্যা হচ্ছে।

স্কটল্যান্ড ম্যাচ এখন অতীত। আমাদের সামনে তাকাতে হবে। আজকের ওমান ম্যাচে আমাদের খেলার ধরনটা ‘ভয়ডরহীন’ হওয়া উচিত। হ্যাঁ, ব্যাটসম্যানরা কেউ ফর্মে নেই। কিন্তু তার পরও সর্বনাশ (স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হার) যেহেতু হয়ে গেছে, তাই আমাদের মনোভাব হওয়া উচিত ইতিবাচক। অনেক সময় ভয়ডরহীন ব্যাটিং ব্যাটসম্যানদের ফর্মে ফেরায়। ওমানের বিপক্ষে সেটিই হোক। কিছুদিন আগেই ওমান ‘এ’ দলের বিপক্ষে একটা প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে, সে দলের বেশ কয়েকজন হয়তো বিশ্বকাপ দলে আছে। তাই ওই ম্যাচের কথা মাথায় নিয়ে খেললেই জড়তাটা কেটে যাবে বলে আমি মনে করি।

স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হার যেন ওমানের বিপক্ষে প্রভাব না রাখে

ব্যাটিংয়ের ধরনটা স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে আমার ভালো লাগেনি। ব্যাটসম্যানরা কেমন যেন ভয়ে কুঁকড়ে ছিল। লিটন-সৌম্যর মতো ব্যাটসম্যানরা কী বাজে শট খেলে আউট হলো! সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহরা এত অভিজ্ঞ, কিন্তু ওদের ব্যাটিংয়ে সেই অভিজ্ঞতার ছিটেফোঁটাও পাওয়া গেল না। আমাদের ব্যাটসম্যানদের একটা জিনিস একেবারে মাথায় গেঁথে ফেলতে হবে। সেটি হচ্ছে, তারা কেউই পাওয়ার হিটার নয়। তাদের শক্তির জায়গা গ্যাপ বের করে খেলা। তারা সেটিই করুক। আমাদের ব্যাটসম্যানরা ছক্কা মারার চেয়ে গ্রাউন্ড শটে বাউন্ডারি মারার দিকেই মনোযোগী হোক, সিঙ্গেলস বের করুক। তাহলেই হবে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মানেই যে তুলে তুলে মারতে হবে, ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয়। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বাউন্ডারি লাইনে কয়টা আউট হয়েছে, দেখুন। মাসকাটের মাঠটা কিন্তু বড়, এটা খুব সম্ভবত ব্যাটসম্যানরা ভুলে গিয়েছিল।

স্কটল্যান্ড আগে ব্যাটিং করে একপর্যায়ে ৫৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল। সেখানে থেকে যেখানে এক শ করাই কঠিন হওয়ার কথা, ওরা ১৪০ করে ফেলল! ম্যাচে আমরা সেখানেই পিছিয়ে গিয়েছি বলে মনে করি। বোলিং আরও শাণিত হওয়া প্রয়োজন। স্পিনাররা, বিশেষ করে মেহেদী হাসান খুব ভালো বোলিং করেছে। খুবই বুদ্ধিদীপ্ত ছিল তার বোলিং, মেহেদী, সাকিবের সঙ্গে যদি তাসকিনরাও একটু বুদ্ধি খাটিয়ে বোলিং করত, তাহলে ম্যাচটা আমরাই জিতি। যা–ই হোক, ওমানের বিপক্ষে এই ভুলগুলো শোধরাতে হবে। এ ম্যাচে নাসুমকে সুযোগ দিলে ভালো হয় বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি।

অভিজ্ঞরা নিজেদের উজাড় করে দিক

ক্রিকেটপ্রেমীরা বাংলাদেশকে নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছিলেন দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ড সিরিজ বিচার করেই। কিন্তু ওই দুটি সিরিজে যে উইকেটে খেলা হয়েছে, সেটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য আদর্শ ছিল না—এটা আমি আগেও বলেছি। সিরিজ দুটিতে অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং তাদের সর্বনিম্ন মানেরও নিচে ছিল, এটা ধরে নিয়েও বলছি, সে সিরিজে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের অবস্থাও ছিল শঙ্কা-জাগানিয়া। কোনো ব্যাটসম্যানই রান পাননি। সে বিচারে আমাদের পরবর্তী প্রস্তুতিটা অন্য রকম হওয়া উচিত ছিল। টিম ম্যানেজমেন্ট কীভাবে ভেবেছে, সেটি তো আর জানি না, তবে আমি মনে করি, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আদর্শ প্রস্তুতি কখনোই হয়নি।

যা–ই হোক, আজ ওমানের ম্যাচটা জিতুক বাংলাদেশ। বড় ব্যবধানে দাপটের সঙ্গেই জিতুক। আপাতত এটাই চাই। সেই সঙ্গে চাই সাহসী ক্রিকেট। একমাত্র সাহসী ক্রিকেটই পারে আমাদের এ অবস্থায় উদ্ধার করতে—ক্রিকেটাররা মাথায় রাখুক বিষয়টা।