মালিক দেখালেন তিনি পাকিস্তান দলের কত বড় সম্পদ
মালিক দেখালেন তিনি পাকিস্তান দলের কত বড় সম্পদ

‘বড় ভাই’ শোয়েব মালিকের দ্রুততম ফিফটি দেখল বিশ্বকাপ

৩৯ বছর বয়সে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে এসেছেন মালিক। কিন্তু ফর্মে যে এতটুকু মরিচা ধরেনি, সেটিই বুঝিয়ে দিলেন আজ। অধিনায়ক বাবর আজম কি সাধে বলেছেন, শোয়েব মালিকের মতো একজন ব্যাটসম্যান যেকোনো দলের জন্য সম্পদ।

শোয়েব মালিকের ইনিংসটা তখন মাত্র শেষ হয়েছে। তাঁর ব্যাটের আগুনে পুড়ে ততক্ষণে খাক স্কটল্যান্ড। ক্রিস গ্রিভসের শেষ ওভারে পাকিস্তান তুলে নিল ২৬ রান, যার ২৫-ই মালিকের। মেরেছেন তিনটি ছক্কা, একটি চার। টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের পক্ষে দ্রুততম ফিফটি তিনি কুড়িয়ে নিয়েছেন ১৮ বল খেলে। এবারের বিশ্বকাপেও দ্রুততম ফিফটিতে বসেছেন ভারতের লোকেশ রাহুলের পাশে। ভারতের জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার ও ক্রিকেট বিশ্লেষক হার্শা ভোগলে ঠিক সেই সময়ই করলেন টুইটটা, ‘দেখুন, প্রতিটি পরিবারেরই একজন বড় ভাইয়ের দরকার হয়।’

৩৯ বছর বয়সে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে এসেছেন মালিক। কিন্তু ফর্মে যে এতটুকু মরিচা ধরেনি, সেটিই বুঝিয়ে দিলেন আজ। অধিনায়ক বাবর আজম কি সাধে বলেছেন, শোয়েব মালিকের মতো একজন ব্যাটসম্যান যেকোনো দলের জন্য সম্পদ।

ছয়টি ছক্কা মেরেছেন মালিক

মালিক কত বড় সম্পদ, সেটি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেই কিছুটা বুঝেছিল পাকিস্তান। তাঁর ঠান্ডা মাথার, পথ দেখানো ব্যাটিংয়েই সেদিন দল খুঁজে পেয়েছিল জয়ের রাস্তা। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সেদিন আসিফ আলীর দুটি ছক্কা বড় অবদান রেখেছিল ঠিকই, কিন্তু অন্য প্রান্তে মালিক দাঁড়িয়ে ভরসা জুগিয়েছিলেন তাঁকে। আজ পাকিস্তান বুঝল মালিকের আসল গুরুত্ব। প্রয়োজনীয় সময়ে কী অসাধারণ ব্যাটিং। ছক্কা-চারে দেখিয়ে দিলেন, তিনি দলের কত বড় সম্পদ।

পাকিস্তানের পক্ষে দ্রুততম ফিফটি এটি। ১৮ বলে ৫৪, স্ট্রাইক রেটটা দেখুন—৩০০! পাওয়া হিটিংয়ের অনন্য প্রদর্শনী। তিনি যখন ব্যাটিংয়ে নামলেন, তখন ১৪.৪ ওভারে পাকিস্তানের সংগ্রহ ১১২। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে পাকিস্তানের মতো দলের যে লক্ষ্য থাকে, রানের পাহাড়ে ওঠা—সেটি কতটা করা সম্ভব, তা নিয়েই তখন সন্দেহ। একটু পর ফিরে গেলেন মোহাম্মদ হাফিজ। আবারও আসিফকে সঙ্গী হিসেবে পেলেন মালিক।

আজ মালিকের স্ট্রাইকরেট ছিল ৩০০

সবাই তখন আসিফের ব্যাটে চার-ছক্কার ফুলঝুরির অপেক্ষায়। কিন্তু এবার মালিক একটু অন্যভাবেই দেখলেন পরিস্থিতিটা। নিজেই মারা শুরু করলেন। ২২ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতাকে এক জায়গায় জড়ো করে তাঁর অন্তত স্কটিশ বোলারদের ওপর রাজত্ব করতে ভুল হয়নি।

পাকিস্তানের ইনিংসে মোট ১১টি ছক্কা হয়েছে। এর ছয়টিই মালিকের। মার্ক ওয়াটকে এক্সট্রা কাভার দিয়ে মেরে ছক্কা-উৎসব শুরু করেছিলেন, সেটি শেষ করেছেন ইনিংসের শেষ বলে ক্রিস গ্রিভসকে ডিপ মিড উইকেটের ওপর দিয়ে মেরে।

খড়্গহস্ত সবচেয়ে বেশি হয়েছেন গ্রিভসের ওপরই। পঞ্চম বলে গ্রিভসের গুগলি পড়তে মোটেও সময় নেননি, লং অনের ওপর দিয়ে মেরে দেন ছক্কা। এর আগে তৃতীয় বলে মেরেছিলেন মিড উইকেটের ওপর দিয়ে। পেস বোলার শাফিয়ান শরিফকে মেরেছেন বাকি দুটি। দুটিই লং অন দিয়ে।

১৮ বলে তাঁর এই ফিফটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে পঞ্চম দ্রুততম। এ তালিকায় সবচেয়ে এগিয়ে যুবরাজ সিং। ২০০৭ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই স্টুয়ার্ট ব্রডকে এক ওভারে ছয় ছক্কা মারার ম্যাচে ১২ বলে ফিফটি করেছিলেন তিনি। এর পরের দুটি দ্রুততম ফিফটি বাংলাদেশের মাটিতে—২০১৪ বিশ্বকাপে সিলেটে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে নেদারল্যান্ডসের স্টিফেন মাইবার্গ ১৭ বলে করেছিলেন ফিফটি। সেবারই পাকিস্তানের বিপক্ষে ঢাকার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ব্যাট থেকে এসেছিল ১৭ বলে ফিফটি।

এবার লোকেশ রাহুল স্কটল্যান্ডের বিপক্ষেই গত শুক্রবার ফিফটি পেয়েছেন ১৮ বলে। আজ মালিক কীর্তিগাথায় নাম তুললেন রাজকীয় ভঙ্গিতেই।