আহমেদাবাদে দিনরাতের টেস্টে সাকল্যে খেলা হয়েছে ১২ ঘণ্টা। দিনের হিসাবে দুই দিনের কম। ওভারের হিসাবে যেটি মাত্র ১৪০.২। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, আহমেদাবাদ টেস্ট শেষ হয়েছে ৮৪২ বলের মধ্যেই।
এটি ভারতের খেলা সবচেয়ে ক্ষণস্থায়ী টেস্ট। ক্রিকেট ইতিহাসে ক্ষণস্থায়ী টেস্টের তালিকায় এটি থাকছে সাত নম্বরে। এর চেয়ে ক্ষণস্থায়ী টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাস দেখেছে আজ থেকে ৮৬ বছর আগে!
এমন একটা টেস্টে ভারত জিতেছে। স্বাভাবিকভাবেই ভারতীয় ক্রিকেটবোদ্ধারা খুশি। যুবরাজ সিংও খুশি ভারতীয় স্পিনারদের এমন পারফরম্যান্স দেখে। তবে তাঁর খুশিটা পুরোপুরি ফুল হয়ে ফুটতে পারছে না যেন। তাঁর খুশির মধ্যে কিছুটা ‘কিন্তু’ও রয়ে যাচ্ছে, রয়ে যাচ্ছে অস্বস্তি। তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, আহমেদাবাদের অত্যাধুনিক নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম, যেটি এ মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়াম, সেখানে যে টেস্ট ম্যাচটি হলো, সেটি টেস্ট ক্রিকেটের জন্য কতটা ভালো বিজ্ঞাপন।
টুইটারে তিনি এই মন্তব্যটি করেছেন ম্যাচ শেষ হয়ে যাওয়ার পর, ‘দুই দিনে খেলা শেষ হয়ে গেল! জানি না, এটি টেস্ট ক্রিকেটের জন্য ভালো বিজ্ঞাপন হিসেবে থেকে গেল কি না!’
যুবরাজ নিজে বাঁ হাতি স্পিনার ছিলেন। বেশ ভালোই ছিলেন। ছিলেন যথেষ্ট কার্যকরী। তাঁর সময়কার অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার মানা হতো তাঁকে। কিন্তু তাঁর বোলার-সত্তাটা ক্রিকেট-ক্যারিয়ারের বড় অংশজুড়েই ছিল অনিল কুম্বলে কিংবা হরভজন সিংদের আড়ালে। আহমেদাবাদে অক্ষর প্যাটেল কিংবা রবিচন্দ্রন অশ্বিনরা কিংবা ইংল্যান্ডের জ্যাক লিচ বা জো রুট হাত ঘুরিয়েই তুলে নিয়েছেন উইকেট। এখানকার ‘ঘূর্ণি-কাণ্ড’ যুবরাজের মনে কিছুটা হলেও আক্ষেপ সৃষ্টি করেছে। নাহ্, নিজের জন্য নয়, তাঁর আক্ষেপটা ওই কুম্বলে-হরভজনদের জন্যই, ‘যে ধরনের উইকেটে আহমেদবাদে খেলা হলো, সে ধরনের উইকেটে যদি অনিল কুম্বলে কিংবা হরভজন সিংরা বোলিং করতে পারতেন, তাহলে টেস্ট ক্রিকেটে তাঁদের কত উইকেট হতো? ১ হাজার আর ৮০০?’
তবে তিনি অক্ষর বোলিং-কৃতিত্বকে খাটো করতে চাননি। টুইটারে এই গুজরাটি বাঁ হাতি স্পিনারকে অভিনন্দিতও করেছেন। অভিনন্দন জানিয়েছেন অশ্বিনকেও, ‘যা-ই হোক, অভিনন্দন অক্ষর। কী দারুণ স্পেল! অভিনন্দন জানাই অশ্বিনকেও।’
কেবল যুবরাজই নন, আহমেদাবাদের উইকেট নিয়ে এখন চলছে তুমুল সমালোচনা। ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন টুইট করে মেরেছেন খোঁচা, ‘আকর্ষণীয় ক্রিকেটই দেখলাম। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটের জন্য এটি খুবই বাজে একটা উইকেট। দ্বিতীয় দিন তো ক্রিকেট খেলাটা রীতিমতো লটারিতে পরিণত হলো!’
তবে উইকেটের সমালোচনা নয়, আহমেদাবাদে দাঁড়াতে না পারার জন্য ব্যাটসম্যানদের সমালোচনা ঝরেছে ভারতীয় ক্রিকেট কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কারের কণ্ঠে, ‘এই উইকেটে বলের লাইনে পা নিয়ে খেলতে হয়। ব্যাটসম্যানরা সেটিই করতে পারেনি। তাঁরা যদি বলের কাছে পা নিয়ে খেলত তাহলে আম্পায়াররা এলবিডব্লু দিতে দ্বিধায় ভুগত।’
গাভাস্কারের সঙ্গে একমত ইংল্যান্ডের সাবেক অফ স্পিনার গ্রায়েম সোয়ানও। তাঁর মতে, স্পিনের বিপক্ষে এই টেস্টে কোনো ব্যাটসম্যানই কার্যকর ব্যাটিং দক্ষতা দেখাতে পারেনি। মাইকেল ক্লার্ক বা মাইক হাসির মতো ক্ষিপ্র ফুটওয়ার্ক এখন ক্রিকেটে বিরল। সামনের পায়ে দক্ষতার সঙ্গে খেললেই স্পিনকে নির্বিষ করে দেওয়া যায়।’
যে উইকেট নিয়ে এত সমালোচনা, সেটি নিয়ে খুব বিচলিত নন ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি। তিনিও আহমেদবাদে দুই দলের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতাই দেখছেন, ‘পিচ বেশ ভালোই ছিল। প্রথম দিন তো রীতিমতো ব্যাটে আসছিল। দুই একটা বল হয়তো একটি এদিক–ওদিক হয়েছে। কিন্তু দুই দলের ব্যাটসম্যানরাই আসলে ভালো ব্যাটিং করতে পারেনি। আমাদের বোলাররা দারুণ বোলিং করেছে।’
দ্বিতীয় ইনিংসে দুই ওপেনার শুবমান গিল আর রোহিত শর্মার ব্যাটে চড়েই দশ উইকেটের জয় পেয়েছে ভারত, তাই হয়তো কোহলির মুখে খই ফুটেছিল পিচ নিয়ে!
এই টেস্টে দুই দিনে উইকেট পড়েছে ৩০টি। এর ২৮টিই নিয়েছেন স্পিনাররা!