অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ডের জন্য ব্যস্ত এক দিন গেল আজ। করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময়টায় সংকট ঠিকভাবে সামাল দিতে না পারার ব্যর্থতায় নিজের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী কেভিন রবার্টস। এ নিয়ে কথা বলতে এসে কিনা বোর্ড চেয়ারম্যান আর্ল এডিংসকে কথা বলতে হলো এক ভক্তকে নিয়েও!
বোর্ডের প্রধান নির্বাহীর চাকরি হারানো, বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তার মাঝেও এডিংসের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল রব মুডির ব্যাপারে। এই ক্রিকেট ভক্তের সঙ্গে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার আচরণ যুক্তিসংগত কি না, করা হয় সে প্রশ্ন। বোর্ড চেয়ারম্যান স্বীকার করে নিয়েছেন মুডির কাজের ভক্ত তিনি নিজেই এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন, 'আমরা অবশ্যই ব্যাপারটা সামনাসামনি কথা বলে সমাধান করব, কারণ আমার মনে হয় এটা দারুণ একটা কাজ। তবে কাজটা সঠিক ও আইনি পথে হতে হবে।'
কী এমন বিষয়, যে প্রসঙ্গে আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও প্রশ্নের উত্তর দিতে হলো ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধানকে? প্রথমেই রব মুডি সম্পর্কে জানা যাক। টুইটারে 'রোবেলিনডা দুই' নামে একটি আইডি ব্যবহার করেন এই ক্রিকেট ভক্ত। তাঁর অনুসারীর সংখ্যা মন্দ নয়। ৩৭ হাজার ক্রিকেটভক্ত রব মুডিকে অনুসরণ করেন। কারণ? প্রায় অসম্ভব একটি কাজ করেন মুডি। ক্রিকেটের ভুলে যেতে বসা এবং প্রায় দুষ্প্রাপ্য সব ভিডিও হাজির করেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তো বটেই, এমনকি অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় ক্রিকেটের দারুণ সব ভিডিও–ও টুইটারে দেন। এই তো কদিন আগেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশিবার রান আউটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন স্টিভ ওয়াহ, এমন খবরের পর ১০৪টি আউটেরই মুহূর্ত হাজির করে একটি ভিডিও বানিয়েছিলেন রব মুডি। যা দেখে স্বয়ং শেন ওয়ার্নও অবাক হয়ে গিয়েছিলেন।
সেই মুডিকে কপিরাইটের কথা তুলে টুইটার ও ইউটিউব থেকে সব ভিডিও সরিয়ে নিতে বলেছিল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। মুডির অধিকাংশ ভিডিওই ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার মালিকান্ধীন ভিডিও থেকে নেওয়া। তাই আইন তাদের পক্ষেই ছিল। তবে মুডিও কিন্তু বরাবরই এসব ভিডিও তাঁর নিজের নয় বলে স্বীকার করে এসেছেন। তিনি শুধু সবার পক্ষে যা সম্ভব নয়, সেটা করতেন। খুঁজে খুঁজে দুষ্প্রাপ্য ভিডিও বের করে সেগুলো টুইটার ও ইউটিউবে মানুষের কাছে পৌছে দিতেন। এসব ভিডিও না নামানো হলে তার টুইটার অ্যাকাউন্ট বন্ধের হুমকিও পাঠিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় হতাশ মুডি টুইটে লিখেছেন, 'গত ১১ বছরে টুইটারে আমি যত ক্রিকেট ভিডিও আপলোড করেছি সব মুছে ফেলতে বলা হয়েছে। এতে না হেসে উপায় নেই। এর চেয়ে আমার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন। কারণ ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি ভিডিও তুলেছি। সেগুলো খুঁজে খুঁজে মোছা সম্ভব না আমার পক্ষে।'
ক্রিকেট দুনিয়ায় সাড়া পড়তে সময় লাগেনি। ডিন জোন্স টুইট করেছেন, 'শুনে খুবই খারাপ লাগল। কী হচ্ছে? এরচেয়ে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া তোমাকে চাকরি দিয়ে ভিডিও তোলা চালিয়ে নিলেই পারে। তাতে সবার জন্যই ভালো হয়।' সবাই এতটা নরম কণ্ঠে প্রতিবাদ করেননি। বিখ্যাত সঞ্চালক পিয়ার্স মরগান বলেছেন, 'এটা একটা ফালতু কাজ হলো। এই কঠিন সময়ে ও প্রায় একাই ক্রিকেট ভক্তদের আনন্দ দিচ্ছিল। ক্রিকেট ভক্তরা জেগে ওঠ, আমরা এটা হতে দেব না।' নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটার জিমি নিশাম তো এই সুযোগে সব ক্রিকেট বোর্ডেরই সমালোচনা করেছেন। তাঁর দাবী, এভাবেই বোর্ডগুলো মানুষের ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ হারানোয় ভূমিকা রাখছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন কড়া প্রতিক্রিয়া দেখে টনক নড়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার। এমনিতেই করোনা সংকটকাল ঠিকভাবে সামাল দিতে না পারায় প্রচণ্ড সমালচনা চলছে। এর মধ্যে বাড়তি চাপ কে নিতে চায়? ফলে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার আনুষ্ঠানিক টুইটার পেজ থেকে টুইট করে জানানো হয়, এটা আসলে ভুল বোঝাবুঝি। বলা হয়েছে, 'কপিরাইটের যে দাবী জানানো হয়েছিল, সেগুলো তুলে নেওয়া হয়েছে। কারণ ভুলে সে দাবী করা হয়েছিল। ভিডিওগুলো (মুডির অ্যাকাউন্টের) খুব দ্রুতই আবার দেখা যাবে। রবের ওল্ড গোল্ড বন্ধের কোনো পরিকল্পনা নেই আমাদের এবং এ ব্যাপারে পরবর্তী ধাপগুলোও অনুসরণ করা হবে।'
সমস্যার সমাধান হওয়ার পর মুডি অবশ্য স্বীকার করছেন, তাঁকে নিয়ে এত শোরগোল পড়ায় কিছুটা লজ্জাই পাচ্ছেন এখন। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা তাঁকে এ ব্যাপারে সাহায্য করেছেন, সবাইকে ধন্যবাদ দিয়েছেন।