>পার্থ টেস্টে তৃতীয় দিনে সেঞ্চুরি তুলে নেন বিরাট কোহলি। তাঁর আউট নিয়ে আলোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে
২৫৬ বল খেলা হয়ে গেছে। উঠে এসেছে ঝকঝকে সেঞ্চুরিও। বিরাট কোহলি তখন ভীষণ আত্মবিশ্বাসী। প্যাট কামিন্সের করা অফ স্টাম্পের বাইরে ফুল লেংথ ডেলিভারিটি চাইলে ছাড়তে পারতেন। টগবগে আত্মবিশ্বাসের জন্যই হয়তো ড্রাইভ করেছিলেন। টাইমিংয়ে একটু গড়বড় হওয়ায় বল তাঁর ব্যাটের কানা ছুঁয়ে চলে যায় দ্বিতীয় স্লিপ অঞ্চলে। নিচু হয়ে আসা বলটি ডান দিকে ডাইভ দিয়ে লুফে নেন হ্যান্ডসকম্ব। আপাতদৃষ্টিতে সেরকমই মনে হয়েছে। কিন্তু কোহলির মনে সন্দেহ ছিল। সহসাই তিনি মাঠ ছাড়েননি।
পার্থ টেস্ট যাঁরা দেখছেন তাঁদের মনেও নিশ্চয়ই সন্দেহ দানা বেঁধেছে, ওটা কি আউট? ক্যাচটা নেওয়ার পরই হ্যান্ডসকম্ব তর্জনী তুলে বুঝিয়ে দেন আউট। তাঁর সতীর্থদের উদ্যাপনেও ছিল এর স্বীকৃতি। এমনিতে সিদ্ধান্তটা আউট হলেও টিভি আম্পায়ারের দ্বারস্থ হন মাঠের দুই আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা ও ক্রিস গ্যাফানে। ভিডিও রিপ্লেতে তারা দেখতে চেয়েছেন, হ্যান্ডসকম্বের আঙুল বলের নিচে থাকলেও সেটি হাফ ভলি ক্যাচ ছিল কি না, সে ব্যাপারে পরিষ্কার করে কিছু বোঝা যায়নি। টিভি আম্পায়ার নাইজেল লং এ জন্যই মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত পাল্টাতে পারেননি। কারণ, ক্যাচ যে হয়নি এ ব্যাপারে তাঁর পরিষ্কার প্রমাণের দরকার ছিল।
ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করেছেন ভারতের ক্রিকেট বিশ্লেষক হর্শা ভোগলে। তাঁর টুইট, ‘জানি এই আউট নিয়ে অনেক বিতর্ক হবে। তবে এটা মনে রাখা জরুরি, আইন বলছে মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত পাল্টাতে অবশ্যই অকাট্য প্রমাণ লাগবে। কোহলি হয়তো ভেবেছেন, বাউন্স করেছে তবে ঐতিহাসিকভাবে এগুলো আউট দেওয়া হয় (বেশি)।’ ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভনের কাছেও সিদ্ধান্তটি সঠিক। ভন টুইট করেন, ‘কোহলির ক্যাচটা দুর্দান্ত। হাতের আঙুলের ওপর বাউন্স করেছে, আউট, ভালো সিদ্ধান্ত।’
আউট হওয়ার আগে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করেছেন কোহলি। ২৫৭ বলে ১২৩ রানের ঝকঝকে সেঞ্চুরিতে প্রায় একাই টেনেছেন ভারতের ইনিংসকে। কাল টেস্টের দ্বিতীয় দিন থেকে আজ তৃতীয় দিন আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে সবাইকে মুগ্ধ করে রেখেছিলেন কোহলি। ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, ধৈর্য, মনঃসংযোগ আর উইকেট বিচারে এটি কোহলির ক্যারিয়ারে অন্যতম সেরা সেঞ্চুরি। যা দেখে ভারতের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলির টুইট, ‘পার্থে কোহলির মাস্টারপিস। আমার দেখা দুজন সর্বকালের সেরা...টেন্ডুলকার ও কোহলি (ব্র্যাডম্যান ও সোবার্সকে নিজের চোখে খেলতে দেখিনি)।
কোহলি তখন আউট না হলে ভারতের প্রথম ইনিংস আরও বড় হতে পারত। লাঞ্চের আগের ওভারে (৯২.৬ ওভার) ভারতের অধিনায়ক আউট হওয়ার পর বাকিরা টিকেছেন মাত্র ১২.৫ ওভার। শেষ ৫ উইকেট পড়েছে ৩২ রানের ব্যবধানে। এতে ২৮৩ রানেই প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে যায় ভারত। অথচ কোহলি উইকেটে থাকতে মনে হয়েছে ভারতের লিড নেওয়া স্রেফ সময়ের ব্যাপার। ভারতের বিপক্ষে টেস্টে সপ্তমবারের মতো এক ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে নাথান লায়ন তা হতে দেননি। টেস্টে তাঁর আগে শুধু মুত্তিয়া মুরালিধরনই ভারতের বিপক্ষে সাতবার ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার নজির গড়েছেন।
৪৩ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমেছে অস্ট্রেলিয়া। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর বিনা উইকেটে ১১।
কোহলির সেঞ্চুরি ও আউট হওয়ার ভিডিও লিংক: