ভালোবাসা যখন জাগায় শঙ্কা

সাকিবের জন্য ফুল নিয়ে মাঠে সেই দর্শক। ছবি: শামসুল হক
সাকিবের জন্য ফুল নিয়ে মাঠে সেই দর্শক। ছবি: শামসুল হক
সাকিবকে ফুল উপহার দিতে মাঠে ঢুকে পড়লেন এক দর্শক। শুধু ফুলই উপহার নন স্যালুটই দিলেন। তবে এই কাণ্ডের মাশুল দিতে হচ্ছে তাঁকে। পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে তাঁকে।


১০৭তম ওভারের বোলিং শুরু করতে গিয়েও থেমে গেলেন সাকিব আল হাসান। দেখলেন এক যুবক দৌড়ে আসছে তাঁর দিকে। তাঁর হাতে এক তোড়া লাল গোলাপ। যুবকটি সাকিবের কাছে এসেই দিলেন এক স্যালুট। ২০১৬ সালের অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুরে টেস্টে এভাবেই স্যালুট দিয়েছিলেন বাঁ হাতি অলরাউন্ডার।

স্যালুটেই শেষ নয়। আকস্মিক মাঠে ঢুকে পড়া দর্শকটি হাঁটু গেড়ে লাল গোলাপ উপহার দিতে চাইলেন সাকিবকে, যেভাবে প্রেমিকাকে দিয়ে থাকে প্রেমিক! বোলিং করতে এসে ফুল উপহার! সাকিব তো কিছুতেই নেবেন না। বাংলাদেশ অধিনায়ক বারবার তাঁকে অনুরোধ করতে থাকলেন দ্রুত মাঠের বাইরে চলে যেতে। কে শোনে কার কথা! লাল টুপি, নীলচে শার্ট পরা নাছোড় যুবকটি সাকিবকে ফুল দিয়েই ছাড়লেন। করমর্দনও করলেন। আম্পায়ার নাইজেল লংয়ের কাছে ফুলের তোড়াটা দিয়ে সাকিব বোলিং প্রান্তে ফিরলেন। বিসিবির নিরাপত্তাকর্মী এসে ওই দর্শককে নিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত খেলা থেমে থাকল ৩-৪ মিনিট।

মাঠে ঢুকে পড়া দর্শকের নাম ফয়সাল আহমেদ। বাসা শহরের এনায়েত বাজারে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মেজর (অব.) হোসেন ইমাম অবশ্য পরিষ্কার বলতে পারলেন না মাঠে কীভাবে, কোন পাশ দিয়ে ঢুকে পড়েছেন ফয়সাল, ‘আমরা তদন্ত করে দেখছি। তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে পাহাড়তলী থানায় নেওয়া হয়েছে।’

সাকিব ফুলটা নিলেন ঠিকই, মৃদ্যু ভর্ৎসনাও করলেন তিনি সেই দর্শককে। ছবি: শামসুল হক

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম কিংবা সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের তুলনায় জহুর আহমেদের কাঠামো একটু ভিন্ন। পুরো মাঠই প্রায় ১৫ ফুট উচ্চতার লোহার বেষ্টনী দিয়ে ঘেরা। এই বেষ্টনী পেরিয়ে একজন দর্শক কীভাবে মাঠে ঢুকে পড়ে, কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছেন না নিরাপত্তাকর্মীরা। বিসিবির গ্রাউন্ডস বিভাগের ব্যবস্থাপক আবদুল বাতেন বললেন, ‘ক্রেজি দর্শক, বোঝে না কাজটা ঠিক না।’

আন্তর্জাতিক ম্যাচ চলার সময় বাংলাদেশের মাঠে দর্শক ঢুকে পড়া অবশ্য নতুন নয়। গত বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেট টেস্টেই মুশফিকুর রহিমকে ছুঁয়ে দেখতে দর্শক ঢুকে পড়েছিল দুবার। ২০১৬ সালে মিরপুরে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচে মাশরাফি বিন মুর্তজাকে জড়িয়ে ধরতে ঢুকে পড়েছিল আরেক দর্শক। সেবার ইংল্যান্ড সিরিজের আগে এ ঘটনা ভীষণ স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট।

বারবার মাঠে ঢুকে পড়ার ঘটনা হয়তো অবুঝ সমর্থকের কাছে অনেক বড় প্রাপ্তি মনে হতে পারে। কিন্তু আইসিসির কাছে তা নিরাপত্তার লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হতে পারে। যার প্রভাব পড়তে পারে ভেন্যুর ওপর, আয়োজক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ওপরেও। এ কারণেই প্রশ্ন উঠছে, বিসিবি ও পুলিশ মিলিয়ে মাঠে প্রায় ৮০জন নিরাপত্তাকর্মীর চোখ ফাঁকি দিয়ে দর্শক কীভাবে মাঠে ঢুকে পড়ে?

সাকিবের প্রতি মাঠে ঢুকে পড়া সেই দর্শকের স্যালুট। ছবি: শামসুল হক

এখানে দায়িত্ব আছে দর্শকদেরও। খেলা চলার সময়ই কেন খেলোয়াড়দের কাছে যেতে হবে? হয়তো অশুভ কোনো ইচ্ছা নেই, এটা শুধুই নিষ্কলুষ আবেগের প্রকাশ। আবার অনেক সময় দর্শকেরা নিখাদ আবেগের বশে এ কাজ করেন, এমনও না। কেউ আলোচিত হওয়ার জন্যও করেন। এখন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার নেশা মানুষকে কী-ই না করাচ্ছে। যে উদ্দেশ্যেই মাঠে ঢুকুন, কোনো দর্শকের আবেগের প্রকাশের চড়া মূল্য হয়তো দিতে হতে পারে বাংলাদেশকে।