বিরাট কোহলি।
বিরাট কোহলি।

ভারত কোহলির দল, চালাচ্ছেন রবি শাস্ত্রী

ভারত দলের খেলায় দিন দিন গুণমুগ্ধের সংখ্যা বাড়ছে। মাঠ, কন্ডিশন, কিংবা খেলোয়াড়—কোনো কিছু নিয়েই এখন আর ভাবে না দলটি। আগ্রাসী ক্রিকেট খেলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ার জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করতে প্রস্তুত এ দল। অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি টেস্ট সিরিজে প্রথমে পিছিয়ে পড়েও যেভাবে দাপট দেখিয়ে সিরিজে জিতেছে তারা, তাতে এ সময়ের সেরা দল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে ভারত। এ দুই দলের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজও জিতেছে ভারত।

এরপর গত পরশু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতেও নিজেদের দাপট দেখিয়েছে ভারত। তিনশোর্ধ্ব স্কোর তাড়া করতে নেমে প্রথম ১৪ ওভারে ৯–এর ওপর রানরেট ছিল ইংল্যান্ডের। ম্যাচের বাকি সময় ওভারে ৬ রানও দরকার ছিল না সফরকারীদের। এ অবস্থা থেকেও ম্যাচ বের করে এনেছে ভারত। অধিনায়ক বিরাট কোহলি নিজে ইতিবাচক ক্রিকেটার। তাঁর অধীনে ভারত দলের বাকিরাও কখনো নেতিবাচক চিন্তা মাথায় চেপে বসতে দেন না।

মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো সর্বজয়ী এক অধিনায়কের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেওয়া কোহলি ভারতকে নিজের দল বানিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু অজয় জাদেজার ধারণা, দল অধিনায়কের হতে পারে, কিন্তু এই দলকে চালাচ্ছেন দলটির কোচ রবি শাস্ত্রী।

কোহলি-শাস্ত্রী সম্পর্ক বরাবরই উষ্ণ।

অজয় জাদেজা বর্তমানে ক্রিকেট বিশ্লেষক বনেছেন। ধারাভাষ্যেও দেখা যায় নিয়মিত। ফলে ভারতের খেলা নিয়মিত দেখতে হয় তাঁকে। দলটির মানসিকভাবে এমন বদলে যাওয়াটাও সামনে থেকেই দেখেছেন জাদেজা। তাঁর ধারণা, ভারত যে ইদানীং এভাবে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলছে, এর পেছনে মূল অবদান শাস্ত্রীর।

১৯৯২ সালে শাস্ত্রীর সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছিল জাদেজার। সে সুবাদে শাস্ত্রীর মানসিকতা, খেলার ধরন ও চিন্তার দিকটা জানা আছে তাঁর। আর সে অভিজ্ঞতাই তাঁকে বলছে, এই দুর্দান্ত ভারত দলটি শাস্ত্রীর কারণেই এমন দুর্দমনীয় হয়ে উঠেছে।

ক্রিকবাজের সঙ্গে এক ভিডিও বার্তায় জাদেজা বলেছেন, ‘শেষ পর্যন্ত দলটা কোহলির। কিন্তু এ দলকে চালাচ্ছেন রবি শাস্ত্রী। দলের আকাঙ্ক্ষাটা শুধু আজ (পরশু) নয়, তিন-চার বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে। ম্যাচের ফলাফল যা-ই হোক না কেন, খেলার ধরনে কোনো বদল নেই। এবারও সেটাই হয়েছে। পার্থক্য হলো মানসিকতায়।’

অজয় জাদেজা।

খেলোয়াড়ি জীবনে ভারতের সে সময়ের অন্য সব ক্রিকেটারের চেয়ে এই দিকটাতেই আলাদা ছিলেন শাস্ত্রী—এমনটাই জানালেন জাদেজা, ‘তাঁর শট খেলার ধরন ভিন্ন ছিল। আর আগ্রাসনের দিক থেকে শাস্ত্রী একেবারে শীর্ষ মানের ছিলেন। তাঁর ব্যাটিংয়ের ধরন, অধিনায়কত্ব আর যেভাবে আগ্রাসী চিন্তা করতেন, সে দক্ষতা অনন্য ছিল। কখনো হার মানতেন না।’

শাস্ত্রী দ্বিতীয়বার কোচ হয়ে আসার পর থেকেই ভারতের পরিসংখ্যান উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। শাস্ত্রী যোগ দেওয়ার পর টেস্টে ৪৬ ম্যাচের মধ্যে ২৮টিতেই জিতেছে ভারত। এই সংস্করণে দেশটির সবচেয়ে সফল কোচ এখন শাস্ত্রী। ওয়ানডেতে ৯১ ম্যাচে ৫৭ জয় তাঁর ভারতের। অর্থাৎ শাস্ত্রীর অধীনে ৬২.৬৪ শতাংশ ম্যাচেই জয় পায় ভারত। শুধু একটাই আক্ষেপ, আইসিসির কোনো শিরোপা জেতা হচ্ছে ভারতের।

এ দলকে চালাচ্ছেন রবি শাস্ত্রী। দলের আকাঙ্ক্ষাটা শুধু আজ (পরশু) নয়, তিন-চার বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে। ম্যাচের ফলাফল যা-ই হোক না কেন, খেলার ধরনে কোনো বদল নেই।
অজয় জাদেজা, ভারতের সাবেক ক্রিকেটার

জাদেজার ধারণা, এই বাধাও কাটিয়ে উঠবে ভারত দল। কারণ, দলের মধ্যে যে দৃঢ় মানসিকতার বীজ পুঁতে দিয়েছেন শাস্ত্রী, এমন মানসিকতা ভারতের আগের প্রজন্মের খেলোয়াড়েরা কল্পনাও করতে পারতেন না, ‘এই দল ও এই প্রজন্মের মধ্যে এই ভাবনাটা (ইতিবাচক মানসিকতা) বেশ তীব্রভাবে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। খেলোয়াড়েরা কী ভাবে, তাদের হাতে কী সুযোগ আছে...। এখন কিছু খেলোয়াড় ঢুকছে, কেউ আবার বেরিয়ে যাচ্ছে। এখন হাতে এত বেশি বিকল্প আছে যে আগের পদ্ধতির লোকজন মানসিক ভারসাম্য হারাত।’

আগামী জুনে লর্ডসে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল। নিউজিল্যান্ডকে সে ম্যাচে হারাতে পারলেই শাস্ত্রীর অধীনে আইসিসির কোনো ট্রফি না জেতার আক্ষেপ দূর হবে ভারতের।