ব্যাটিং ব্যর্থতাই দলে জায়গা অনিশ্চিত করে দিয়েছে ঋদ্ধিমানের।
ব্যাটিং ব্যর্থতাই দলে জায়গা অনিশ্চিত করে দিয়েছে ঋদ্ধিমানের।

ভারতের ‘৩৬’–এ বলির পাঁঠা বাংলার ঋদ্ধিমান?

অ্যাডিলেড টেস্ট জিততে চেয়েছিল ভারত। কিন্তু উল্টো দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৬ রানে গুটিয়ে গিয়ে আড়াই দিনে হেরেছে বিরাট কোহলির দল। কিছুদিন আগেও বিশ্বের শীর্ষ টেস্ট দলের তকমা লাগানো দলের এমন বিপর্যয় লজ্জাজনকই। সে কারণেই মেলবোর্নে পরের টেস্টের আগেই গণহারে বদল আসতে পারে দলে।

এরই মধ্যে টিম ম্যানেজমেন্ট একাধিক বৈঠক করে রদবদলের বিষয়টি নিশ্চিত করে ফেলেছে বলে খবর ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের। তবে ব্যর্থতার মিছিলে বাংলার উইকেটরক্ষক–ব্যাটসম্যান ঋদ্ধিমান সাহার নামটি যেন একটু বেশিই আলোচিত হচ্ছে। কোনো কোনো গণমাধ্যম তো বলছে, অ্যাডিলেডেই খুব সম্ভবত ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টটি খেলে ফেলেছেন এই বাঙালি ক্রিকেটার।

সৌরভ গাঙ্গুলীর পর ভারতীয় ক্রিকেট দলে সুযোগ পাওয়া বাঙালি ক্রিকেটারদের মধ্যে ঋদ্ধিমানই নিজের একটা অবস্থান তৈরি করেছিলেন। যদিও ২০১০ সালে নাগপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অভিষিক্ত হওয়ার পর টেস্ট খেলেছেন মাত্র ৩৮টি। মূলত মহেন্দ্র সিং ধোনি টেস্ট থেকে অবসর নেওয়ার পর থেকেই সাদা পোশাকে মোটামুটি নিয়মিত হতে পেরেছিলেন তিনি। অ্যাডিলেডে ভারতীয় দলে ব্যর্থতার মিছিলটা যথেষ্ট লম্বা হলেও কোপটা যে তাঁর ওপর পড়ছে, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। অ্যাডিলেডে অবশ্য তাঁর করার তেমন কিছুই ছিল না। কোনো ক্যাচ ধরেননি, করেননি কোনো স্টাম্পিং।

কেবল অস্ট্রেলিয়ার দুই ইনিংসে দুটি রান আউটে অংশীদার ছিলেন। মূলত ব্যাট হাতে ব্যর্থতার বিষয়টিই বড় করে দেখা হচ্ছে তাঁর। প্রথম ইনিংসে ৯ আর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ রান করে ফিরেছেন তিনি। দলে ঋষভ পন্তের মতো ভালো ব্যাটসম্যান থাকতে ঋদ্ধিমানকে পরের টেস্টগুলোতে খেলানোর কোনো কারণই দেখছেন না ভারতীয় নির্বাচকেরা।

পন্তের সঙ্গে দলের জায়গা নিয়ে জোর লড়াই হবে ঋদ্ধির—এটা জানা কথাই। তবে উইকেটকিপিংয়ের ক্যারিশমায় পন্তকে অ্যাডিলেড টেস্ট পেছনে ফেলে দলে ছিলেন তিনি। মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্টে পন্তের ব্যাটিংয়ের জন্য উইকেটকিপিং নিয়ে কিছু ঝুঁকি নিতে রাজি আছে ভারত। প্রশ্নটা উঠেছে বয়স ৩৮ হয়ে যাওয়া ঋদ্ধি আবার ভারতীয় দলে ফিরতে পারবেন কি না!

উইকেটরক্ষক হিসেবে ঋদ্ধিমানের মানের কেউ নেই ভারতে।

ঋদ্ধির সঙ্গে নিশ্চিতভাবেই বাদ পড়ছেন পৃথ্বী শ। কোচ রবি শাস্ত্রী কিছুদিন আগেও যে ব্যাটসম্যানের মধ্যে শচীন টেন্ডুলকার আর বীরেন্দর শেবাগের মিশেল খুঁজে পেয়েছিলেন, সেই পৃথ্বী অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলীয় ফাস্ট বোলিংয়ের সামনে নিজের দুর্বলতাটা বড় দৃষ্টিকটুভাবেই দেখিয়ে দিয়েছেন। তাঁর মেলবোর্নে খেলার কোনো সম্ভাবনাই নাকি নেই—এমনটাই জানাচ্ছে ভারতীয় গণমাধ্যম। মায়াঙ্ক আগারওয়াল এ যাত্রায় বেঁচে যাচ্ছেন। তাঁর ওপেনিং সঙ্গী হবেন শুভমান গিল।

প্রথম সন্তান জন্মের মুহূর্তে স্ত্রীর পাশে থাকবেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। তাই কোহলির বদলি খুঁজতে হচ্ছে ভারতকে। চোটের কারণে ছিটকে গেছেন ফাস্ট বোলার মোহাম্মদ শামি। মেলবোর্নে তাই একাদশ তৈরি করতে গিয়ে রীতিমতো গলদঘর্ম হওয়ার জোগাড় ভারতীয় নির্বাচকদের। এই দুজনের জায়গায় লোকেশ রাহুল আর মোহাম্মদ সিরাজ দলে ঢুকবেন। কিছুদিন আগেই বাবা হারিয়েছেন সিরাজ। কিন্তু তিনি দেশে না ফিরে দলের সঙ্গে থেকে গিয়ে দলের প্রতি নিজের দায়িত্ববোধ ও প্রতিশ্রুতির জন্য প্রশংসিত হয়েছিলেন।

সিরাজ দলে থাকলে সেটি হবে তাঁর প্রতি টিম ম্যানেজমেন্টের উপহারই। সিরাজ ছাড়াও হাতে বিকল্প আছে ভারতের। তিনি নবদ্বীপ সাইনি। তবে প্রস্তুতি ম্যাচে সিরাজের বোলিংই মনে ধরেছে টিম ম্যানেজমেন্টের। রোহিত শর্মাকে তৃতীয় টেস্টের আগে দল পাবে না। হনুমা বিহারিকে ব্যাটিং অর্ডারে তুলে তাঁর প্রতিভার পরীক্ষা নেওয়া হবে।

দলে রদবদল করে মেলবোর্নে ত্রস্ত–বিধ্বস্ত ভারতীয় দল কেমন করে, দেখার বিষয় এখন সেটিই।