ভারতের ভয়ে আইপিএল থেকে খেলোয়াড় ফেরায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা

কোচের অনুরোধ রাখেনি প্রোটিয়া বোর্ড। ছবি : এএফপি
কোচের অনুরোধ রাখেনি প্রোটিয়া বোর্ড। ছবি : এএফপি
>

বিশ্বকাপের আগে আইপিএল থেকে মূল খেলোয়াড়েরা যেন তাড়াতাড়ি ফিরে আসেন সেটি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ ওটিস গিবসন। দলটির বিশ্বকাপ প্রস্তুতি যেন আরেকটু ভালোভাবে হয়। কিন্তু দেশটির ক্রিকেট বোর্ডের সেই ইচ্ছা ছিল না। আর এর পেছনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে বিসিসিআই।

আগামী ৩০ তারিখ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। দলগুলো তাদের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার মূল খেলোয়াড়েরা এখনো খেলছেন আইপিএলে। ফলে কোচ ওটিস গিবসন এখনো দলকে নিয়ে চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু করতে পারেননি। এমনকি আইপিএল থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়েরা যেন তাড়াতাড়ি ফিরে আসেন, এ জন্য বোর্ডকে অনুরোধও করেছিলেন গিবসন। লাভ হয়নি কোনো। ভারতের সঙ্গে অযথা ঝগড়ায় যেতে চায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ড। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে কে বিবাদে জড়াতে চায়?

২০২১-২২ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ খেলতে যাবে ভারত। আর ভারতের সঙ্গে সিরিজ আয়োজন করা মানেই কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার নিশ্চয়তা। একাধিক স্পনসর, বিভিন্ন খাতে প্রাইজমানি—ভারতের সঙ্গে যে দল সিরিজ খেলে, অর্থের ব্যাপারে তাদের কোনো চিন্তা করতে হয় না। তাই বিশ্বের যেকোনো বোর্ডই চায় ভারতের সঙ্গে সিরিজ আয়োজন করতে। দক্ষিণ আফ্রিকাও তাঁর ব্যতিক্রম নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার আবার আরও একটা ঝামেলা আছে। তারা গবেষণা করে দেখেছে, আগামী চার বছরে তারা প্রচুর লোকসানের মুখ দেখবে, যার অর্থমূল্য প্রায় ৬৫৪ মিলিয়ন রুপির মতো। ভারতের সঙ্গে সিরিজ আয়োজন করলে সে লোকসান মেটানো যাবে অনেকাংশেই। যে কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার বোর্ডপ্রধান থাবাং মরোয় ভারতের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ থেকে আগেভাগে নিজেদের খেলোয়াড় ফিরিয়ে এনে বিসিসিআইয়ের চক্ষুশূল হতে চাননি। পরে যদি ভারত খেপে গিয়ে তাদের মধ্যকার সিরিজটাই বাতিল করে দেয়? নিজেদের লোকসান তখন কীভাবে মেটাবে দক্ষিণ আফ্রিকা? এই ভয়ে আইপিএল থেকে নিজেদের বিশ্বকাপ দলের খেলোয়াড় ফেরানো তো দূর, বিসিসিআইয়ের কাছে সে প্রসঙ্গ তুলতেই যাননি মরোয়!

ফলে একের পর এক ক্ষতির শিকার হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট। আইপিএলে দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে খেলতে গিয়ে চোটে পড়েছেন দলের অন্যতম পেস ভরসা কাগিসো রাবাদা। বিশ্বকাপে পুরোপুরি সুস্থ থাকবেন কি না, এখনো নিশ্চিত নয়। একই অবস্থা ডেল স্টেইনেরও। দক্ষিণ আফ্রিকার অভিজ্ঞ এই পেসার প্রথমে আইপিএলে কোনো দল না পেলেও পরে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু তাঁকে দলে নিয়ে আসে। বেঙ্গালুরুর হয়ে খেলতে গিয়ে চোটে পড়ে স্টেইনও এখন মাঠের বাইরে। দলে থাকা বাকি দুই পেসার লুঙ্গি এনগিদি ও আনরিখ নর্তিয়ে তো আগে থেকেই চোটে পড়ে বসে আছেন। নর্তিয়ে তো বিশ্বকাপ থেকেই বাদ পড়ে গেছেন। তাঁর জায়গায় দলে নেওয়া হয়েছেন অলরাউন্ডার ক্রিস মরিসকে।

আইপিএলে এখনো খেলছেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসি, উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি কক, স্পিনার ইমরান তাহির ও ক্রিস মরিস। মরিসের দল দিল্লি ক্যাপিটালসকে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে ডু প্লেসি ও তাহিরের চেন্নাই সুপার কিংস। ফাইনালে তারা মুখোমুখি হবে ডি ককের মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের সঙ্গে।

প্রাক বিশ্বকাপ ক্যাম্পে দক্ষিণ আফ্রিকা দল প্রস্তুতি শুরু করবে আগামীকাল থেকে। আইপিএলের ফাইনালে খেলার জন্য যে ক্যাম্পে থাকতে পারবেন না ডি কক, ডু প্লেসি ও তাহির। ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১৯ খেলতে প্রোটিয়ারা রওনা দেবে ১৯ মে।