অস্ট্রেলিয়ার মাটি ভারতের জন্য এক অমীমাংসিত রহস্য হয়েই ছিল এত দিন। ভারতকে নিজেদের মাটিতে থামানোর ক্ষমতা তো এখন কারওরই নেই। কিন্তু বিদেশের মাটিতে খেই হারিয়ে ফেলা তো তাদের পুরোনো অভ্যাস। অস্ট্রেলিয়ার মাটি থেকে সিরিজ জয় করে নিয়ে যাওয়া সব দলের জন্যই কঠিন কাজ। বৃষ্টিতে ম্যাচ ভেসে যাওয়া, জয়, হার ও ড্র—সব অভিজ্ঞতা নিয়েই অস্ট্রেলিয়া সফর শেষ করল ভারত। শুরুটা হার দিয়ে হলেও শেষটা হলো মহেন্দ্র সিং ধোনির হাত দিয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার পর দ্বিতীয় দল হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট ও ওয়ানডে দুই সিরিজ জয় করে এনেছে ভারত।
স্মিথ-ওয়ার্নারবিহীন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভালো করবে ভারত এটা জানা ছিল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে ছেলেখেলা করবে ভারত, তা ভাবেনি কেউই। যদিও টেস্ট সিরিজে দ্বিতীয় ম্যাচেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। তৃতীয় টেস্টে জয় আর চতুর্থ টেস্ট ড্র করে টেস্ট সিরিজ নিজেদের করে নেয় ভারত।
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পঞ্চম দল হিসেবে টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল ভারত। প্রথম এশিয়ান দল হিসেবেও। অ্যাশেজ বাদে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড আর দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজ জিতেছে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। অ্যাশেজ বাদে ঘরে সপ্তম টেস্ট সিরিজ হার অস্ট্রেলিয়ার। নিজেদের মাটিতে শেষবারের মতো টেস্ট সিরিজ হেরেছিল ২০১৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। তবে ভারতের সামনে সুযোগ ছিল টেস্ট ও ওয়ানডে দুই সিরিজই নিজেদের করে নেওয়ার। ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল এটাই। ওয়ানডেতে মাত্র পাঁচবার নিজেদের মাটিতে সিরিজ হারতে হয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে।
প্রথম ম্যাচ হেরেই দ্বিতীয় দল হিসেবে রেকর্ড গড়ার সুযোগটা প্রায় হাতছাড়া করে ফেলেছিল ভারত। কিন্তু তা হতে দেননি বলতে গেলে ধোনি একাই। দ্বিতীয় ম্যাচে ২৯৮ রান তাড়া করতে নেমে ৫৫ রান, আর শেষ ম্যাচে ২৩০ রান তাড়া করতে নেমে ৮০ রান। নিজেদের স্বপ্নকে সত্যি করে এনেছে ভারত। অস্ট্রেলিয়ার মাটি থেকে এর আগে মাত্র একটি দলেরই রেকর্ড ছিল ওয়ানডে আর টেস্ট সিরিজ জিতে বাড়ি ফেরার। ২০০৮-০৯ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকা করে দেখিয়েছিল। সে রেকর্ডে এবার ভাগ বসাল ভারত। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজের পাশাপাশি ওয়ানডে সিরিজে সাফল্য পেয়েছে বটে, তবে সে সিরিজগুলো ছিল ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজ।
এর আগে নিজেদের মাটিতে মাত্র পাঁচটি দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজ হেরেছে অস্ট্রেলিয়া। নিজেদের মাটিতে প্রথম সিরিজ পরাজয় ২০০২ সালে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে হারতে হয় অস্ট্রেলিয়াকে। প্রথম ম্যাচ জিতলেও শেষের দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ জিতে নেয় ওয়াকার ইউনিসের পাকিস্তান। এরপর নিজেদের মাটিতে পরাজয় দেখতে অপেক্ষা করতে হয় ২০০৮ সাল পর্যন্ত। সেবার ইয়োহান বোথার দক্ষিণ আফ্রিকা ওয়ানডে সিরিজে একটুও পাত্তা দেয়নি রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়াকে। টেস্ট সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হারার পর, ওয়ানডে সিরিজেও ৪-১ ব্যবধানে হারতে হয় অস্ট্রেলিয়াকে। সেবারই প্রথম একসঙ্গে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ হারে অস্ট্রেলিয়া। এরপর ২০১০ সালে শ্রীলঙ্কা ও ২০১৮ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ হেরেছে অস্ট্রেলিয়া। ২০১৮ সালের শেষভাগেই দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে আবারও ওয়ানডে সিরিজ হেরেছে অস্ট্রেলিয়া।